ফেরিতে স্কুলছাত্রের মৃত্যু: ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

ফেরিতে স্কুলছাত্রের মৃত্যু: ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট

মাদারীপুরের কাঁঠালবাড়ি ঘাট থেকে তিন ঘণ্টা দেরিতে ফেরি ছাড়ায় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা সড়ক দুর্ঘটনায় আহত স্কুলছাত্রের মৃত্যুতে তার পরিবারের জন্য তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে রিট করা হয়েছে।

মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন লিগ্যাল সাপোর্ট অ্যান্ড পিপলস রাইটসের চেয়ারম্যান জহিরুদ্দিন লিমন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জনস্বার্থে আবেদনটি করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বলেন, বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের বেঞ্চে রিট আবেদনের শুনানি হবে।

এছাড়া যেকোনো মুমূর্ষু রোগীর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফেরি পারাপার নির্বিঘ্ন করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে রিটে।

নৌসচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান, যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মণ্ডল, মাদারীপুরের ডিসি, পুলিশ সুপার, কাঁঠালবাড়ী ফেরি ঘাটের ব্যবস্থাপক সালাম হোসাইন মিয়া ও কাঁঠালবাড়ী থানার ওসিকে রিট আবেদনে বিবাদী করা হয়েছে।

আবেদনে তিতাসের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার পাশাপাশি ঘটনা তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।

মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র তিতাস ঘোষকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা থেকে নেয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

তিতাস নড়াইল কালিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। তাকে বহন করা অ্যাম্বুলেন্সের গতি রোধ করে তিন ঘণ্টা আটকে রাখে শিমুলিয়া ঘাটের ফেরি কর্তৃপক্ষ। কারণ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবদুস সবুর মন্ডল ঢাকায় ফিরবেন কুমিল্লা নামের ওই ফেরিটিতে।

তাই আহত শিক্ষার্থীর স্বজনরা শত অনুরোধ করলেও তা কানে নেননি ফেরি কর্তৃপক্ষ। যুগ্ম সচিব যাবেন ফেরিটিতে, তিনি না আসা পর্যন্ত কোনো মতে এটি ছাড়া যাবে না। এতে তিন ঘন্টা অপেক্ষার পর সচিব আসার পর ছাড়া হলো ফেরি। ততক্ষণে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে তিতাসের।

তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএর কর্তাদের অনুরোধ করেও কোনো কাজ হয়নি। এমনকি সরকারি জরুরি সেবার হটলাই ৯৯৯-এ ফোন করা হলেও ফেরি দ্রুত ছাড়তে কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

এঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি করে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুল ইসলাম। এছাড়া তিতাসের মৃত্যুর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ও তদন্তে কমিটি করেছে।

ওই ভিআইপি কর্মকর্তার গাড়ি পারাপারের খবর দিয়েছিলেন ওয়াহিদুল ইসলাম।

এ ব্যাপারে তিনি জানান, আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফোন করে ঘাটের ব্যপারে আমাকে জানান। আমি ওই সময়ে ঘাটের আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে মিটিংয়ে ছিলাম। সেখানে ঘাটের দায়িত্বরত কর্মকর্তাও ছিলেন। আমি তাকে বলেছি যুগ্ম সচিব ফেরিতে যাবেন।

তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আমাকে জানালে আমার দায়িত্ব বিষয়টি ঘাট কর্তৃপক্ষকে পৌঁছে দেয়া। তাদের জানানো ছাড়া এখানে আর কিছু নেই। তবে ফেরিতে অ্যাম্বলেন্স না তুলে সচিবের জন্য অপেক্ষা করার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি।

ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, সচিবের জন্য ফেরি অপেক্ষা করার বিষয়টি সম্পূর্ণ ঘাট কর্তৃপক্ষের বিষয়। আমি অ্যাম্বুলেন্স বসিয়ে রেখে সচিবকে নিতে হবে; এমন কোনো কথা বলিনি।

এমআই