মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া

মুক্তি পাচ্ছেন খালেদা জিয়া

কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া।

বিতর্কিত এবং প্রহসনের মামলায় দেয়া সাজায় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দেয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ সরকার শর্তসাপেক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছয়মাসের জন্য তার সাজা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

দুইটি শর্তে তাকে মুক্তি দেয়া হচ্ছে বলে আইনমন্ত্রী জানিয়েছেন। সেগুলো হলো, এই সময়ে তাঁর ঢাকায় নিজের বাসায় থাকতে হবে এবং তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না।

তিনি বলেন, ''ঢাকাস্থ নিজ বাসায় থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করার শর্তে এবং এই সময় বিদেশে গমন না করার শর্তে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য আমি মতামত দিয়েছি। সেই মতামত এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে গেছে।''

''মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ হচ্ছে, আইনি প্রক্রিয়ায় এই দুই শর্তসাপেক্ষে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত রেখে তাকে মুক্তি দেয়ার জন্য।'' তিনি বলেন।

''বেগম খালেদা জিয়ার বয়স বিবেচনায়, মানবিক কারণে, সরকার সদয় হয়ে দণ্ডাদেশ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।''

যখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হবে, তখন থেকে এই ছয়মাস গণনা শুরু হবে।

এই ছয়মাস পরে কী হবে, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ''আগে তো ছয়মাস যাক, তার পরে দেখা যাবে।''

'এখানে বলা হয়নি যে, তিনি হাসপাতালে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা নিতে পারবেন না। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির ব্যাপারে তার কন্ডিশন অনুযায়ী দেখা যাবে।''

এই ঘোষণার পর বিএনপির মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ''সরকারের দিক থেকে কী বলা হচ্ছে, তা নিয়ে আমরা এখনো পরিষ্কার নই। এ নিয়ে আমরা নিজেরা আলোচনা করে আমাদের প্রতিক্রিয়া জানাবো।''

এর আগে বিদেশে চিকিৎসার জন্য মুক্তি চেয়ে স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিল তাঁর পরিবার।

মিসেস জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম বলেন, তারা তাদের চিঠিতে প্যারোলের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু লেখেননি।

বিএনপির মহাসচিব বলছেন, ''আশা করি ঠিক সময় মতো তিনি কারাগার থেকে বের হতে পারবেন। মুক্তির পর হাসপাতাল থেকে তাকে বাসভবনে নিয়ে আসা হবে। আমরা চিকিৎসকদের একটি প্যানেল তৈরি করেছি। তারাই খালেদা জিয়াকে চিকিৎসা দেবেন।''

তিনি বলেন, ''সরকাররে এই সিদ্ধান্তে দল ও নেতাকর্মীরা যেমন স্বস্তি বোধ করছেন, আবেগ কাজ করছে, পাশাপাশি তাদের মধ্যে একটি আতঙ্কও কাজ করছে এটা ভেবে যে এমন একটা সময়ে তাকে মুক্তির এই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, যখন করোনাভাইরাস নিয়ে একটি দুর্যোগ চলছে।''

মির্জা ফখরুল ইসলাম দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে দেশে-বিদেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির বর্ণনা তুলে ধরে বলেন, ''আপনারা হয়তো আবেগের বশবর্তী হয়ে তার কাছে যেতে চাইতে পারেন। কিন্তু এই অবস্থার প্রেক্ষিতে আবেগের বশবর্তী না হয়ে, ম্যাডামের স্বাস্থ্যের জন্য, সবার নিরাপত্তার জন্য সবাইকে দূরে থাকতে আহবান করবো।

"আলাদা থাকার বিষয়টিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।''

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মাহমুদ চৌধুরী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘‘খালেদা জিয়কে তার পরিবারের আবেদনে মুক্তি দেয়া হচ্ছে। বিএনপি মুক্তির আবেদন করেনি। তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখছি। এখন যেকোনো সময় তিনি মুক্তি পাবেন। তবে তাকে আরো আগে মুক্তি দেয়া উচিত ছিলো। কারণ কোনো অপরাধে নয়, রাজনৈতিক কারণে তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই দুর্যোগের সময় তাকে মুক্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ায় আমরা খুশি। এই দুর্যোগের ভেতরে এটা একটা রাজনৈতিক পরিবর্তন। আগেতো মানুষ বাঁচতে হবে। তারপর সব।’’

সাজানো এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দুই বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারে রয়েছেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

২০০৮ সালে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ মামলা দায়ের হয়।

দশ বছর পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মামলার রায়ে তার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হয়।

তবে পরে হাইকোর্ট সেই সাজা বাড়িয়ে দশ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেন। আরেকটি মামলায় তাঁর সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে।