চলছে দু’টি মহামারী, করোনা ও দমনপীড়ন: আলী রীয়াজ

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের ভাবনায় নিজ স্বার্থ ও দল, জনগণ নয়: মাইলাম

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের ভাবনায় শুধু নিজ স্বার্থ আর দল। তারা কখনো জনগণ নিয়ে ভাবেনা বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার ও রাইট টু ফ্রিডম’র প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিকদের কাছে রাজনীতি একটা ঠুনকো বিষয়। কেউই জাতীয় স্বার্থ নিয়ে ভাবেনা। ক্ষমতাসীনরা কেবল নিজ এবং দলের স্বার্থ চিন্তা করে, জনগণের নয়। আমি লক্ষ্য করি তারা রাজনীতিকে পুঁজি করে শূন্য দিয়ে খেলতে চায়... 'জিরো সাম গেইম'।

আর খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর এবং আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো ড. আলী রীয়াজ মনে করেন, বাংলাদেশে করোনার প্রকোপের সঙ্গে প্যানডামিক অব পারসিকিউশন চলছে।

ড. আলী রীয়াজ বলেন, বাংলাদেশ একসঙ্গে দুই মহামারি মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে একটা করোনাভাইরাস মহামারি, অপরটা হলো দমন-নিপীড়ন করে শায়েস্তা করা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক বিগত ২ বছরে পাঁচ ধাপ অবনতি ঘটেছে। মহামারির কারণে এমনটা হচ্ছে নতুন করে তা কিন্তু নয়। বরং মহামারি দমন করার আরেকটা উপলক্ষ এনে দিয়েছে সরকারকে।

করোনাভাইরাস মহামারি সংকটে বাংলাদেশসহ চলমান বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে ওয়াশিংটন ভিত্তিক রাইট গ্রুপ- রাইট টু ফ্রিডম’র এক ভার্চুয়াল আলোচনায় এমন অভিমত তুলে ধরেন এই দুই বিশেষজ্ঞ আলোচক।

প্রাণবন্ত এই আলোচনার সঞ্চালনায় ছিলেন জাস্ট নিউজ সম্পাদক ও রাইট টু ফ্রিডম’র নির্বাহী পরিচালক মুশফিকুল ফজল আনসারী।

জাস্ট নিউজ পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারের ভাবানুবাদ তুলে ধরা হলো-

মুশফিক: করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ে আমাদের আজকের এই আলোচনা। ব্যক্তি জীবন, অর্থনৈতিক পরিমন্ডল এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মহামারির প্রভাব নিয়ে আলাপ করতেই এ আয়োজন। আমাদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের উইলসন সেন্টারের সিনিয়র স্কলার ও রাইট টু ফ্রিডম’র প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রদূত উইলিয়াম বি মাইলাম এবং খ্যাতনামা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও লেখক ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ।

কেমন আছেন রাষ্ট্রদূত মাইলাম?

মাইলাম: বেশ ভালোই আছি। মুশফিক, আপনাকে ধন্যবাদ। যথারীতি আর সবার মতো সামাজিক দূরত্ব নীতি মেনে চলছি। খুব কম বের হই। প্রতিদিন একবার করে হাঁটতে বের হই, আজ পারিনি বৃষ্টি বাগড়া বাধালো বলে। ভালোই আছি।

মুশফিক: আপনি এখনো হাইড্রক্সি ক্লুরোকুইন নেননি তাহলে? (কৌতুক করে)

মাইলাম: না। আমি এ জিনিসটাতে শঙ্কিত। এটা নেবার কোনো চিন্তা মাথায় নেই। যখন ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন বোধ হয় তখন ডাক্তারের পরামর্শ নেই। এ প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।

মুশফিক: ড. আলী রীয়াজ আপনি কেমন আছেন?

ড. রীয়াজ: ভালো আছি। যতোটা ভালো থাকা যায় সেটাই চেষ্টা করছি। পারিপার্শ্বিকতার কারণে ঘরেই কাটছে সময়। ইলিনয়ে বেশ ক'দিন থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। বাইরে হাঁটাহাঁটিকরা যাচ্ছেনা। কার্যত ঘরে সময় কাটাচ্ছি প্রায় ৩ মাস হবে। শুধু মাঝে মধ্যে বের হতে হয় ঘরের নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনা-কাটার জন্য। তবে ডেলিভারির সার্ভিস সুবিধাও আছে বৈকি। অন্যদিকে যদি বলি- ভালোই সময় কাটছে।

মুশফিক: শুরু করছি ড. রীয়াজকে দিয়েই। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের বাস যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত সংখ্যার হিসেবে এখানে ৩০ শতাংশেরও বেশী লোক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত। দেশটিতে এখন মৃতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ছুঁই ছুঁই। এ বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ কী, কেন এমনটা ঘটছে যুক্তরাষ্ট্রে?

ড. রীয়াজ: এটা প্রায় স্পষ্টই যে- নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে এমন একটা পরিস্থিতিতে পরতে হয়েছে। বিজ্ঞানীদের সব সতর্কবার্তাকে অবজ্ঞা করেছে ট্রাম্প নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। গুরুত্বপূর্ণ কথা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিজ্ঞানীদের কথা শোনেননি। একদম অবজ্ঞা করা হয়েছে বিজ্ঞানকে। কোনো ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়নি পূর্ব থেকে। অন্যভাবে বললে, করেনা ভাইরাসের সংকট মোকাবিলায় শুরুতেই যখন একটি অংশকে সমর্থন এবং সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসার দরকার ছিলো তা হয়নি। এটাই হলো ভালো নেতৃত্বের সংকট। বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের ক্ষেত্রেও আমি এমন ধরনের ব্যর্থতা দেখেছি। যেমন নিউইয়র্কে যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে লকডাউন জারি করা হয়, সেটা দেরি করেই হয়েছে। দুই সপ্তাহ পূর্বে সেটা করা যেতো। এটা হলে হয়তো ২০,০০০ মানুষকে বাঁচানো যেতো বা ক্ষতির মাত্রাটা আরো কমানো যেতো। আমার প্রাথমিক পর্যবেক্ষণহলো- নেতৃত্বের ঘাটতি এবং প্রয়োজনীয় যোগানের ক্ষেত্রে স্বল্পতা। সবচাইতে বড় কথা হচ্ছে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যে ধরণের সমন্বয়ের প্রয়োজন ছিলো, সেধরণের কোনো সমন্বয় দেখাতে পারেনি প্রশাসন।

মুশফিক: রাষ্ট্রদূত মাইলাম। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে সবচাইতে বেশী সংখ্যক করোনা আক্রান্তের বিষয়টি সম্মানের স্মারক। আপনি কী এ বক্তব্যে সঙ্গে একমত? কিংবা মনে করেন বিষয়টি সম্মানের?

মাইলাম: ব্যাজ অব অনার! এমনটা বলেছেন! এটাতে আমি ভালো কিছু খুঁজে পাইনি। বিষয়টিতে প্রেসিডেন্টের অবস্থানটা কোন জায়গায়, সেটা নিয়ে মুশফিক আপনার সঙ্গে পূর্বে কথা বলেছি। বাস্তবতা হলো পরিস্থিতি এর চেয়ে খারাপ। এটা ব্যাজ অব অনার নয়। প্রকৃতপক্ষে 'ব্যাজ অব ডিজঅনার'। এ নিয়ে আমরা পূর্বে কথা বলেছি, ট্রাম্প প্রশাসন এই করোনা ভাইরাস নিয়ে শুরুর প্রথম ৯০ দিনে কোনো ধরনের আন্তরিকতার পরিচয় দেখাতে পারেনি। আরেকটু হিসেব করে বললে জানুয়ারি থেকে মধ্য মার্চ পর্যন্ত সময়টুকু। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা বলছে- সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে শুরুর দিকে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মার্চের শুরুর দিকে আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬,০০০ বা এর কিছু কম-বেশি ছিলো। শুরুর দুই সপ্তাহে এ সংক্রমণটা ছিলো ৪,০০০ বা এর কিছু কম-বেশি। সংক্রমণ শুরু থেকে দীর্ঘ একটা সময় পর্যন্ত আমরা সামাজিক দূরত্ব নিয়ম কার্যকর করার জন্য কিছুই করিনি। কিন্তু তিনি (ট্রাম্প) জনসম্মুখে ভাষণ দিয়ে বলে বেড়িয়েছেন ভাইরাসটি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বড় কোনো হুমকি নয়। ব্যাপক হারে অপ্রয়োজনীয় যে মৃত্যুর সংখ্যা,তার জন্য প্রেসিডেন্ট দায়ী।

