ভিডিও বার্তায় নিজেকে নির্দোষ দাবি

নানা বিতর্কে এমপি রতন

নানা বিতর্কে এমপি রতন

ক্যাসিনো কাণ্ডসহ নানা বিতর্কে জড়িত সুনামগঞ্জ-১ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন। ৪ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের এই ভিডিও বার্তায় নিজেকে নির্দোষ ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন সংসদ সদস্য রতন। তার এই ভিডিও বার্তা নিয়ে হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ভিডিও বার্তাকে অনেকেই তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধানকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার কৌশল হিসেবে দেখছেন। ধর্মপাশা, সুনামগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা ও ঢাকায় একাধিক বাড়ি-গাড়ি থাকা সত্ত্বেও নিজেকে কিভাবে সৎ ব্যক্তি হিসেবে দাবি করেন তা নিয়ে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রশ্ন তুলেছেন। সম্প্রতি জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকগুলোতে হাওরাঞ্চলের গডফাদার হিসেবে মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে খবর প্রকাশ হয়। টিএন্ডটির চাকরিচ্যুত হওয়ার পর হাওরাঞ্চলের জমিদার হয়ে উঠেন রতন। ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর বদলে যায় তার জীবন।

সূত্র মতে জানা যায়, ২০০৩ সালে অনিয়মের অভিযোগে জগন্নাথপুর টিএন্ডটি অফিসে লাইনম্যানের চাকরি খুইয়েছেন মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। পরে শাহজালাল আইসিটি বিডি লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করেন।

শাহজালাল আইসিটি বিডি লিমিটেডের চেয়ারম্যান বিলকিস নূর বলেন, এখানে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন রতন। প্রতিষ্ঠানের কথা চিন্তা না করে নিজের আখের গোছানোয় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। এমপি রতনের বিরুদ্ধে এ রকম একাধিক অভিযোগ রয়েছে। তিনি কত টাকার মালিক, এ বিষয়টি সারা জেলায় মানুষের মুখে মুখে এখন। কিভাবে এত টাকার মালিক হয়েছেন তিনি তা জানতে চায় নির্বাচনী এলাকার মানুষ। তার ২য় স্ত্রী বিদ্যালয়ে উপস্থিত না হয়ে ১০ মাসের বেতন তুলে নেয়ার বিষয়টি তাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। তার বিরুদ্ধে জামায়াত-বিএনপির অনেক নেতাকে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করানোর অভিযোগ তুলেছেন সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও ধর্মপাশা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক শামীম আহমদ মুরাদ। শামীম আহমদ মুরাদ আরো জানান, এমপি রতন গত উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে গিয়ে আপন ছোটভাই মোয়াজ্জেম হোসেন রোকনকে বিজয়ী করেন। বিস্তর অভিযোগের পর এমপি রতনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুদক। দেশ ত্যাগের নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাকে। সম্প্রতি কানাডা ঘুরে এসেছেন এমপি রতন। অনেকেই ধারণা করছেন কানাডায় অনুসন্ধান চালালে অনেক তথ্য বের হয়ে আসতে পারে। তবে তার পক্ষের নেতাকর্মীরা তাকে নির্দোষ বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি দলের মধ্যে বিরোধীদের ষড়যন্ত্রের শিকার বলে জানান তার অনুসারীরা। বাড়ি-গাড়ি, জায়গা বা টাকা কিছুই নেই এমপি রতনের এমনটাই জানান তার অনুসারীরা। চারদিকে কোণঠাসা রতন কিছুটা দিশাহারা। এ অবস্থায় তিনি নিজেকে নির্দোষ বলে একটি ভিডিও বার্তা প্রকাশ করেছেন।

ভিভিও বার্তায় তিনি বলেন, আমার সংসদীয় আসনের মানুষ তিন-তিনবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছেন। আমি নির্বাচিত হয়ে এলাকার উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছি। আমি নির্বাচিত হওয়ার আগে এলাকায় তেমন কোনো রাস্তাঘাট ছিল না। আমি নির্বাচিত হয়ে জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, তাহিরপুর উপজেলায় রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তিনি আরো বলেন, স্বাস্থ্যসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার বইছে। হাওর এলাকায় বিকল্প কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ দেখে অনেকেই ঈর্ষান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। একটি মহল উন্নয়নে বাধা দিচ্ছেন। যারা বিরোধিতা করছে তারা নিন্দুক ও অনুপ্রবেশকারী। ভিডিও বার্তায় এমপি রতন বলেন, তার বিরুদ্ধে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এই গুজব বিশ্বাস না করার জন্য অনুরোধ জানান নিজ নির্বাচনী এলাকার মানুষজনকে।