তথ্য জানা জনগণের অধিকার; বিরুদ্ধমত দমনে টার্গেট করা মানবাধিকারের চরম লংঘন: মীনাক্ষী গাঙ্গুলি

তথ্য জানা জনগণের অধিকার; বিরুদ্ধমত দমনে টার্গেট করা মানবাধিকারের চরম লংঘন: মীনাক্ষী গাঙ্গুলি

সরকারের সমালোচনা করায় বিরুদ্ধমতের ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করা মানবাধিকারের চরম লংঘন বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

বাংলাদেশে চলমান বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড এবং গুমের সংস্কৃতি নিয়েও আন্তর্জাতিক সংস্থাটির পক্ষে বক্তব্য তুলে ধরেন তিনি। মানবাধিকারের চরম লংঘন রোধে যেসকল শীর্ষ কর্মকর্তারা জড়িয়ে পড়েছে তাদের উপর অবরোধ আরোপ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আন্তর্জাতিক অধিকার সংস্থাগুলোর আহবান পুর্নব্যক্ত করেছেন নোবেল বিজয়ী যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ওয়াচডগের শীর্ষ এই কর্মকর্তা।

রবিবার যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনসিএন টিভির টকশো 'রিয়েল টাইম উইথ মুশফিক'-এ অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মানবাধিকার পরিস্থিতির পাশাপাশি আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের ক্রমঅবনতিশীল মানবাধিকার প্রসঙ্গ, মুক্তমত এবং সাংবাদিক নিপীড়নের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী।

জাস্টনিউজ পাঠকদের জন্য আলোচনাটির বাংলা অনুবাদ তুলে ধরা হলো:

মুশফিক: মিনাক্ষী গাঙ্গুলি আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি।

মীনাক্ষী: আমাকে যুক্ত করায় আপনাদেরকেও ধন্যবাদ।

মুশফিক: আপনি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এ একটা সুদীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। কাজ করছেন এশিয়া অঞ্চলের জন্য যার মধ্যে সুনিশ্চিতভাবে বাংলাদেশও যুক্ত।বাংলাদেশে এখন মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা সম্পর্কে আমরা আপনার কাছ থেকে শুনতে চাই।

মীনাক্ষী: আমি হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর পক্ষ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার হয়ে কাজ করছি। আপনারা জানেন বিশ্বের ৯০ টি দেশে মানবাধিকার সংস্থাটির কার্যক্রম বিস্তৃত। আমি দক্ষিণ এশিয়ার সাতটি দেশের সঙ্গে কাজ করছি। এটা খুবি হতাশার যে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবাধিকার সূচকে দেশটির পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে।

মুশফিক: গণমাধ্যম সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮০টি দেশের মধ্যে ১৫২ তম। সূচক বিচারে আফগানিস্থানের পেছেন দেশটির অবস্থান। কেনো দেশটি এভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে?

মীনাক্ষী: আপনি যেমনটা বলেছে- আমি হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সঙ্গে একটা দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছি। সে সময়টার কথা আমার এখনও মনে আছে। যখন সেনা-সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে। তখন দেশটির দুই দলেরই প্রচেষ্টা ছিল দেশে গণতন্ত্রকে পুনরায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা। সেময় দুই প্রধান দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনা মৌলিক অধিকারের বিষয়গুলোতে স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার পক্ষে বক্তব্য রেখেছিলেন। এখন যে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে তারা কোনোধরনের সমালোচনাকেই ভালোভাবে নিচ্ছেনা। সুষ্ঠুভাবে প্রশাসন পরিচালনার জন্য যেকোনো সরকারের উচিত সুশীল এবং মিডিয়াকে সম্পৃক্ত করা এবং সমালোচকদের সমালোচনাকে মূল্যায়ন করা। প্রকৃতপক্ষে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হল সরকার সমালোচকদের কথাকে গুরুত্ব তো দিচ্ছেইনা বরং তাদেরকে উল্টো সাজা দিচ্ছে। আপনি গণমাধ্যম সূচক নিয়ে যে কথা বলেছেন সেটাই আমরা এখন বিশদভাবে সেখানে দেখতে পাচ্ছি। আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি, সেটা হল সম্পাদক এবং সাংবাদিকদের সেন্সর করা হচ্ছে। দেশটিতে সাংবাদিকতে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তারা হুমকির সম্মুখীন হচ্ছেন। এ কারণেই দেশটির গণমা্ধ্যম সূচকে অবনতি ঘটছে। সরকার এখানে হয়ত বলতে পারে দেশে অনেক টিভি চ্যানেল রয়েছে, ম্যাগাজিন রয়েছে, অনলাইন মিডিয়া রয়েছে। কিন্তু সমস্যার কথা যেটা সেটা হল- তারা সরকারের প্রচন্ড চাপের মুখে। যদি তারা প্রকৃত অর্থে কাজ করার সুযোগ পায় এবং তারা প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে চায় তাহলে সরকার তা করতে দিবেনা। জনগণকে তা জানতে দিবেনা।

মুশফিক: এ প্রসঙ্গে আমি আপনাকে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামের কালা কানুন কথা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। তারা এটাকে মুক্ত গণমাধ্যমের বিপক্ষে ব্যবহার করছে। আপনি যেমনটা বলেছেন- তারা গণমাধ্যমের বিষয়ে অনেকটা জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছে। এমনকি মুক্ত সাংবাদিকতাকে তারা অপরাধ হিসবে গণ্য করছে। এ বিষয়গুলোতে আপনার হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এবং অন্যান্য সংগঠনগুলো কাজ করছে। আপনারা কী সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন? সরকার কী আপনাদের কথ শুনছে?

মীনাক্ষী: ধন্যবাদ। এই ডিজিটাল সিকিউরিট অ্যাক্টের পূর্বে আরেকটা আইন ছিল- সেটা আইসিটি অ্যাক্ট। এটা সেকশন-৫৭ এর আওতাভূক্ত। আর এই আইনের মাধ্যমে সরকার অপব্যবহারের সুযোগ নিয়েছে। শুধু যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এর অপব্যবহার হয়েছে, যারাই সমালোচনা করেছে সেটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বা অন্য যেকোনোভাবেই হোক তাদের বিপক্ষে তা ব্যবহার করা হয়েছে। অনেককেই গ্রেফতারকরা হয়েছে। আমি এমন একটা ঘটনা কথা জানি যেখানে একজন আরকেজনের পোস্টে লাইক দিয়েছে সেজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছিল যে আইসিটি অ্যাক্টের অপব্যবহার হয়েছে। আর এর পরিবর্তে নতুন সমাধান হিসেবে সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে। কিন্তু দুভার্গ্যবশত যেটা দেখা গেল যে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টকে আরো বাজেভাবে ব্যবহার করা শুরু করা হয়। অবশ্যই সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে এ আইনের অপপ্রয়োগ করা হয়েছে। সাংবাদিক সমাজ, এডিটরস গিল্ডসহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠন এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে। সরাসরি সরকারের কাছে এর বিরোধীতা করেছে। আইনটি নিয়ে যে উদ্বেগ প্রকাশ করা হযেছে সরকারকে সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে আমরা দেখিনি।
এর পরিবর্তে যেটা আমরা দেখতে পেলাম এ আইন করার পর গ্রেফতার আরে তরান্বিত হয়েছে। আমরা দেখেছি যারাই ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে কোনো পোস্ট দিয়েছে তাদের নামে মামলা দায়ের হয়েছে। এরকম পোস্ট নিয়ে রাষ্ট্রকে কেনো এত উদ্বিগ্ন হতে হবে? সবচাইতে বাজে যে বিষয়টা আমরা দেখতে পেলাম তা হল- কারা হেফাজতে লেখক মুশতাক আহমদের মৃত্যুর ঘটনা। আর এটা ঘটেছে মহামারির সময়ে।

