রোজা কবুল হওয়ার জন্য যা করণীয়

রোজা কবুল হওয়ার জন্য যা করণীয়

রোজা কবুল হওয়ার জন্য পানাহার থেকে বিরত থাকাই যথেষ্ট নয়, এর জন্য হতে হবে সংযমী। সব ধরনের পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে; পরিত্যাগ করতে হবে অনর্থক কাজ ও অহেতুক কথাবার্তা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন-যে মিথ্যা কথা বলা ছেড়ে দেয়নি, আল্লাহর কাছে তার রোজার কোনো দরকার নেই (বোখারি)। তিনি আরও এরশাদ করেন-‘সত্যিকার রোজা হলো পানাহার না করা নয়, অনর্থক ও অশ্লীল কথা থেকে বেঁচে থাকাই আসল রোজা।’ অতএব রোজা কবুল হওয়ার জন্য সব ধরনের গুনাহ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে; দৃষ্টির হেফাজত করতে হবে; জবানের হেফাজত করতে হবে। কোনোভাবেই গিবত, পরনিন্দা করা যাবে না।

মহান রবের একান্ত অনুগত হতে হলে বেশ কিছু গুণ অর্জন করা আবশ্যক। আর রমজান সেসব গুণ আত্মস্থ করতে বিশেষভাবে সহায়তা করে। রমজান মানুষে মানুষে ভেদাভেদ-বৈষম্য বিলোপ করে; হৃদয়ে তৈরি করে অন্যের জন্য সহমর্মিতা; দীক্ষা দেয় সহনশীলতা ও ধৈর্য।

রমজান এক সুমিষ্ট ঝরনাধারা। এর বরকত বহুদূর বিস্তৃত। রোজা রাখার মধ্য দিয়ে একজন রোজাদার শুধু নিজের জন্যই নয়, কল্যাণ বয়ে আনেন অন্যদের জন্যও। মুসলমানরা যখন প্রকৃতরূপে রোজা রাখেন এবং রোজার হক আদায় করেন, তার প্রতিফল ছড়িয়ে পড়ে সমাজের সর্বস্তরে; তার আভায় উদ্ভাসিত হয় চারদিক।

আল্লাহ তায়ালা রোজার মাধ্যমে মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করেন; রিপুর তাড়না থেকে মুক্ত করেন এবং অন্তরে জাগ্রত করেন প্রেমের, তাকওয়ার। আর এই ভালোবাসাই মানুষকে নিয়ে যায় সত্য-সুন্দর মুক্তির পথে।

রোজা রাখার মাধ্যমে গুনাহের কাফফারা হয় এবং মাগফিরাত লাভ হয়। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেনÑ যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে রোজা রাখবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে (বোখারি)। অন্য এক হাদিসে রাসুল (স) এরশাদ করেনÑ জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে, বলা হয় ‘রাইয়ান’। কেয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোজাদাররা প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না (বোখারি)।

রমজানে যতটা সম্ভব কোরআন তেলাওয়াত করতে হবে। কারণ কোরআন তেলাওয়াত হলো সর্বোত্তম জিকির। এ ছাড়া তসবিহ-তাহলিল আদায় করতে হবে। বেশি বেশি এস্তেগফার পড়তে হবে। হৃদয়ছোঁয়া ছোট্ট এই দোয়া পড়ুন-রব্বিগ্ফির, ওর্য়াহাম, ওয়া আন্তা খইর্রু রাহিমিন। অর্থাৎ হে আমার রব, আমাকে ক্ষমা করুন, দয়া করুন, আপনি তো দয়ার আধার, সর্বশ্রেষ্ঠ দয়াবান।

এ ছাড়া নফল নামাজগুলো-যেমন এশরাক, আওয়াবিন আদায় করুন। বিশেষ করে শেষ রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়–ন। আল্লাহ তায়ালা রাতের ওই নির্জনে বান্দার দোয়া কবুল করেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত রাসুল (স) এর হাদিস উল্লেখ করে তিনি বলেন, রমজানের প্রতিরাতে আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ঘোষক ডেকে বলেন, হে কল্যাণপ্রত্যাশী! অগ্রসর হও। হে পাপাচারী নিবৃত্ত হও। এর পর তিনি বলেন, আছ কি কেউ ক্ষমাপ্রত্যাশী, আজ তোমাকে ক্ষমা করা হবে। আছ কি কেউ তওবাকারী, আজ তোমার তওবা কবুল করা হবে। আছ কি কেউ সাহায্য প্রার্থনাকারী, আজ তোমার চাওয়া পূরণ করা হবে। ঘোষণার এ ধারাবাহিকতা রাতভর চলতে থাকে।

তাকওয়া অর্জনের এ মাসে মুমিন মুসলমানদের ওপর অর্পিত হয়েছে গুরুদায়িত্ব। সুবর্ণ সুযোগ এসেছে অশেষ সওয়াব হাসিলের এবং রিপুকে দমন করে মহান চরিত্র অর্জনের। আল্লাহ তায়ালা আমাদের তওফিক দান করুন নিজেদের সংযত রাখতে-সব ধরনের অন্যায় থেকে, অনাচার থেকে, অশালীন কাজ ও অনর্থক কথা থেকে। আমিন!

রোজা সংক্রান্ত মাসআলা

যেসব কারণে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ এবং পরবর্তী সময়ে কাজা আদায় করতে হয়-১. অসুস্থতার কারণে রোজা রাখার শক্তি না থাকলে কিংবা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে অথবা সুস্থতা লাভে বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা থাকলে রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। ২. অন্তঃসত্ত্বা নারী ও স্তন্যদানকারিণী নারী যদি রোজা রাখেন, আর এতে যদি তার কিংবা সন্তানের প্রাণনাশের কিংবা অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে তা হলে তার জন্য রোজা ভঙ্গ করা জায়েজ। ৩. মুসাফিরের জন্য রোজা না রাখা কিংবা ভঙ্গ করার অনুমতি আছে।

এমজে/