মুশফিক: প্রেসিডেন্ট তাঁর বক্তব্য বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় সবচাইতে বেশী করোনাভাইরাসের টেস্ট হচ্ছে। সেজন্য বেশী আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। এ কারণেই এটা দেশের জন্য ‘সম্মানের স্মারক’।

মাইলাম: আসলেই এমনটা বলেছেন? তাহলে উনি মিথ্যা বলেছেন একরকম। জানিনা আমরা অন্য দেশের তুলনায় টেস্ট বেশি না কম করছি। তবে দেশের জনসংখ্যার তুলনায় খুব বেশি মানুষ টেস্ট করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এ সংখ্যাটা ৪-৫% হবে বলে আমার ধারণা। এখন যে পরিমাণে টেস্ট করা হচ্ছে তার যদি কৃতিত্ব দিতে হয় তাহলে সেটা অঙ্গরাজ্যের গর্ভনরদের দেয়া যায়, প্রেসিডেন্টকে নয়।

মুশফিক: এবার আসি প্রফেসর ড. আলী রীয়াজের কাছে। তিনি আটলান্টিক কাউন্সিলের সিনিয়র নন রেসিডেন্ট ফেলো। আপনি ভাইরাসটির জন্য কী চীনকে দায়ী করেন? একই অভিযোগ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং স্টেড ডিপার্টমেন্টের। তারা বলেছেন ভাইরাসটি চীনের মার্কেট নয় ল্যাব থেকে ছড়িয়েছে। আপনি কী এজন্য চীনকে অভিযুক্ত ভাবেন?

ড. রীয়াজ: না। আমি চীন অভিযুক্ত এমনটা বলিনি। আমাকে এটা স্পষ্ট করতে দিন। যদি ভাইরাসটির উৎপত্তি ল্যাব থেকে হয়ে থাকে তাহলে সেটা তদন্ত করে দেখার বিষয়। বিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত যা বলছেন সেটা হলো- চীনের উহানের একটি মার্কেট থেকে এ ভাইরাস ছড়িয়েছে। কোনোকিছু অনুমান করার পূর্বে আমাকে বিষয়টা স্পষ্ট করা জরুরী। আমি কোনো ধরনের দ্বিধা তৈরি করতে চাইনা, এ ধরনের কোনো সুযোগও আমার জায়গা থেকে নেই। আমি সন্দেহ এবং ষড়যন্ত্র তত্ত্বকে উৎসাহিতও করিনা।

