শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মাহফুজ উল্লাহকে দাফন করা হয়েছে

শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে মাহফুজ উল্লাহকে দাফন করা হয়েছে

খ্যাতিমান সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবি এবং লেখক মাহফুজ উল্লাহর দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে রবিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে বিকেলে দেশের প্রথিতযশা জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট মাহফুজউল্লাহর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে জাতীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে প্রথমে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এরপর একে একে বিএনপি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, নোয়াখালীর জার্নালিস্ট ফোরামসহ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে বরেণ্য এই সাংবাদিককে ফুলে ফুলে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়।

বিকালে আসরের নামাজের পর জাতীয় প্রেসক্লাবের টেনিস গ্রাউন্ডে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় দেশের রাজনীতিক, সুধীজনদের পাশাপাশি পারিবারিক আত্মীয়স্বজনরাও জানাজায় অংশ নেন।

এর আগে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে তার মহদেহ প্রেসক্লাবে আনা হয় এবং নামাজে জানাজা শুরু হয় বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে।

দেশের বিশিষ্ট এই সাংবাদিক শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে (ব্যাংকক সময় ১১টা ৫ মিনিট) ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার মৃত্যুতে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশিষ্ট ব্যক্তিরা শোক প্রকাশ করেন।

জানাজায় অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডির সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব, নির্বাচন কমিশনের সদস্য মাহবুব তালুকদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল আলম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, নজরুল ইসলাম খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এসময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘মাহফুজউল্লাহ এদেশের যে কয়জন প্রথিতযশা সাংবাদিক তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অন্যতম। অসাধারণ একটা বন্ধুত্বপূর্ণ মানুষ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন মানুষ। যিনি সাংবাদিকতাকে শুধু পেশা হিসেবে নেয়নি নেশা হিসেবে নিয়েছিল এবং মাহফুজউল্লাহ একাধারে সাংবাদিকতা করেছেন, লিখেছেন প্রায় ৫০ টির মত বই।’

তিনি বলেন, ‘মাহফুজউল্লাহ এত তাড়াতাড়ি চলে যাবেন আমরা কেউ ভাবতেও পারিনি। তিনি আমার অত্যন্ত ভালো বন্ধু ছিলেন। যদিও আমার বয়সে ছোট কিন্তু আমার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন বন্ধু ছিলেন, পরামর্শক ছিলেন এবং অনুপ্রেরণার একটা জায়গা ছিল। তাকে এভাবে আমাদের আগেই হঠাৎ করে চলে যেতে হবে, তার জানাজা পড়তে হবে, তা আমি ভাবতেও পারছি না। তারে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে আমি নিজেই অত্যন্ত ভেঙে পড়েছি। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসিব করুক।’

প্রেসক্লা‌বের সভাপ‌তি সাইফ‌ুল আলম বলেন, ‘মাহফুজউল্লাহ সম‌য়ের অগ্রগা‌মী লেখক সা‌হিত্যিক। ওনা‌কে হারা‌নোর যে অভাব তা কোনদিনও প‌ূরণ হ‌বে না। তি‌নি দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সমানভাবে ভা‌লোবাস‌তেন।’

বড় ভাই অর্থনীতিবিদ মাহবুবউল্লাহ বলেন, ‘মাহফুজুল্লাহ অত্যন্ত প্রতিভাবান ছিল। আপনারা সাক্ষ্য দেন তিনি কেমন মানুষ ছিলেন। আপনারা দোয়া করবেন তাকে যেন আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন।’

ছেলে মোস্তফা হাবিব অন্তু বলেন, ‘আমার আব্বার কথায় ও কাজে যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন তবে নিজগুণে তাকে ক্ষমা করবেন। পহেলা মে বাবার কুলখানি এই প্রেসক্লাবেই হবে, আশাকরি আপনারা সেখানে অংশগ্রহণ করবেন।’

মাহফুজ উল্লাহ ১৯৫০ সালে নোয়াখালীতে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালে উনসত্তরের ১১ দফা আন্দোলনে অংশ নেন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় স্নাতক ও সাংবাদিকতায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি।

বাংলাদেশের একসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় সাপ্তাহিক বিচিত্রার জন্মলগ্ন থেকেই তিনি এ পত্রিকার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। মাঝে চীন গণপ্রজাতন্ত্রে বিশেষজ্ঞ হিসেবে, কোলকাতাস্থ বাংলাদেশ উপদূতাবাসে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের নেতৃস্থানীয় বাংলা ও ইংরেজি দৈনিকে কাজ করেছেন তিনি। রেডিও ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেছেন। টেলিভিশনের টক শো’তে জনপ্রিয় মুখ ছিলেন মাহফুজ উল্লাহ।

পরিবারের পক্ষ থেকে আগামী বুধবার (১ মে) বাদ আসর জাতীয় প্রেস ক্লাবে মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। জাতীয় প্রেস ক্লাব, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, নোয়াখালী সাংবাদিক ফোরাম, জাতীয় প্রেস ক্লাবে কর্মচারী ইউনিয়ন, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।