ওয়াসার পানি নিয়ে গণশুনানিতে বক্তারা

‘আমরা সরাসরি ট্যাপের পানি পান করতে চাই’

‘আমরা সরাসরি ট্যাপের পানি পান করতে চাই’

‘ওয়াসার পানি অনিরাপদ। ওয়াসা কর্তৃপক্ষ সুপেয় পানির কথা বললেও সেই পানি সুপেয় নয়। আমরা চাই বোতলজাত পানি বন্ধ করে ওয়াসার পানি সরাসরি ট্যাপ খুলে পান করতে।’

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলন আয়োজিত ‘নিরাপদ পানি : ওয়াসার দাবি ও জনগণের অভিজ্ঞতা’ শীর্ষক গণশুনানিতে এসব কথা বলেন বক্তারা।

গণশুনানিতে তেল গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ঢাকার চারপাশে যে নদী রয়েছে সেগুলোর পানি যদি পরিষ্কার থাকতো তবে মানুষের অসুখ-বিসুখ প্রায় ৫০ শতাংশ কম হতো। কারণ, পানিবাহিত রোগীর সংখ্যাই বেশি। নিরাপদ পাইপের মাধ্যমে পানি প্রতিটি মানুষের ঘরে যাবে, এটা তাদের নাগরিক অধিকার। কিন্তু সেটা জনগণ ভোগ করতে পারছে না। পানির আলাদাভাবে বাণিজ্যিকীকরণের ব্যবস্থাপক চলছে। আমরা চাই, এটা বন্ধ করে ওয়াসার নিরাপদ সুপেয় পানি ঘরে বসে ট্যাপ খুলে পান করতে।’

বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘আজকের এই গণশুনানি- জীবন নিয়ে গণশুনানি, কারণ পানির অপর নাম জীবন। ওয়াসার অনিয়ম-দুর্নীতি এখনও বন্ধ করা যায়নি। যদি এই দুর্নীতি বন্ধ করা যেত তবে বছর বছর পানির দাম বাড়তো না। নাগরিকরা ঘরে বসে বিশুদ্ধ সুপেয় পানি পেত। ওয়াসার পাহারাদার সরকারকে আমরা বলতে চাই, আমরা বোতলের পানি কিনে পান করতে চায় না, আমরা সরাসরি ট্যাপের পানি পান করতে চাই।’

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, ওয়াসার দায়িত্ব নগরবাসীকে সুপেয় পানি পান করানো। কিন্তু তারা জনগণকে সেই সুবিধা দিচ্ছে না। সম্প্রতি আমরা জানতে পেরেছি আসাদ গেটে ওয়াসার একটি ল্যাবরেটরি আছে। যেখানে পানির বিশুদ্ধতা নির্ণয় করা হয়। সেখানে তারা আমাদের টাকায় বেতন নিচ্ছে ঠিকই কিন্তু কাজ করছে না। সরকারের উচিত, তারা হয় নিয়মিত কাজ করবে, না হলে ওয়াসার থেকেই এই ডিপার্টমেন্ট বাতিল করে দেয়া হোক। প্রয়োজন হলে আমরা নদীর পানি সংগ্রহ করে পান করবো।’

জুরাইন বাসিন্দা হাফিজুল ইসলাম সানি বলেন, ‘ছোট থেকে এই এলাকায় বড় হয়েছি। আগে আমরা সরাসরি ট্যাপের পানি পান করতাম। কিন্তু এখন সেই পানি দিয়ে গোসলও করতে মন চায় না। কারণ, অনেক সময় সেই পানির রং হয় হলুদ বা কালো। আর রান্না তো অসম্ভব ব্যাপার। ওয়াসার কাছে আমরা বারবার অভিযোগ করেও এর কোনও প্রতিকার পায়নি।’

ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলনের সমন্বয়ক মিজানুর রহমান দাবি করে বলেন, ‘বাসায় বসে ট্যাপ ছেড়ে পানি পান করতে চাই, যেসব বাসাবাড়ি এলাকায় পানি নাই এবং বিষাক্ত নোংরা ময়লা পানি আসছে সে সব বাসাবাড়িতে, এলাকায় অতিদ্রুত নিরাপদ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে, দূষিত পানির কারণে জুরাইন, শ্যামপুর, মুরাদপুর, ধনিয়া এ পর্যন্ত যারা অসুখ-বিসুখ এর শিকার হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে, পূর্বে সরবরাহকৃত পানি দূষিত হওয়ার সত্ত্বেও এযাবৎকালে তার জন্য যে বিল পরিশোধ করা হয়েছে, সেই সমুদয় অর্থ গ্রাহককে ফেরত দিতে হবে। ভবিষ্যতে সুপেয় পানি না পাওয়া পর্যন্ত অত্র অঞ্চলের মানুষ কোন বিল প্রদান করবে না, বছরের পর বছর কিভাবে নোংরা, দূষিত পানি সরবরাহ করলো ওয়াসা, সেই বিষয়ে তদন্ত করে দোষীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে এবং অসত্য বক্তব্যের জন্য ওয়াসার এমডিকে ক্ষমা চাইতে হবে। দায়িত্ব পালন করতে না পারলে পদত্যাগ করতে হবে।’

গণশুনানিতে বাম দলের নেতা বজলুর রশিদ ফিরোজ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম, ওয়াসার নিরাপদ পানি আন্দোলনের সদস্য মনিরুল ইসলাম ফরাজীসহ বিভিন্ন সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এমআই