যেটা আমি বলেছিলাম সেটা হলো- প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হবার খবর পাওয়া যায় ডিসেম্বরের শুরুতে। আরো নির্দিষ্ট করে বললে সেটা ১০ ডিসেম্বর। আর ভাইরাস সংক্রমিত হবার বিষয়টি বেইজিংয়ে অবস্থিত বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার অফিসকে জানাতে ২১ দিন সময় লেগে যায় চীনের। সংক্রমণের বিষয়টি জানার পরও চীন কর্তৃপক্ষ তা লুকিয়ে রাখতে চেয়েছে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা প্রকাশ করেছে তাদের শাস্তি দিয়েছে, যেমন চায়নার চিকিৎসকের কথা বলা যায়। এরপর যেটা ঘটেছে সেটা হলো ভাইরাসটি নিয়ে চীন যথেষ্ট কোনো তথ্যের জানান দেয়নি এবং স্বচ্ছতার প্রকাশ ঘটাতে পারেনি। এটা তারা করেছে প্রশাসনে জবাবদিহিতার বিষয়টি অনুপস্থিত থাকার কারণেই। আমার কথাটা মূলত এ পয়েন্টটিতেই। যদি চীন অধিকতর স্বচ্ছতার প্রমাণ দিতে পারতো, যদি তারা কার্যকর ভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে সাড়া দিতো, অন্যদের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করতো তাহলে অন্য দেশের পক্ষে ভাইরাস মোকাবিলা করাটা সহজ হতো। কমানো যেতে পারতো ভাইরাসজনিত মৃত্যুর সংখ্যা। এটার দায়-দায়িত্ব চীনকেই বহন করতে হবে। আমি মনে করি এই বিষয়টির একটা তদন্ত হওয়া উচিত। যে সকল সংস্থা জনসম্মুখে এসব বিষয় নিয়ে কাজ করছে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আমি এটা অনুধাবন করেছি। আমি কোনো ধরণের চূড়ান্ত কথা বলে দেইনি। বিষয়টা নিয়ে তদন্ত হোক। তাহলেই দেখা যাবে কীভাবে চীনের স্বচ্ছতার ঘাটতি, জবাবদিহিতার অভাব এই ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। এটা নিয়ে আরো অধিক তদন্ত প্রয়োজন। বিজ্ঞানসম্মত কথা হলো-এটা কীভাবে শুরু হয়েছে সেটা আপনাকে জানতে হবে। যদি আমরা ভাইরাসটি প্রতিরোধ করতে চাই, এটাকে জানতে হবে। যদি এমন মহামারি আরেকটি আসে তাহলে কী আমরা জানতে চাইবো না কোথা থেকে কীভাবে এটার শুরু হলো? এটা ঘটার কারণ কী এবং কীভাবে ছড়ালো? এগুলো নিয়েই আমার উদ্বেগ।

কিছু কিছু জায়গায় মি: ট্রাম্পের সঙ্গে আমার মতের ভিন্নতা আছে। তাঁর বোকামির সঙ্গে আমি পুরোপুরি একমত হতে পারিনা। অন্যকে দোষারোপ করা, তার দিকে ইঙ্গিত করা যুক্তিযুক্ত মনে হয়না। তিনি যা করছেন সেটা হলো নিজে ব্যর্থতা ঢাকার উদ্দেশ্য হিসেবে দোষ চাপাচ্ছেন চীনের উপর। ট্রাম্প নিজেই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারেননি। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে কথা বলেছেন রাষ্ট্রদূত মাইলাম। শুরুর প্রথম ৪৫ দিনে করোভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টিকে পাত্তাই দেননি ট্রাম্প। তিনি এখন এর কোনো দায়-দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন না।

মুশফিক: মাইলাম, আপনি এ প্রসঙ্গে কিছু বলবেন?

মাইলাম: চীন সম্পর্কে এতক্ষণ যা বলা হলো আমি মনে করি পুরোটাই যুক্তিসংগত। সংক্রমণের বিষয়টিতে চীন যেভাবে পদক্ষেপ নেবার কথা ছিলো তা সঠিকভাবে পালন করতে পারেনি। চীন খুব স্বচ্ছ নীতির দেশ নয়। এটা স্বৈরাশাসনের দেশ। খুব বাজে স্বৈরশাসন চলে সেখানে। এতো কোনো সন্দেহ নেই যে মহামারি করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়টিতে লুকোচুরি খেলেছে চীন।

আমার কথা হলো, যদি চীন থেকে আগেভাগেই তথ্য পাওয়া যেতো তাহলে কী যুক্তরাষ্ট্রে কোনো তফাত দেখা যেতো। ট্রাম্প কী বিষয়টিকে এখন যেভাবে অবজ্ঞা করেছেন আগাম তথ্য পেলে কী একি ভাবে অবজ্ঞা করতেন না? আমি মনে করি চীন তাদের অবস্থানে পুরোপুরি স্বচ্ছ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রে কোনো রদ-বদল হত না। এটা অনেকটা রাজনীতির অশনী সংকেত। আমি মনে করি বিষয়টা চীনের দায়িত্ব নয়, এখানে অতিরিক্ত যে প্রাণহানি ঘটেছে তার জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়ী।

