‘লকডাউনে’ জেনেভা ক্যাম্পে ১৩ জনের মৃত্যু

‘লকডাউনে’ জেনেভা ক্যাম্পে ১৩ জনের মৃত্যু

ঢাকার মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পে কোভিড-১৯ রোগের লক্ষণ নিয়ে অন্তত ১৩ জনের মৃত্য হয়েছে; কিন্তু এটা ক্যাম্পবাসী যেমন চেপে গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও তা খতিয়ে দেখেনি।

গত ২৬ মার্চ লকডাউনের পর ঝুঁকি মাথায় রেখে আটকে পড়া পাকিস্তানিদের এই ক্যাম্পের সবগুলো ফটক বন্ধ করা হলেও ভেতরের জীবনযাত্রায় কোনো পরিবর্তন না হওয়ায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের শঙ্কা থেকেই গিয়েছিল।

লকডাউনের ৩৬ দিন গড়ানোর পর শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহে এক নারী ও শিশুসহ অন্তত ১৩ ক্যাম্পবাসী মারা গেছেন।

ওই এলাকায় দায়িত্বরত কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও ক্যাম্পবাসী সূত্রে জানা যায়, গত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝিতে দুদিনের ব্যবধানে দুই ভাই মারা যাওয়ার মধ্য দিয়ে জেনেভা ক্যাম্পে মৃত্যু শুরু হয়। এদের একজনের বয়স ৩০ বছর অন্যজনের বয়স ৫০। এরপরে আরও কয়েকজনের মৃত্যূ ঘটে।

এদের কেউ কেউ হাসপাতালে গেলেও সবাই যাননি। কারও দাফন হয়েছে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য নির্ধারিত খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে। কারও দাফন হয়েছে রায়েরবাজার কবরস্থানে।

জেনেভা ক্যাম্পের ‘নন লোকাল রিলিফ কমিউনিটি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসএম সীমা কোরাইশী শনিবার গণমাধ্যমকে বলেন, ক্যাম্পে গত ১৫ এপ্রিল থেকে এ পর্যন্ত ১৩ জন মারা গেছেন। এদের সবার মধ্যে ‘করোনা উপসর্গ’ ছিল।

“যাদের হাসপাতালে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে, তাদের কাউকে দাফনের দুই-তিন দিন পর হাসপাতাল থেকে ফোনে করোনাভাইরাস পজিটিভ বলে পরিবারকে জানানো হয়েছিল।”
যে ১৩ জন মারা গেছে, তাদের অধিকাংশের বয়স ৫০ বছরের বেশি। একজনের বয়স ৯০ বছর বলেও জানা গেছে। সীমা কোরাইশী বলেন, আট বছর বয়সের এক শিশুও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ায় তার লাশ পরিবারের সদস্যদের দেওয়া হয়নি। পরে খিলগাঁও তালতলা কবরস্থানে স্বেচ্ছাসেবীরা দাফন করেছে বলে তিনি শুনেছেন।
সীমা বলেন, “প্রায় সবাই তথ্য গোপন করে রাখতে চান। করোনা উপসর্গ শ্বাসকষ্ট, জ্বর, গলাব্যথা নিয়ে কেউ কেউ বাসায় মারা যান। জানাজানি হওয়ার ভয়ে হাসপাতালে যাননি।

“বোঝেনই তো করোনা আক্রান্ত হলে বা কারো করোনাভাইরাস উপসর্গ থাকলে কেউ বলতে চায় না। আর মৃত্যু হলে প্রতিবেদন পাওয়ার আগেই দাফন হওয়ায় পুরো বিষয়টি ঢাকা পড়ে যায়।”

জেনেভা ক্যাম্পের একজন বাসিন্দা বলেন, “করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি। যারা মারা গেছে, তাদের শ্বাসকষ্টসহ অন্য রোগ ছিল।” বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, তাদের জানামতে জেনেভা ক্যাম্পে দুজন কোভিড-১৯ রোগী রয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর কোনো তথ্য তারা জানেন না।

তিনি বলেন, “(মৃত্যুর কথা) কেউ না বললে বা জানালে তো আমাদের জানার কোনো উপায় নেই। “তবে অফিসিয়াল তথ্য হচ্ছে, এই ক্যাম্পে দুজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী আছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে।”

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় অবস্থিত এই জেনেভা ক্যাম্প। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ হাসান নূর ইসলাম বলেন, ক্যাম্পে কিছু মৃত্যুর খবর তিনিও শুনেছেন। তবে তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না, তা তার জানা নেই।

“এর মধ্যে শিশুটি হয়তবা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। তবে প্রতিবেদন হাতে না পেলে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাবে না।”

ক্যাম্পে ‘দুই থেকে তিনজন’ করোনাভাইরাসের রোগী থাকার কথা জানিয়ে কাউন্সিলর বলেন, তাদের খোঁজ-খবর রাখা হচ্ছে। রোগী পাওয়ায় সংক্রমণ এড়াতে “এখানকার একটা স্কুলকে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার করা হয়েছিল। ২০টি বিছানার ব্যবস্থাও করা হয়। কিন্তু কেউ মানেনি।

“জনবসতি এই জেনেভা ক্যাম্পে যেখানে একটি ঘরে পরিবারের সদস্যরা তিন শিফট করে ঘুমাতে যায়। সেখানে কোনো নিয়মই চলতে চায় না।”

গজনবী রোড, বাবর রোড, শাহজাহান রোড, হুমায়ুন রোড ঘিরে অবাঙালিদের জন্য গড়ে উঠা এই জেনেভা ক্যাম্পে ১০ হাজারের মতো পরিবার থাকে। কোনো পরিবারেই চারজনের কম সদস্য নেই।

এই ক্যাম্পের ভেতরে অপরিকল্পিতভাবে প্রচুর উঁচু ভবন গড়ে উঠেছে। আট-দশ হাত কক্ষগুলোতে ঠাসাঠাসি করে চার-পাঁচজন করে থাকেন। কোনো কোনো ঘরে ‘শিফটিং’ করেও ঘুমানো হয়। ফলে ঘরে থাকার উপায়ও নেই।

এমজে/