বিপজ্জনক কেমিক্যাল অবাধে বিক্রি হচ্ছে

বিপজ্জনক কেমিক্যাল অবাধে বিক্রি হচ্ছে

 

রাজধানীর মিটফোর্ড, যাত্রাবাড়ী ও উত্তরা; গাজীপুরের টঙ্গী এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে অসংখ্য কেমিক্যালের দোকান রয়েছে। এসব দোকানে কোনো ধরনের সতর্কতা অবলম্বন না করেই অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে বিপজ্জনক কেমিক্যাল।

অভিযোগ আছে, লাইসেন্স না নিয়েই অনেক খুচরা ব্যবসায়ী কেমিক্যাল বিক্রি করছেন। এমনকি কাঠ ও জুতার মতো কম দামি কেমিক্যালের ছাড়পত্রে আমদানি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের অতি দাহ্য রাসায়নিক। কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী গোপনে গান পাউডারও বিক্রি করছেন। সরকারি সংস্থাগুলোর নজরদারির অভাবে বিপজ্জনক এসব কেমিক্যাল কিনতে পারছেন যে কেউ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন- বিপজ্জনক কেমিক্যাল পরিবহন, মজুদ এবং সংরক্ষণে সচেতনতা জরুরি। কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের অবশ্যই কেমিক্যালের বিষয়ে বিস্তর জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।

পাশাপাশি সরকারের নীতিমালা মেনে কেমিক্যাল আমদানি, পরিবহন এবং সংরক্ষণ করতে হবে। তা না হলে কেমিক্যাল বিস্ফোরণে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সর্বশেষ বুধবার পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ওয়াহেদ ম্যানশন নামে একটি ভবনের দোতলায় কেমিক্যাল বিস্ফোরণে ৬৭ জনের প্রাণহানি ঘটে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অতি দাহ্য এসব কেমিক্যালের মধ্যে রয়েছে- টলুইন, জাইলিন, এসিট্রন, পটাশিয়াম ক্লোরেট, পটাশিয়াম নাইট্রেট, সোডিয়াম নাইট্রেট, নাইট্রোসেলুলোজ, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, রেড ফসফরাস, সালফার, আইসো প্রোফাইল অ্যালকোহল, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, থিনার, সল্যুশন, কেলিটন, প্যারানল, মিথানলসহ বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল।

এসব কেমিক্যাল দেশীয় জুতার কারখানা, নেইলপলিশ ও পারফিউম তৈরির কারখানা, টেক্সটাইল, চামড়ার ট্যানারি, প্লাস্টিক কারখানা, সুগন্ধি, চামড়ার ট্যানারি, মাছ চাষ, মুরগির খামারসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়।

অবাধে বিপজ্জনক কেমিক্যাল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম বলেন, যেসব বিপজ্জনক কেমিক্যাল আমদানি ও বিক্রির জন্য বিস্ফোরক পরিদফতর অনুমতি দেয় সেগুলোর বিষয়ে আমরা নজরদারি করি।

বিভিন্ন কেমিক্যালের বাজার নিয়মিত পরিদর্শনও করি আমরা। কোনো ধরনের অনিয়ম হলেই ব্যবস্থা নেই। তবে যেসব কেমিক্যাল আমাদের অনুমতি দেয়ার সুযোগ নেই সেগুলো আমরা নজরদারি করি না।

পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অবাধে কেমিক্যাল বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে কেমিক্যাল ইমপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মেজবাহ বলেন, ‘এটা আমাদের বিষয় নয়। পুরান ঢাকায় যেসব কেমিক্যাল বিক্রি হয় এগুলো সম্পর্কে আমাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ বিষয়ে আমাদের কিছু বলারও নেই।’

বাংলাদেশ এসিড মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. উল্লাহ পলাশ বলেন, কেমিক্যাল আমদানিতে সরকারের নীতিমালা রয়েছে। আমরা নীতিমালা অনুসরণ করেই কেমিক্যাল আমদানি করে থাকি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, পুরান ঢাকায় কেমিক্যাল ব্যবসার আড়ালে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী বিস্ফোরকের ব্যবসা করেন। বিভিন্ন সময় পুরান ঢাকা থেকে গানপাউডার উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গান পাউডার বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করে অপরাধীরা। অতি দাহ্য অনেক কেমিক্যালও বোমা তৈরির কাজে ব্যবহার করে অপরাধীরা।

রাসায়নিকের দোকান ঘেঁষে আরেকটি রাসায়নিকের দোকান থাকার নিয়ম নেই। এ নিয়মও মানছে না কেউ। একটি দোকান ঘেঁষে রয়েছে আরেকটি রাসায়নিকের দোকান। কাঠ ও জুতার পলিশ দাহ্য হলেও বিক্রি হচ্ছে পাড়া-মহল্লার হার্ডওয়্যারের দোকানে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কেমিকৌশল বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইয়াসির আরাফাত খান বলেন, কেমিক্যাল পরিবহন এবং মজুদে সব সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল মজুদ করা যাবে না।

এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। যারা কেমিক্যাল আমদানি করবেন, বিক্রি করবেন এবং ব্যবহার করবেন- সবাইকে সচেতন হতে হবে। মজুদকারীদের কেমিক্যালের নিরাপদ মজুদ সম্পর্কে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এমজে/