স্বামীকে খুন করতে ২ লাখ টাকার চুক্তি করেন স্ত্রী

স্বামীকে খুন করতে ২ লাখ টাকার চুক্তি করেন স্ত্রী

পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে ঘর বাঁধার বড় বাধা ব্যবসায়ী স্বামী হুমায়ুন কবিরকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে স্ত্রী আমেনা খাতুন দুই লাখ টাকা চুক্তি করেছিলেন। খুনিচক্রকে তিনি এক লাখ টাকা অগ্রিমও দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি টাকা পরিশোধ করতে না পারায় কবিরকে হত্যা করেনি চক্রটি।

অপহরণের ৯ দিন পর হুমায়ূনকে একটি গোপন আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে বনানী থানা পুলিশ মঙ্গলবার রাতে তাকে উদ্ধার করে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে জুরাইন থেকে তার স্ত্রীর পরকীয়া প্রেমিক আমজাদ হোসেন দেওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য বেরিয়ে আসে।

আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও আমজাদ চাঞ্চল্যকর সব তথ্য জানায়।

বনানী থানার এসআই আবু তাহের যুগান্তরকে জানান, ভোলার লালমোহন থানার ফুলবাগিচা গ্রামের হুমায়ূন সাত বছর ওমানে ছিলেন। এ সুযোগে প্রতিবেশী আমজাদের সঙ্গে তার স্ত্রী আমেনার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ কারণে হুমায়ূন তিন বছর আগে দেশে আসেন। এরপর ঢাকায় তিনি সুপারির ব্যবসা শুরু করেন।

কারওয়ানবাজার থেকে সুপারি কিনে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকার দোকানে দোকানে তিনি তা সরবরাহ করেন এবং কড়াইল বস্তিতে বসবাস করেন। ১ মার্চ বিকালে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকা থেকে তিনি অপহৃত হন।

তার ছেলে নাজিউর রহমান বাবলু পরদিন বনানী থানায় জিডি করেন। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ আমেনার পরকীয়া প্রেমিক আমজাদের অবস্থান ঢাকায় নিশ্চিত করে। এরপর মঙ্গলবার রাতে জুরাইন এলাকা থেকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সে জানায়, হুমায়ূনকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করে শ্যামপুর থানার জুরাইন করিমুল্লাবাগ এলাকার আওলাদ ডাকাতের ডেরায় রাখা হয়েছে। এরপর ওইদিন মধ্যরাতে সেখানে অভিযান চালিয়ে হাত-পা ও চোখ বাঁধা অচেতন অবস্থায় হুমায়ূনকে উদ্ধার করা হয়। ওই বাসা থেকে একটি রিভলবার, দুই রাউন্ড গুলি ও দুটি ছুরি জব্দ করা হয়।

বনানী থানার ওসি নুরে আযম মিয়া যুগান্তরকে বলেন, এ ঘটনায় হুমায়ূনের ছেলে বাবুল বাদী হয়ে বুধবার বনানী থানায় মামলা করেন। মামলায় আমজাদ, আমেনা খাতুন, আওলাদ হোসেন ওরফে আওলাদ ডাকাত ও বাচ্চু মেম্বারসহ আরও ২-৩ জনকে আসামি করা হয়েছে। জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে বুধবার বিকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকি বিল্লাহর আদালতে আমজাদ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সে জানায়, আমেনার সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে তার পরকীয়ার সম্পর্ক চলে আসছিল। আমেনা তাকে বারবার বিয়ের জন্য চাপ দিত। স্বামী ও সন্তান থাকায় তাকে বিয়ে করতে সে রাজি ছিল না। কিছুদিন আগে আমেনা তাকে ডেকে স্থানীয় ইউপি মেম্বার বাচ্চুর কাছে নিয়ে যায়। সেখানে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে হুমায়ূনকে হত্যার চুক্তি হয়।

অ্যাকাউন্ট থেকে এক লাখ টাকা উত্তোলন করে আমেনা বাচ্চু মেম্বারকে দেয়। হুমায়ূনকে হত্যার পর বাকি এক লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল। বাচ্চু মেম্বার হুমায়ূনকে হত্যার জন্য আওলাদ ডাকাতকে দায়িত্ব দেন। চুক্তি অনুযায়ী ১ মার্চ হুমায়ূনকে মহাখালী ওয়ারলেস গেট এলাকা থেকে অপহরণ করে আওলাদ ডাকাত ও তার সহযোগীরা।

বাকি এক লাখ টাকার জন্য তারা আমেনাকে চাপ দিতে থাকে। অপরদিকে হুমায়ূনকে হত্যা করা হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে আমজাদকে ঢাকায় পাঠায় আমেনা। এরপর পুলিশ তাকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে।

এদিকে অপহৃত হুমায়ূনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, ১ মার্চ বিকাল ৪টার দিকে এক ব্যক্তি (আওলাদ) তার কাছে সুপারি কিনতে আসে। সে দুই হাজার টাকার সুপারি কেনে। এরপর সে জানায়, বাডডায় তার ম্যাডামের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান। সেখানে আরও সুপারি লাগতে পারে। তাই ম্যাডামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কথা বলে একটি সিএনজি অটোরিকশায় আমাকে তোলে। কিছুক্ষণ পরই আমি অচেতন হয়ে যাই। তার ছেলে বাবলু জানান, আমজাদ গ্রেফতার হয়েছে এমন খবর পেয়ে তার মা আমেনা গা-ঢাকা দিয়েছেন।

এমজে/