গৃহকত্রী-গৃহকর্মীকে হত্যা: জামাতার বডিগার্ডসহ আটক ৩

গৃহকত্রী-গৃহকর্মীকে হত্যা: জামাতার বডিগার্ডসহ আটক ৩

রাজধানীর ধানমন্ডিতে একই ফ্ল্যাটে গৃহকর্তী আফরোজা বেগম ও গৃহকর্মী দিতিকে যে দুটি ঘরে হত্যা করা হয়েছে সেই দুই ঘরের দুইটি আলমারির তালা ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গেছে। ডাকাতি না-কি চুরির পর এই হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে এনিয়ে এখনও নিশ্চিত হয়নি পুলিশ।

নিহত আফরোজা ক্রিয়েটিভ গ্রুপের ডেপুটি ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী মনির উদ্দিন তারিমের শাশুড়ি। এ ঘটনায় কাজী মনির উদ্দিনের বডিগার্ড বাচ্চু এবং ভবনের ইলেকট্রিশিয়ান বেলায়েতকে আটক করা হয়েছে।

এছাড়া প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ধানমন্ডি রোড নং ২৮, বাড়ি নং ২১-এ অবস্থিত ভবনের নিরাপত্তাকর্মীকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।

পুলিশ জানায়, ফ্ল্যাটটি বিজিএমইএ’র পরিচালক ও বিশিষ্ট শিল্পপতি মনির উদ্দিনের। তিনি টিনটেক নামের একটি গার্মেন্টসের মালিক। ছয়তলা ভবনটির ৫ তলায় এফ-৪ ফ্ল্যাটে এই ঘটনা ঘটেছে। ফ্ল্যাটে মনির উদ্দিনের শাশুড়ি ও গৃহকর্মী থাকতেন। ভবনটিতে মনিরের মালিকানাধীন মোট চারটি ফ্ল্যাট আছে।

ঘটনার বিষয়ে ভবনের নিরাপত্তাকর্মী নূরুজ্জামান জানান, আটক বাচ্চু আফরোজার গ্রামের পূর্ব পরিচিত এবং মনিরের বডিগার্ড। সে এই বাড়িতেই থাকতো। আজ বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বাচ্চু নতুন আরেক গৃহকর্মীকে নিয়ে বাসায় এসে আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে বাসা থেকে নেমে চলে যায়। এর ঠিক আধা ঘণ্টা পরে বাসা থেকে নেমে আসে নতুন ওই গৃহকর্মী। টাকা কম হওয়ায় সে কাজ করবে না বলে চলে যায়।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) আজিমুল হক সাংবাদিকদের জানান, দুই ঘরের ভেতরের মেঝে থেকে দুজনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ সময় ঘরের দুটি আলমারি ভাঙা অবস্থায় পাওয়া যায়। তবে বিষয়টি চুরি বা ডাকাতির কারণে হয়েছে কি-না তা তদন্তের পর বলা যাবে। আমরা সার্বিক বিষয়গুলো তদন্ত করছি।

ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল লতিফ বলেন, লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করা হচ্ছে। কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড, এ বিষয়ে বিস্তারিত এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে পাঠানো হবে।
আফরোজা বেগমের ওপরের ফ্লোরে থাকেন তার মেয়ে দিলরুবা। বিকেলে মা ফোন না ধরায় তিনি তার গৃহকর্মী রিয়াজকে নিচে গিয়ে দেখে আসতে বলেন।

রিয়াজ জানান, আফরোজা বেগমকে ফোনে না পেয়ে দিলরুবা তাকে পাঁচতলা থেকে চারতলায় গিয়ে দেখে আসতে বলেন। আমি গিয়ে দেখি, আফরোজা বেগম ফ্লোরে রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে আছেন। আমি দৌড়ে ওপরে গিয়ে বিষয়টি জানাই। তখন বাসার অপর গৃহকর্মী আপেল ও দিলরুবা ম্যাডাম চারতলায় আসেন।

এ বিষয়ে নিহত আফরোজা বেগমের জামাই ও ফ্ল্যাটের মালিক শিল্পপতি মনির উদ্দিন তারিম সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর ফ্ল্যাটটি থেকে মোবাইল ও কিছু স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে।

এর আগে শুক্রবার রাতে ধানমন্ডির ফ্ল্যাটে গিয়ে নিহত আফরোজা বেগম ও দিতির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে ধানমন্ডি থানার এসআই এনামুল হক জানান, ধারণা করা হচ্ছে ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাদের গলায় পোঁচ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে। তারা পুরো ফ্ল্যাটটি কর্ডন করে ঘটনাস্থল থেকে ফ্ল্যাটে আগতদের হাত-পায়ের ছাপসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে।

এমআই