বিশ্বে এমন কোনো সরকার নেই যে তার জানে কিভাবে মহামারী মোকাবেলা করতে হয়। সেখানে যেটা প্রয়োজন সেটা হল- সুশীল সমাজকে সরাসরি সম্পৃক্ত করা। মহামারী মোকাবিলায় রাষ্ট্রের জন্য এটা ছিল সমাধান খুঁজে বের করার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এই পরিস্থিতিতে জনগণ যখন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা শুরু করল তখন তাদের জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হল। আর এটা এমন পরিস্থিতিতে করা হল যখন জেলগুলো এমনিতেই ছিলো কয়েদিতে ঠাসা। এর সহজ হিসেব একটাই তারা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের প্রস্তুতির বিষয়টিতে সমালোচনা করেছে। এটা খুবই জঘণ্য এবং হতাশার। একি সময়ে কার্টুনিস্ট কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তার কাছেই নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছিল মুশতাক আহমদ। একইভাবে অন্যদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে। কারাগারে কিশোরের উপর এমনভাবে মারপিঠ করা হয়েছে তিনি শ্রবণশক্তি পর্যন্ত হারিয়ে ফেলেছেন। এখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর এমন ধারণা জন্মেছে যে, তারা চাইলেই যারা সরকারের সমালোচনাকারীদের গ্রেফতার করতে পারবে এবং জেলে ঢুকাতে পারবে। এবং তারা একই কায়দায় সমালোচকদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যেতে পারবে। এটাকে কিভাবে ন্যায় বলে মূল্যায়ন করা যাবে?

মুশফিক: দেশের ভিতরে কী ঘটছে তা আপনি দেখতে পাচ্ছেন। অন্যদিকে, দেশের বাইরে যারা আছে, যারা মুক্তমত প্রকাশের চর্চা করছেন সরকার এখন তাদের উপর নজরদারি শুরু করেছে। বাইরে থেকে যা বলা হচ্ছে সেটাকে আমি ঢালাও সমর্থন না-ও করতে পারি। তবে আমি জোর দিচ্ছি তাদের মতপ্রকাশের অধিকারের বিষয়টিতে। আপনিও তাতে একমত হবেন। বিদেশে যারা অবস্থান করছেন তাদের কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য ইউরোপীয় দেশে নির্বাসিত জীবন যাপন করছে। সরকার তাদের বিপক্ষে একধরনের যুদ্ধই ঘোষনা করেছে বলা যেতে পারে। সরকার তাদেরকে কথিত ক্রিমিনাল, সাইবার সন্ত্রাসী এই জাতীয় ক্যাটাগরিতে আখ্যা দিচ্ছে। বিষয়টিতে আপনার অভিমত কী?

মীনাক্ষী: সরকার যেভাবে দেশের ভিতর মিডিয়া হাউস এবং সূত্রগুলোকে সেন্সর শুরু করেছে সেকারণে বিশ্বাসযোগ্য সংবাদ পেতে বাংলাদেশের অনেক মানুষ দেশের বাইরের সংবাদ মাধ্যমে থেকে খবর যাচাই করতে চাচ্ছে। এটা যে শুধু এই দেশে ঘটছে এমনটা নয়। অনেক বছর কয়েক আগে আমি যখন ভারত গিয়েছিলাম তখন আমরা খবরের জন্য বিবিসির সংবাদ দেখতাম। সে সময়টাতে আমরা সব খবরের বিষয়ে ভারতের গণমাধ্যমের উপর নির্ভর করতে পারতাম না। এটা মাঝে মাঝে ঘটে থাকে। বাংলাদেশে এখনও বিবিসি বাংলা জনপ্রিয়। এর পাশাপাশি আরও কিছু মাধ্যমও জনপ্রিয়।

এখন এটা কেউ আশা করেনা যে গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে কাজে লাগিয়ে দাঙ্গা ও সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়া হবে। এটা ঘটলে রাষ্ট্রপক্ষ তা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিবে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ সমালোচনার জন্য একইভাবে পদক্ষেপ নেয়া মানা যায়না । সবশেষ কথা হল- এটা শুধু গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয় নয়, বাংলাদেশের জনগণের তথ্য জানার অধিকার রয়েছে। তাদের জানাতে হবে।একি কথা বলবো যারা দেশের বাইরে থেকে সরকারের সমালোচনা করছেন তাদের প্রসঙ্গে।

মুশফিক: যেসকল সাংবাদিক দেশের বাইরে রয়েছেন তাদের পরিবারকে এখন নির্যাতনের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আপনার নিশ্চয় নজরে এসেছে সাংবাদিক কনক সারওয়ারের বোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেসকল সাংবাদিকরা বিদেশে সাংবাদিকতা করছেন হয় তাদের বোনকে অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের টার্গেট করছে সরকার। আপনি এরকম কর্মকান্ডকে কীভাবে ব্যাখা করবেন?

মীনাক্ষী: এটা আসলে খুবই বেদনাদায়ক বিষয়। ইথিওপিয়া নিয়ে করা হিউম্যান রাইটসের কিছু প্রতিবেদন আমি দেখেছি। জনগণকে লক্ষ্য বস্তু করার এমন ঘটনা দেশটিতে ঘটেছে ২০০০ সালের শুরুর দিকে। যারা দেশের বাইরে থেকে সরকারের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেছে তাদের পরিবারের সঙ্গে দেশে নির্যাতনের এমনটা ঘটেছে। একি ঘটনা ঘটেছে শ্রীলঙ্কায় যে সকল কমিউনিটি লন্ডন এবং কানাডায় সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে তাদের পরিবারগুলো দেশের অভ্যন্তরে হামলার শিকার হয়েছে। এটা একেবারেই একটা খারাপ দৃষ্টান্ত। প্রথমত, আইনের কিছু সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া রয়েছে যা অনুসরণ করতে হয়। সরকার যদি মনে করে কোনো ব্যক্তি অপরাধে জড়িত তাহলে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে। কিন্তু এই অপরাধে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাজা দেয়াটা জঘন্য রকমের মানবাধিকার লংঘন।

এখন আসি সাংবাদিক কনক সারওয়ার প্রসঙ্গে। তার কাজের সঙ্গে সরকারের হয়ত দ্বিমত থাকতে পারে। আর বিষয়টি নিয়ে একে অপরের সাথে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু তার কণ্ঠ বন্ধ করে দিতে ভয় দেখানোর কাজটা অন্যায় সিদ্ধান্ত। আমি কনক সারওয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি তিনি আমাকে জানিয়েছেন তার বোন কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা এবং মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়েছে। এখানে আরেকটা গলদ দেখতে পাচ্ছি আমি। যখন কাউকে অভিযুক্ত করার মতো কোনো বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়না তখন মাদক মামলাকে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়াও অন্যান্য মামলা সাজানো হয় যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। আমি মনে করি সরকারের উচিত কনকের বোনকে অবিলম্বে মুক্তি দেয়া এবং তার জামিনের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি না করা। সামনে এ মামলার শুনানি হবে। তাকে মুক্তি দেয়া উচিত কারণ তার ছোট তিনটি সন্তান রয়েছে আর তার বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ আনা হয়েছে তাতে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

অন্য যে বিষয়টি আমি বলবো তা হল-বাংলাদেশের মানুষ রাজনীতি সচেতন। যুক্তরাষ্ট্রের মতই তারা রাজনৈতিক দল বাছাই করা, তাদরে প্রার্থী পছন্দ করা এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে চায়। বিরোধীদলকে সমর্থন করাটা কোনোভাবেই অপরাধ হতে পারেনা। এটাই গণতন্ত্র। যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় আর অন্য কোন দল ক্ষমতায় আসে তাহলে আওয়ামী লীগ দলকে বাছাই করা এবং তার নেতৃত্বকে সমর্থন দেয়া, প্রশংসা করা, রাজনৈতিক কর্মকান্ডে অংশ নেবার অধিকার দলটির কর্মীদের থাকতে হবে। তাহলে আমরা বলতে পারি যদি কেউ তার রাজনৈতিক মতাদর্শের সঙ্গে একমত না হন, তার সমালোচনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মনে করেন তবুও এসব কারণ দেখিয়ে তার পরিবারকে নির্য়াতনের লক্ষ্য বস্তু বানানো যাবেনা।

