জনবলের চেয়ে বেশি ব্যয় পরামর্শকে

জনবলের চেয়ে বেশি ব্যয় পরামর্শকে

কারিগরি প্রকল্প ছাড়াও বিনিয়োগ প্রকল্পগুলোতে প্রকল্প বাস্তবায়নে জনবলের চেয়ে পরামর্শক খাতের ব্যয়ই বেশি। এদের সম্মানী উচ্চমাত্রায় দেয়া হয়। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবকাঠামো নির্মাণ ও সংস্কার এবং গবেষণাগার আধুনিকায়ণ প্রকল্পে আউট সোর্সিংসহ মোট ১১ জন জনবলের বিপরীতে দুইজন পরামর্শক নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। যাদের সম্মানী ওই এগারো জনের দ্বিগুণ প্রায়। সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশ মৎস গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশের মৎস্য খাতের উন্নয়নে একমাত্র জাতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৮৪ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ বলে প্রতিষ্ঠিত হয়। ময়মনসিংহে এর সদর দফতর। জাতীয় চাহিদার নিরিখে নিবিড় গবেষণা পরিচালনার মাধ্যমে ইনস্টিটিউট থেকে এ পর্যন্ত মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনাবিষয়ক ৫৭টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে। পাঁচটি কেন্দ্র ও পাঁচটি উপকেন্দ্র থেকে এসব গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। আর এসব কার্যক্রম হলো: মংমনসিংহ স্বাদুপানি কেন্দ্র, চাঁদপুরে নদী কেন্দ্র, খুলনার পাইকগাছায় লোনাপানি কেন্দ্র, কক্সবাজারে সামুদ্রিক মৎস্য ও প্রযুক্তিকেন্দ্র এবং বাগেরহাটে চিংড়ি গবেষণাকেন্দ্র। আর উপকেন্দ্রগুলো হলো: রাঙ্গামাটিতে নদী উপকেন্দ্র, বগুড়াতে সান্তাহার প্লাবনভূমি উপকেন্দ্র, যশোরে স্বাদুপানি উপকেন্দ্র, খেপুপাড়াতে নদী উপকেন্দ্র এবং সৈয়দপুরে স্বাদুপানি উপকেন্দ্র।

জানা গেছে, বেশির ভাগ কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রগুলো পুরনো স্থাপনায় অবস্থিত। পুরনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা হওয়ায় তা অনেকটা অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে গবেষণা পুকুরে চাহিদামতো পানি প্রবেশ ও বের করা যায় না। এ ছাড়া কিছু কিছু গবেষণা পুকুরগুলোর পাড় প্রতি বছর ভেঙে যায়। ফলে গবেষণা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ জন্য পুকুরের পাড়ে রিটেইলিং ওয়াল দেয়া এবং ড্রেনেজ সিস্টেম মেরামত করা প্রয়োজন। কোসো কোনো উপকেন্দ্র ও কেন্দ্রে কর্মচারীদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা নেই। খাবার পরিবহনের জন্য অভ্যন্তরীণ রাস্তা নেই। অনেক পুকুরের অবস্থাও নাজুক। আবার কোথাও পানি শোধনাগার ট্যাংকও নেই।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এই সব কাজের জন্য মোট ১১ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হবে। যাদের মধ্যে ছয়জন কর্মকর্তা, একজন কর্মচারী ও চারজন আউট সোর্সিং থেকে নিয়োগ দেয়া হবে। তবে প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রকল্প পরিচালক প্রেষণে নিয়োগ পাবেন। অন্য চারজন কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হবে। হিসাবরক্ষকও যাবেন প্রেষণে। এদের সব ধরনের সুবিধাসহ ব্যয় হবে এক কোটি ১২ রাখ ৬৪ হাজার টাকা। আর ডিজাইন, ড্রইং, এস্টিমেট ফি ও মাটি পরীক্ষার পরামর্শক পাবে এক কোটি ২৬ লাখ টাকা। ইনস্পেকশন ও বিশেষ সুপারভিশনে পরামর্শক পাবেন ৮৬ লাখ টাকা। এখানে প্রতি মাসে গড়ে একজন পরামর্শক পাবেন দুই লাখ ৯৪ হাজার টাকার বেশি। এই পরামর্শক নেয়া হবে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন পুরকৌশলীকে।

মৎস্য অধিদফতর সূত্র বলছে, অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে গবেষণা কর্মসূচি বাস্তবায়নের ফলে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের মাধ্যমে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদিত মাছ প্রান্তিক চাষিদের এবং মৎস্য ব্যবসায়ীদের অর্থের জোগান দেবে। ২০৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন বছরে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। মূল কাজ হলো, সদর দফতরের অফিস ভবন সম্প্রসারণ, কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রের আবাসিক ভবন ও অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ, ডরমেটরি নির্মাণ। ল্যাব ও হ্যাচারি নির্মাণ, পুকুরগুলোতে ওয়াল নির্মাণ করা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট বিভাগ সূত্র বলছে, আসবাবপত্র ও গবেষণা যন্ত্রপাতি খাতে ব্যয় অত্যাধিক প্রাক্কলন করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে এসব প্রাক্কলন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া প্রকল্পে দু’জন পরামর্শকের জন্য যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তা-ও অত্যধিক। প্রকল্পটির জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা আবশ্যিক হলেও তা প্রস্তাবনার কোথাও উল্লেখ করা হয়নি।