বইমেলায় পুলিশ কর্মকর্তার দম্ভোক্তি

‘সব শালাকে ধরে নিয়ে যাব, ঠ্যাং ভেঙে দেব’

‘সব শালাকে ধরে নিয়ে যাব, ঠ্যাং ভেঙে দেব’

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলার লিটলম্যাগ চত্বরে হেনস্তার শিকার হয়েছেন প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু। শফিউল নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে হেনস্তা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, লিটলম্যাগ চত্বরে ধূমপানের প্রস্তুতির সময় চারু পিন্টুকে কলার ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন পুলিশ কর্মকর্তা শফিউল। এসময় লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের গালাগালিও করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা। তার সঙ্গে রাসেলসহ আরো দু-একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন।

একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত লেখক, সম্পাদক ও শিল্পীরা এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান। এ সময় লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের সঙ্গে পুলিশের ধাক্কাধাক্কিও হয়।

এর প্রতিবাদে লেখক-প্রকাশক-শিল্পী-পাঠকরা মেলার প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে তারা আবার লিটলম্যাগ চত্বরে আসলে সেখানে বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তাসহ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। এ সময় ১৫ থেকে ২০ মিনিট ধরে লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের সঙ্গে পুলিশের উচ্চ বাক্যবিনিময় হয়।

একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাত জোড় করতে বাধ্য হন বাংলা একাডেমির নিরাপত্তা কর্মকর্তা। এ সময় তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ আপনার সঙ্গে অন্যায় করে থাকলে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’

লেখক-প্রকাশকরা তখন দাবি করেন, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তাকে ক্ষমা চাইতে হবে। তবে এ সময় অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত থাকলেও তাকে ক্ষমা চাইতে দেখা যায়নি। তিনি আগের মতোই ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করেন।

মাধবী তাপসী নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, চারু দা সিগারেটটা আরেকজনের কাছ থেকে নিচ্ছিলেন। এ অবস্থায় কোনো কথা না বলে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে শুরু করে পুলিশ। আমি বলেছি, এভাবে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন কেন। তারা আমাকেও ধমক দিয়েছে। এরপর আমাকেও ধরে নিয়ে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে!

তিনি আরো বলেন, ‘তার আচরণে সবাই যখন ক্ষুব্ধ তখনও ওই পুলিশ বলেছেন, সব শালাকে ধরে নিয়ে যাব। সব লেখককে ধরে নিয়ে যাব। ঠ্যাঙ ভেঙে দেব।’

এ সময় ওই পুলিশ কর্মকর্তা হিমাদ্র কাজী নামে একজনকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভুক্তভোগী হিমাদ্র বলেন, ‘ওই পুলিশ আমাকে ধাক্কা দিয়েছে। তখন আমি আরেকজনের ওপর গিয়ে পড়েছি। আমরা বলেছি, সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। আপনি এভাবে কাউকে ধরে নিয়ে যেতে পারেন না। আমরা তাকে বলেছি, আপনি বলতে পারেন; ডিসিপ্লিনে সমস্যা হচ্ছে বা আপনি এমনটা করবেন না। এসব না করে ধাক্কা দিতে দিতে চারু দাকে নিয়ে গেছে! চারু দা কি চোর? উনি একজন আর্টিস্ট।’

আরেক প্রত্যক্ষদর্শী লিটল ম্যাগাজিন করাতকলের সম্পাদক সাফী সমুদ্র বলেন, ‘লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক এখানে আড্ডা দেয়। তাদের অনেকেই সিগারেট খায়। বাংলা একাডেমির কাছে দীর্ঘদিন ধরে দাবি করা হচ্ছে যে, লেখকরা যেহেতু সিগারেট খায়, এর জন্য আলাদা একটা এলাকা করে দেন। বাংলা একাডেমি এটার গুরুত্ব দেয়নি। এখন ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দীর্ঘক্ষণ থাকলে বারবার বাইরে থেকে সিগারেট খেয়ে আসা সম্ভব হয় না।’

সাফী সমুদ্র আরো বলেন, প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টুকে ধরে উঠায়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কোনো কথা না বলে তাকে ধরে নেয়ার চেষ্টা করেছে পুলিশ। তখন উপস্থিত লেখক, পাঠক, সম্পাদক সবাই বাধা দেয়ার চেষ্টা করেছেন। তারপর তারা (পুলিশ) হুমকি দিয়েছে, প্রত্যেক লেখক, সম্পাদক যারা আছে, তাদের ধরে নিয়ে যাবে। এ কারণেই পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে।