করোনাভাইরাসের মধ্যে ডেঙ্গু যেন না ফেরে: হাইকোর্ট

করোনাভাইরাসের মধ্যে ডেঙ্গু যেন না ফেরে: হাইকোর্ট

দেশে নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যেই ডেঙ্গু নিয়ে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে আবারো সতর্ক করেছে হাইকোর্ট।

আদালত বলেছে, ‌ইতোমধ্যে বাংলাদেশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এই ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যদি কোনোভাবে করোনার সাথে ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব শুরু হয়, তখন কিন্তু মানুষের শেষ জায়গাটিও থাকবে না।

‘সুতরাং আপনারা সতর্ক হোন, মশা নিধনে মনোযোগী হোন। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যা যা করার দরকার তাই করেন।’

ঢাকার বায়ু দূষণ সংক্রান্ত একটি জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে বুধবার এমন নির্দেশনা আসে।

এ সপ্তাহের শুরুতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মত তিনজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট-আইইডিসিআর। আর গতবছর বাংলাদেশের বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছিল মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু।

ঢাকায় বায়ু দুষণ নিয়ে এক মামলায় আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়ে বুধবার হাই কোর্টে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সেখানেই ডেঙ্গু ও করোনাভাইরাসের প্রসঙ্গ আসে বলে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার জানান।

আদেশের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ধুলা দমাতে সিটি করপোরেশনের পানি ছিটানোর পদ্ধতি পর্যালোচনা করে আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেনি।

“গত বছর মৌসুম আসার আগেই দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে ডেকে আদালত ডেঙ্গু নিয়ে সতর্ক করেছিল, যাতে মশা নিধন সঠিকভাবে হয়। কিন্তু সেটি হয়নি। গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের কথা দুই সিটি করপোরেশনকে আবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আদালত।”

ঢাকার বায়ুমান উন্নয়ন ও অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তা নিয়ে গত ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ কে এম রফিক আহাম্মদের বক্তব্য শোনে আদালত।

সেদিন পরিবেশ অধিদপ্তরে এক মাসের মধ্যে ৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ বা পদায়ন করতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণায়লকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ ছাড়াও পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ রক্ষায় কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে সে বিষয়ে প্রতিবেদন দিতে বলা হয় সেদিন।

অনুমোদন ছাড়া টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধের নির্দেশ দিয়ে হাই কোর্ট থেকে এর বাস্তবায়ন নিয়েও প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, গাজিপুর ও মানিকগঞ্জে যেসব অবৈধ ইটভাটা এখনও বন্ধ করা হয়নি, সেগুলো বন্ধ করে দুই মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন চায় আদালত।

সে নির্দেশনা অনুযায়ী বুধবার আদালতে বাস্তবায়ন প্রতিবেদন উপস্থাপন করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

পাঁচ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ বা পদায়য়ের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণায়লয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরে চারজন ম্যাজিস্ট্রেটকে বদলি বা পদায়ন করা হয়েছে।

গত ১২ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি ফেব্রুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নাজমা নাহার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন উল্লেখ করে বলা হয়, কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ, ঢাকা কতোয়ালী সহকারী কমিশনার (ভূমি) সালমা খাতুন, মাদারীপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার প্রমথ রঞ্জন ঘটক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফয়জুন্নেছা আক্তার পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

আর টায়ার পোড়ানো বা ব্যাটারি রিসাইক্লিং বন্ধ, ইটভাটা বন্ধের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ু দূষণ রোধে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ মানিকগঞ্জে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, অনুযায়ী গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৪২৩টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করার পাশাপাশি ৯ কোটি ৬৫ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ আদায় করা হয়েছে।

ঢাকা জেলায় ৯৬টি, গাজীপুরে ২৩৩টি, নারায়ণগঞ্জে ৬১টি, মুন্সিগঞ্জে ১১টি ও মানিকগঞ্জে ২২টি অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা হয়েছে বলেও আদালতকে জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।

এছাড়া অবৈধ টায়ার পাইরোলাইসিস ও ব্যাটারি রিসাইক্লিং কারাখানার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে মোট ১৩টি অবৈধ কারখানার কার্যক্রম বন্ধ করার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা শহর ও তার আশেপাশের বায়ু দূষণ রোধকল্পে গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

তাছাড়া ক্ষতিকর কালোধোঁয়ায় দূষণ রোধ করতে বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়ে চলতি মাসে ৬টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌফিক ইনাম টিপু।

আগামী ২৯ মার্চ এ মামলাটির পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছে হাই কোর্ট।