বগুড়ায় এক পরিবার সমাজচ্যুত, জোটেনি কোরবানীর এক টুকরো মাংস

বগুড়ায় এক পরিবার সমাজচ্যুত, জোটেনি কোরবানীর এক টুকরো মাংস

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় প্রেম করে বাল্যবিয়ের অভিযোগে সমাজপতিদের সিদ্ধান্তে এবার কোরবানির এক টুকরো মাংসও জোটেনি একঘরে হওয়া একটি কৃষক পরিবারের ভাগ্যে। গ্রাম্য মাতব্বরদের বিরুদ্ধে কৃষক পরিবারের ভাগের গরুর মাংস মাটিতে পুতে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় সমাজচ্যুত গৃহকর্তা
কুদ্দুস শেখ বাদি হয়ে গ্রামের ৫ মাতব্বরের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছে।

থানা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের থেউকান্দি গ্রামের জসমত আলীর ছেলে কুদ্দুস শেখ একজন প্রান্তিক কৃষক। তার ছেলে কবির হোসেন (১৪) ঢাকায় একটি পোশাক কারখানায় চাকুরী করে। কর্মস্থলে প্রেমের সম্পর্কের সূত্র ধরে প্রায় দেড় মাস আগে এক তরুণীকে বাড়িতে নিয়ে আসে। ওই তরুণ-তরুণী বিয়ে না করে একই ঘরে অবস্থান করে। এতে গ্রামের লোকজন গৃহকর্তা কুদ্দুসের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। গ্রাম্য মাতব্বরদের চাপের মুখে তরুণ-তরুণী পার্শ্ববতি রৌহাবাড়ি গ্রামে এক আত্নীয় বাড়িতে বিয়ে সম্পন্ন করে ঢাকায় কর্মস্থলে চলে যায়।

এদিকে কোরবানির গরুর অংশ নেওয়ার জন্য কুদ্দুস সমাজের মাতব্বর সাইফুল ও হায়দার আলীর নিকট সাড়ে ১০ হাজার টাকা দেয়। তারা কুদ্দুসকে সাথে রেখে ৭ ভাগের একটি কোরবানির গরু ক্রয় করেন। এরপর কুদ্দুসের ছেলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বাল্যবিয়ের অভিযোগ তোলে গ্রাম্য মাতব্বররা।

একপর্যায়ে সমাজপতিরা কোরবানির আগের রাতে কৃদ্দুসকে সমাজচ্যুত করে। এ অবস্থায় পরের দিন কোরবানির কাজে কুদ্দুসকে অংশ নিতে দেওয়া হয়নি। তবে কুদ্দুসের ভাগ অংশের কোরবারি মাংস কুদ্দুসকে না দিয়ে মাটিতে পুঁতে রাখে মাতব্বররা। এ ঘটনায় কৃদ্দুস শেখ বাদী হয়ে সোমবার রাতে ধুনট থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগে থেউকান্দি গ্রামের সমাজপতি সাইফুল ইসলাম, হায়দার আলী ও আজিবরসহ ৫ মাতব্বরকে আসামী করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কৃষক কুদ্দস শেখ বলেন, আমার ছেলের বিয়ে উপলক্ষে সমাজের লোকজনকে খাওয়ানোর খরচ বাবদ মাতব্বররা ১০হাজার টাকা দাবী করেন। কিন্ত তাদের দাবীকৃত টাকা না দেওয়ায় আমাকে সমাজচ্যুত করেছে। আমার ভাগের কোরবানির মাংস মাটিতে পুঁতে রেখেছে। আমাকে নানা ভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিনাতিপাত করছি।

এ বিষয়ে সমাজপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, কুদ্দুসের ছেলে বিয়ে না করে এক তরুনীকে নিয়ে বাড়িতে রাত যাপন করতে থাকে। এ বিষয়ে তাকে শাসন করা হয়েছে। তাকে সমাজচ্যুত করা হয়নি। কুদ্দুসের ভাগের কোরবানির মাংস তার বাড়িতে পৌছে দেওয়া হয়েছে। সে মাংস মাটিতে পুতে রেখে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। তারপরও এ বিষয়টি স্থানীয় ভাবে মিমাংসার প্রক্রিয়া চলছে।

ধুনট থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আব্দুল জাব্বার বলেন, প্রাথমিক তদন্তে কোরবানির মাংস মাটিতে পুঁতে রাখার বিষয়টির সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে পরিবারটিকে সমাজচ্যুতির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত হলে সমাজের মাতব্বরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।