ড. রীয়াজ: আমি আপনার সঙ্গে একটু যুক্ত করে বলতে চাই, এম্বেসডর মাইলাম। আমিও মনে করি না যে আগাম তথ্য জানলে যুক্তরাষ্ট্রে খুব একটা তফাত দেখা যেতো। ট্রাম্প এবং তার প্রশাসনের লাঘামহীন এবং অপেশাদারিত্ব সুলভ আচরণের জন্যই এটা হতো না। আমি যেটা গুরুত্ব দিচ্ছি সেটা হলো আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর কাছে চীনের দায়বদ্ধ থাকা। যদি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিষয়টি নিয়ে ভিন্ন কোনো তথ্যের যোগ হতো তাহলে তারা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সেভাবে ব্যবস্থা নিতে পারতো। এমনটা হতো পারতো, নাও হতে পারতো, এটা সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রগুলোর বিষয়। যদি আমরা ট্রাম্পের কথা বলি তাহলে বলবো এটা তার নিজের দায়বদ্ধতা। তার এ ব্যর্থতার জন্য আমরা এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি।

মাইলাম: আমি যেটা বলেছি তার মানে এই নয় যে চীন সম্পর্কে যেটুকু বলেছেন সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কিংবা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে চীনের ভূমিকার বিষয়টিও বলতে পারেন। আমি কথা বলেছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গটুকু নিয়ে। করোনা সংক্রমণ নিয়ে এখানে যা ঘটেছে, তার কতটুকু আপনি-আমি জানি তা নিয়ে বলেছি।

মুশফিক: ড. রীয়াজ, আপনি বাংলাদেশ পরিস্থিতি হয়তো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। বাংলাদেশের শ্রোতারা বিষয়টি সম্পর্কে আরো জানতে চায়। কিভাবে দেখছেন বাংলাদেশ পরিস্থিতিকে? আপনি কী মনে করেন ক্ষমতাসীন সরকার সঠিকভাবে করোনা মহামারি পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করছে? প্রতিদিনই আমরা মৃত্যুর খবর শুনতে পাচ্ছি, চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে মানুষ। দেশের লোকজন এখন চরম খাদ্য সংকটে আছে। সরকারের নেতা-কর্মীরা ত্রাণ চুরি করছে, এমনকি তা থেকে বাদ যাচ্ছেনা প্রণোদনা প্যাকেজও। এটা নিয়ে আপনার মূল্যায়ন কী? আর কীভাবে বাংলাদেশের মানুষের এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটতে পারে?

ড. রীয়াজ: যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন শুরুর দিকে করোনাভাইরাস নিয়ে যা করেছে বাংলাদেশে তেমনি পুনরাবৃত্তি হয়েছে। সরকার পুরো বিষয়টিকেই পাত্তা দিতে চায়নি। কোনো ধরনের প্রস্তুতি ছিলো না, যদিও সরকার বলে বেড়িয়েছে তারা প্রস্তুত ছিলো। সরকার পক্ষ থেকে এমনও বলা হয়েছিলো- করোনায় আমাদের কোনো ক্ষতি হবেনা।

সংকটের শুরু থেকে আমরা যে জিনিসটা দেখতে পেয়েছি সেটা হলো জনস্বাস্থ্যের বেহাল দশা। লোকজন করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার সুযোগ পাচ্ছেনা, যে পরিমাণে টেস্ট করা হচ্ছে সেটা খুবই নগণ্য। আমি বলছিনা যে সবাইকে টেস্ট করাতে হবে। তবে যাদের উপসর্গ রয়েছে তাদের পরীক্ষাটুকু হওয়া দরকার, সেটা হচ্ছেনা। দ্বিতীয় বিষয় হলো পাবলিক হেলথ সেক্টরটুকু পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছে। এমনকি যারা আক্রান্ত নয় তারা এখন কোনো চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সাধারণ একটা জ্বরের জন্য কোনো চিকিৎসা মিলছেনা।

আপনি জানেন, বছরের পর বছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট, এখানে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছেনা। এছাড়া এ খাতে রয়েছে দুর্নীতি। অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে স্বাস্থ্য খাতের এমন কোনো অবকাঠামোগত অবস্থার অস্তিত্ব দেশে নেই যেটা এ মহামারির মতো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম। মহামারি কেন নিয়মিত স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনারও একই দশা। এরপর আমরা যে অবস্থাটা দেখছি সেটা জনগণকে অবজ্ঞা করে চলার একটা চিত্র। প্রতিদিন মহামারি আক্রান্তের যে তথ্য দেয়া হচ্ছে সেটা খুবি নগণ্য করে দেখানো হচ্ছে। যদি আপনি উপসর্গের দিকে খেয়াল করেন, করোনা উপসর্গ নিয়েই হাজারের উপর মানুষ মারা গেছেন ইতিমধ্যে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের পরীক্ষা করার সুযোগ হয়নি। আর এ সংখ্যাটাই যে প্রকৃত সংখ্যা তা আমরা নিশ্চিত হতে পারছিনা। এ হিসেবটা শুধু পত্রিকা রিপোর্টে ভিত্তিতে আসা তথ্য। বাংলাদেশে এমন অনেক নিয়মিত ঘটনা আছে যেগুলোর তথ্য রিপোর্টে পাওয়া যায়না। যদি আপনি সরকারি হিসেবে সঙ্গে এসব উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ‌্যাকে যোগ করেন তাহলে তা দাঁড়ায় ১৫,০০ তে। এটা ছোট্ট কোন সংখ্যা নয়। সংক্রমণের সংখ্যাও বেশি করে বাড়ছে। সরকারের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে একটা বিপর্যয় দেখা যাচ্ছে।

সম্মানের সঙ্গেই বলছি, অর্থনীতির যে অবস্থা, আর আপনি এ প্রসঙ্গে যা বলেছেন- এখানে স্বজন-প্রীতি, ত্রাণ চুরি ঘটনা ঘটছে। এরপর আসে প্রণোদনা প্যাকেজের বিষয়, এটি অসহায়দের জন্য। কিন্তু তাদেরকে পেছনে ফেলে দেয়া হচ্ছে। যারা সব চেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ তাদের নাম দেখা যাচ্ছে অগ্রাধিকার তালিকার শেষ দিকে। আমরা এখানে দুর্নীতির খবর পাচ্ছি। আর এগুলো করা হচ্ছে উদ্দেশ্যমূলকভাবে। একই চিত্র দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য আর অর্থনৈতিক খাতে। যদি অর্থনীতির কথায় আসি তাহলে প্রণোদনা প্যাকেজ এমন লোকদের কাছে যাচ্ছেনা যারা অর্থনীতিতে সহায়তা রাখতে পারেন। বাংলাদেশে যে লকডাউন চলছে তা যথাযথভাবে কার্যকর হচ্ছেনা। এটা কোনোভাবেই কার্যকর বলা যাবেনা। জনসচেতনতা কম, তারা রাস্তায় বের হচ্ছে, এছাড়া আনাড়ি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে পোশাক কারখানাগুলো এবং দোকানপাট খুলে দিয়ে। সবগুলো মহামারি বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। ইতিমধ্যে কমিউনিটি সংক্রমণ শুরু হয়েছে। শুধু টেস্ট নয় স্বাস্থ্য কাঠামোগত ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে কীভাবে আপনি এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন?

মুশফিক: বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আপনার কী মূল্যায়ন, রাষ্ট্রদূত মাইলাম?

মাইলাম: প্রফেসর আলী রীয়াজ আমার চাইতে বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক বেশী জানেন। তিনি এ সম্পর্কে যা বলেছেন আমার কাছে যথার্থ মনে হয়েছে। সত্যি বলতে কী এখানে যোগ করার মতো তেমন কিছু নেই। সকালে নিউইয়র্ক টাইমসে ভারতের কেরালা রাজ্যের বিষয়টি পড়েছি। সেখানে ৩৫ মিলিয়ন লোকের বসবাস। তাদের আর্থিক অবস্থা বাংলাদেশের মতো এতোটা ভালো না। সম্ভবত প্রথম জানুয়ারিতে সেখানে করেনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এখানে আপনাদের প্রশ্ন করি- এতো বড় জনসংখ্যার একটা রাজ্যে শুরু থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত আর মৃত্যুর সংখ্যা কত? আক্রান্ত ৭০০, আর মারা গেছে মাত্র ৪ জন। কেন কেরালার চিত্র বাংলাদেশ থেকে এতোটা আলাদা? কারণ এখানে যারা প্রশাসন চালাচ্ছে সবাই মিলে-মিশে কাজ করছে। কে কোন দলের সেটা কোনো প্রসঙ্গ হয়ে দাঁড়ায়নি। তারা করোনাভাইরাস ইস্যুকে হালকাভাবে নেয়নি। বাংলাদেশের রাজনীতিকদের কাছে রাজনীতি একটা ঠুনকো বিষয়। কেউই জাতীয় স্বার্থ নিয়ে ভাবেনা। শুরু থেকেই তারা নিজের এবং দলের স্বার্থ নিয়ে ভাবে। অর্থনীতি কিংবা রাজনীতির কথা যাই বলেন আমি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ অথবা যদি যুক্তরাষ্ট্রের কথাই বলি তাহলে বলবো সেখানে রাজনীতিটা হলো 'জিরো সাম গেইম'।