মুশফিক: আপনার হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ আরও ১০ টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা চরম মানবাধিকার লংঘনের দায়ে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ মহাসচিবকে চিঠি দিয়েছেন। কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে বলেছেন? আর আপনাদের আবেদনের বিষয়ে কী কোনো সাড়া পাচ্ছেন ?

মীনাক্ষী: আমরা কয়েকটি বিষয়ে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে উদ্বিগ্ন যেমন- বিচাবর্হিভূত হত্যাকান্ডের সংস্কৃতি, ক্রসফায়ার এবং গুমের ঘটনা বাংলাদেশে সংগঠিত হচ্ছে। দেশটিতে এসকল কাজই সংঘটিত হচ্ছে। শুধু ক্রসফায়ারের ঘটনা সরকারকে কর্মকান্ডের উদাহরণ এমনটা বলে থেমে যাওয়া যাবেনা। কয়েক বছর আগে ২০০৬ সালে আমরা র্যাব নিয়ে কথা বলেছিলাম। এটি বিএনপি সরকারের সময় প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডে কিভাবে ক্রসফায়ারকে ব্যবহার করা হয় সেটা নিয়ে আমরা সমালোচনা করেছি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে শতশত মানুষ গুমের শিকার হয়েছে। বাংলাদেশে এসকল ঘটনা এখন একটা ডাল-ভাতের মত বিষয় হয়ে উঠেছে। দেশটিতে যাদেরকে আটক করা হয় তারা ভয়ে থাকে যে হয় তাদের গুম করা হবে কিংবা ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। নাগরিকরা ভয়ে থাকে রাষ্ট্র হয় তাদের গুম করবে হবে, নতুবা হত্যা করবে। এটা আসলেই গা শিউরে উঠার মত পরিস্থিতি। প্রকৃতপক্ষে এমনটা বন্ধ হওয়া উচিত।

যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা ছিল তখন মনে আছে আমি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। তিনি এও বলেছিলেন যে কোন শক্তিশালী রাজনৈতিক পক্ষ বিরোধীতাও করে তবুও আইনশৃঙ্খলবাহিনী সেক্ষেত্রে শক্তির অপব্যবহার করবেনা। কিন্তু আমরা এখন যেটা দেখছি সেটা ক্ষমতার অপব্যবহারের মত ঘটনা। যেমন, মেজর সিনহাকে একজন ইন্সপেক্টর হত্যা করেছেন। সেটাও ক্রসফায়ারের মত ঘটনা। পরে তিনি সঙ্গে বন্দুক রেখেছিলেন, মাদক ছিল-এরকম গল্প সাজানো হয়।

এপ্রচেষ্টায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে ক্রসফায়ারের ঘটনা কিছুটা কমে আসে। এটা এরকম হত্যাকান্ড বন্ধ করার একটা উপায় হতে পারে। কিন্তু সরকার যখন এসকল অভিযোগ অস্বীকার করে তখন এটি অনিয়ম এবং জবাবদিহিতাহীন এক পরিবেশ তৈরি করে। আর তাতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে অন্যায় কর্মকান্ড চালিয়ে যাবার বৈধতা দেয়া হয়। এখন আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যে আহবান জানাচ্ছি, সেটা হল- আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেসকল কর্মকর্তা এসকল মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় নেতৃত্ব পর্যায়ে রয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার আওতায় নিয়ে আসা।

মুশফিক: আমাদের সঙ্গে যোগ দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ মীনাক্ষি গাঙ্গুলি।

মীনাক্ষী: আপনাকেও ধন্যবাদ।

এসজে/