আবাসন নেই, হাসপাতালেই এক ওয়ার্ডে দেড়শ নার্স!

আবাসন নেই, হাসপাতালেই এক ওয়ার্ডে দেড়শ নার্স!

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের এক সপ্তাহ পার হলেও এখনো আবাসন সুবিধা পাননি করোনা রোগীদের সেবা দেয়া বেশিরভাগ স্বাস্থ্যকর্মী। যারা পেয়েছেন তাদের থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে। এভাবে চলতে থাকলে আট দশদিন পর চিকিৎসক বা নার্স পাওয়া কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

হোটেল মালিকরা জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগই করেনি।

বিশ্বব্যাপী চলা কোভিড নাইনটিন যুদ্ধে সম্মুখ সারিতে যুদ্ধ করছেন চিকিৎসক ও নার্সসহ হাজার হাজার স্বাস্থ্যকর্মী। সেবা দিতে গিয়ে দেশে এ পর্যন্ত প্রাণ দিয়েছেন একজন চিকিৎসক। আক্রান্ত হয়েছেন দেড় শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী।

স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় গত ১১ এপ্রিল রাজধানীর মোট ২০টি অভিজাত আবাসিক হোটেলের প্রায় ৬শ রুমের তালিকা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। যেখানে থেকে স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে যাওয়া আসা করার কথা। তবে পরিচয় গোপন রেখে স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেন, উত্তরা ও মিরপুরে মাত্র তিনটি হোটেলে কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মীর থাকার ব্যবস্থা হলেও বাকিরা বাসা থেকেই যাওয়া আসা করছেন।

শেক রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালের পরিচালক বলেন, ‘এখন পর্যন্ত কোনো তেমন কোনো হোটেল পাইনি। কবে পাবো তাও বলতে পারবো না।'

ভুক্তভোগী এক নার্স মোবাইল ফোনে বলেন, ‘কুর্মিটোলার দেড়শ নার্স হাসপাতালের একটা ওয়ার্ডের মধ্যে থাকে।’

ভুক্তভোগী এক নার্সিং স্টাফ মোবাইল ফোনে বলেন, ‘প্রত্যেকটা জায়গায় যেসব নার্স আছে, যারা সেবা দিচ্ছেন, তাদের টোটালি আলাদা কোনো জায়গায় রাখা হচ্ছে না। তারা পরিবারের কাছে যাচ্ছে, বাজার ঘাটে যাতায়াত করছে। আমাদের জীবনেরও একটা মায়া আছে। যার কারণে আমরা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।’

আর যারা হোটেল পেয়েছেন তারা বলছেন, করোনা পজেটিভ পেলে তাদেরকে হোটেল থাকতে দেয়া হচ্ছে না।

ভুক্তভোগী এক চিকিৎসক মোবাইল ফোনে বলেন, ‘আমার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সকালে অ্যাম্বুলেন্স আসবে, তুমি বাসায় অথবা হসপিটালের তিন তলায় চলে যেও। এখন আমার বাসায় ছোট ছোট তিনটা বাচ্চা আছে, আমরা স্ত্রী আছে। এখন এটা আমরা জন্য একটা অমানবিক আচরণ হয়।’

ভুক্তভোগী এক নার্স বলেন, ‘আমরা যদি এখন একরুমে তিনজন না থাকি। তাহলে বাসায় চলে যেতে হবে। আমরা সবাই এ পজেটিভ রোগী নিয়ে কাজ করি বিধায় বাসায় যাওয়াও তো আমার পরিবারের জন্য নিরাপদ নয়।’

ভুক্তভোগী এক চিকিৎসক বলেন, ‘এই দায়িত্বহীনতার কোনো জবাব নাই। এখন যে অবস্থা, তাতে হয়তো আগামী ৭ দিন ডাক্তার পাওয়া যাবে..।’

হোটেল মালিক সমিতি বলছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কেউ যোগাযোগ না করায় তারা এখনো কোনো প্রস্তুতি শুরুই করেননি।

বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল হোটেল এসোসিয়েশনের সচিব মহসিন হক হিমেল বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কেউ যোগাযোগ না করায় এখনো কোনো প্রস্তুতি শুরুই করা হয়নি। এমন কি কোনো চিঠিও আসেনি।’

বিষয়টি নিয়ে সময় সংবাদের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের সঙ্গে।

স্বাস্থ্য অধিদফতর মহাপরিচালক আবুল আজাদ বলেন, ‘আপনারা ভাই আছেন অন্য কাজ করেন তো... ডাক্তাররা কোথায় থাকবে এটা দেখার দরকার নাই। মানুষ রাস্তায় বের হবে না, ওই গুলো দেখেন। রোগী বেড়ে যাচ্ছে.. আর ডাক্তার কোথায় থাকবে সেইটা আমরা দেখছি। আপনারা রোগী যাতে হাসপাতালে না আসে সেই ব্যবস্থা করেন।'

করোনা আক্রান্ত বিশ্বের প্রায় সব দেশের অভিজাত হোটেলগুলো এখন ব্যবহার হচ্ছে কোভিড ১৯ যোদ্ধাদের আবাসস্থল হিসেবে। সেই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাংলাদেশেও। তবে স্বাস্থ্য কর্মীদের প্রত্যাশা এই মহামারী করোনা যুদ্ধের সময় অন্তত যাতে এই উদ্যোগটি কাগজে কলমে লোক দেখানো না হয়ে বাস্তবিক অর্থে কার্যকর হয়।

এমজে/