মুশফিক: মত প্রকাশের স্বাধীনতায় জিরো টলারেন্স নীতি পালন করছে সরকার। মুক্তমতের ওপর সরকারের দমননীতি থামেনি বরং মহামারির এ সময়টাতে আরো ব্যাপকতা পেয়েছে। প্রফেসর আলী রীয়াজ আপনার কী মনে হয়? সরকার কেনো মুক্তমতের বিষয়ে এতো আক্রমণাত্মক?

ড. রীয়াজ: আমি এটাকে বলবো 'দমন-নিপীড়নের মহামারি'। বাংলাদেশ একসঙ্গে দুই মহামারি মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে একটা করোনাভাইরাস মহামারি, অপরটা হলো দমন-নিপীড়ন করে শায়েস্তা করা। যদি আপনি খেয়াল করেন তাহলে দেখবেন মহামারির শুরু থেকে যেই এটা নিয়ে কথা বলতে চেয়েছে সরকার তাকেই থামিয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে এমনটা হচ্ছে। অবর্ণনীয় চাপের মুখে সময় পার করছেন বাংলাদেশের সাংবাদিকরা। অনেক সম্পাদকই এটা স্বীকার করেছেন যে তারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছেন সেলফ সেন্সরশীপ দ্বারা।

বিগত দুই বছরে ২০১৮-১৯ সালে রিপোর্টাস উইদাউট বর্ডার রিপোর্ট অনুসারে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক পাঁচ ধাপ অবনতি ঘটেছে। মহামারির কারণে এমনটা হচ্ছে নতুন করে তা কিন্তু নয়। বরং মহামারি দমন করার আরেকটা উপলক্ষ এনে দিয়েছে সরকারকে। এখন কথা হচ্ছে সরকার কেন এটা করছে। এর কারণ হলো দমনের একটা হাতিয়ার তাদের কাছে রয়েছে সেটা হলো ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। তারা এটা ব্যবহার শুরু করেছে অনেক আগে থেকে আপনি যেটাকে বলছেন দমনের মাত্রা বেড়েছে এ সময়ে এসে। সরকার এটা করছে দুই কারণে। প্রথমত সরকার এই প্রচার চালাচ্ছে যে দেশের অবস্থা খুবি স্থিতিশীল। জিডিপি’র গ্রোথ বেড়েছে। মহামারি এসে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে সরকারের এ দাবি গাল-গল্প ছাড়া কিছুই না।

বিগত ৫-১০ বছরে যদি প্রবৃদ্ধি ৮ এর কোঠায় পৌঁছে থাকে তাহলে জনগণের এতো দুরাবস্থা কেনো? মহামারি শুরুর কয়েক সপ্তাহে আমরা অসহায় মানুষদের দুরাবস্থার চিত্র দেখেছি। বৈষম্যটা এভাবে তৈরি করা হয়েছে। এটা ব্যাখা করার কিছু নেই। চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের রাস্তার দিকে তাকালেই সেটা দেখা যাবে। বিগত ৫-১০ বছর ধরে সরকার তাদের অন্তসারঃশূন্যতার বিষয়টি লুকিয়ে রেখেছে এই ভয়ে যে জনগণ এটা জানলে তাদের জন্যে চ্যালেঞ্জ হতে পারে। অন্য বিষয়টা হলো সরকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর চাপ বাড়িয়েছে। কেন? কারণ সরকার ইতিমধ্যে প্রধান সারির মিডিয়াগুলোকে তার নিয়ন্ত্রণের খাঁচায় নিয়ে এসেছে। তারা খুব অল্পই তাদের স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারে। বিগত দিনে দেখেছি, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা ভূমিকা ছিলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভূমিকা ছিলো কোটা সংস্কার আন্দোলনেও। এদুটো কারণেই 'দমন-নিপীড়নের মহামারি' দেখা যাচ্ছে।

মুশফিক: আমরা প্রায়শই বলে থাকি বাংলাদেশে একটি বলিষ্ঠ সুশীল সমাজ রয়েছে। এসময়টাতে তাদের ভূমিকা কোথায়? তারা কেনো স্বৈরশাসন ও অপশাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে চাননা? যারা সরকারের অনিয়ম এবং স্বৈরশাসন নিয়ে কথা বলছেন তাদের সংখ্যাটাও ক্ষুদ্র। বৃহৎ অংশ কেনো এসব নিয়ে সোচ্চার নয়? সমস্যাটা কোথায়?

মাইলাম:এটা খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন। আমি কিছু যোগ করবো।

মুশফিক: অবশ্যই।

ড. রীয়াজ: আমিও এম্বেসডর মাইলামের কাছ থেকে শোনার অপেক্ষা করছি। তবে সংক্ষেপে যেটা বলবো - বিগত বছরগুলোতে আমরা যেটা লক্ষ্য করেছি তা হলো সুশীল সমাজকে সরকার দুর্বল করে দিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বাড়তি হিসেবে বলতে পারেন ধ্বংস করা হয়েছে। আপনি যে সক্রিয় সুশীল সমাজের কথা বলছেন তাদের বিগত ৫ বছরে পক্ষপাতি করে ফেলা হয়েছে। যে সংখ্যাটা আছে তা অতি ক্ষুদ্র। আমি এখনো নিশ্চিত না যে আমরা এমন একটি সুশীল সমাজ সামনে পাবো যারা বলিষ্ঠ কন্ঠের হবেন।

মুশফিক: রাষ্ট্রদূত মাইলাম, আপনি এ প্রসঙ্গে কিছু যোগ করবেন কী না?

মাইলাম: আমিও একই কন্ঠে সুর মিলিয়ে কথা বলবো ড. রীয়াজের সঙ্গে। দীর্ঘদিন থেকেই এসব উত্থান-পতন দেখে এসেছি। এ প্রসঙ্গে জর্জ ওরওয়েলের ১৯৮৪ উপন্যাসের উদাহরণ দিতে চাই। সময়ের পর সময় ধরে ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীগুলোর কর্তৃত্ববাদী শাসন, গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির কারণে জনগণের মধ্যে ভয় প্রবেশ করেছে। ভয় আর ভয়ের কারণে সুশীল সমাজ বলিষ্ঠ কন্ঠের ভূমিকা পালন করতে পারছেনা। গ্রেফতারের ভয়ে তারা সাহস দেখাতে পারছেনা। কোনোকিছু বলতে পারছেনা। এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের সংখ্যাটা খুবই অল্প।

যারা কথা বলতে পারছেন তাদের একটা আন্তর্জাতিক পরিচিতি এ ক্ষেত্রে সুবিধা দিচ্ছে। তাদের কিছু হলে এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের চাপের ভয় করে সরকার। বাংলাদেশের অনেক সমালোচকরা কথা বলতে সাহস পাচ্ছেননা। কারণ কথা বললেই পরদিন তাকে কিংবা তার পরিবারের সদস্যদের গুম করা হবে। সরকার কোনো উপায়ে সরে যাওয়া এবং পতন ছাড়া তারা সোচ্চার হবার সুযোগ পাবেনা। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি এমন কোনো পরিবর্তন দেখছিনা।

মুশফিক: চমৎকার আলোচনায় অংশ নেবার জন্য প্রফেসর ড. আলী রীয়াজ এবং রাষ্ট্রদূত মাইলাম আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এমন আলোচনা অব্যাহত থাকবে।

ড. রীয়াজ: মুশফিক, আপনাকে ধন্যবাদ।

মাইলাম: ধন্যবাদ মুশফিক।

জিএস/