নোয়াখালীতে ‘গণধর্ষণ’ মামলা করতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ ওসির বিরুদ্ধে

‘আমার স্ত্রীর ইজ্জতও গেল, আমার টাকাও গেল’

‘আমার স্ত্রীর ইজ্জতও গেল, আমার টাকাও গেল’

নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলায় স্বামীর সামনে থেকে গৃহবধূকে (২০) তুলে নিয়ে গণধর্ষণের ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তবে পুলিশের ভাষ্য তারা পলাতক।

একই সঙ্গে গণধর্ষণ মামলা নথিভুক্ত করতে কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির্জা মোহাম্মদ হাছান টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।

উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়নে ঘটনা এ ঘটনার মামলায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে প্রতিদিন অভিযান পরিচালনা করছে দাবি করেছে পুলিশ। তবে মামলাকারীর পরিবার বলছে, এমন কোনো অভিযান চলছে না। যদি তাই হতো, থানায় মামলা দায়েরের জন্য ভয়ঙ্কর পরিনতি ভোগ করার হুমকি পেতে হতো না। তারা আতঙ্কে আছেন।

গণধর্ষণ মামলার বাদীর (ভুক্তভোগী নারীর স্বামী) জানান, ঘটনার পরদিন ৪ জুন সকালে কবিরহাট থানায় স্ত্রীর গণধর্ষণের ঘটনার মামলা করতে যান তিনি। মামলার আসামি নবগ্রামের আব্দুস সাত্তার, সোহেল, আবুল কালাম, রিপন, মাসুম, গিয়াস উদ্দিন ও নূর আলম। এ সময় ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান মামলা না নিয়ে শুধু শ্লীলতাহানীর চেষ্টার একটি অভিযোগ নেন। পরে বিষয়টি জেনে যায় গণমাধ্যমকর্মীরা। তাদের হস্তক্ষেপে গত ৬ জুন মামলা রুজু করেন ওসি। মামলাটি নথিভুক্ত করতে তার (বাদী) কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা নেন।

ওসির বিরুদ্ধে আসামি পক্ষের কাছ থেকেও টাকা নেওয়ার অভিযোগ জানান ওই ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘মামলার আসামিদের কাছ থেকে তিনি (ওসি) টাকা নিয়ে এখন গড়িমশি করছেন। তিনি আসামিদের ধরছেন না।

আফসোস করে তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীর ইজ্জতও গেল, আমার টাকাও গেল। কিন্তু ঘটনার ৯ দিন পেরিয়ে গেলেও কোনো আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি।’

ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী আরো জানান, গত সোমবার বিকেলে মামলার আসামি আবুল কালাম, গিয়াস ও সোহেলকে প্রকাশ্যে ঘোরাফেরা করতে দেখেন তিনি। এরপরই ওসিকে ফোন করে তাদের অবস্থান বর্ণনা করেন। কিন্তু ওসি মির্জা মোহাম্মদ ‘ধরছি, ধরবো’ বলে কালক্ষেপণ করছেন।

আসামিরা উন্মুক্ত ঘোরাফেরার করায় তিনি ও তার পরিবারের সবাই আতঙ্কে আছেন জানিয়ে বাদী বলেন, ‘তারা (আসামিরা) মুঠোফোনে আমাকে মামলা করায় ভয়ঙ্কর পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকার হুমকি দিয়েছে। স্ত্রীর ধর্ষণ মামলা করে এখন আমি চরম বেকায়দায় রয়েছি।’ তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিও জানান ভুক্তভোগীর স্বামী।

টাকা নেওয়া ও আসামি না ধরার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে কবিরহাট থানার ওসি মির্জা মোহাম্মদ হাছান বলেন, ‘অভিযাগ করতেই পারে, তবে তা কতটুকু সত্য তা দেখা উচিত। আসামিরা এলাকায় নেই। তাই তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তবে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারে একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে।’

এ ব্যাপারে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘কোনো মামলা রেকর্ড করতে পুলিশের টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। তার ওপর ধর্ষণ মামলার বাদীর কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যদি এমন ঘটনা ঘটেই থাকে, তবে ওসির বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ জনগণের সেবক ও রক্ষক। এখানে রক্ষক হয়ে কেউ ভক্ষকের ভূমিকা পালন করলে তাকে কঠোর পরিণতি ভোগ করতে হবে।’

প্রসঙ্গত, গত ৩ জুন বিকেলে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চর বৈশাখী গ্রাম থেকে জমি কেনার উদ্দেশ্যে স্বামীকে নিয়ে কবিরহাট উপজেলার পূর্ব নবগ্রামে স্থানীয় এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান ওই গৃহবধূ। তারা সেখানে রাতে অবস্থান করেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় সমাজ কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল কালামের নেতৃত্বে ৬-৭ জন গৃহবধূর আত্মীয়ের বাড়িতে হানা দেন। ঘরে ঢুকেই ওই দম্পতির মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক থাকার কথা বলে তাদের বিয়ের কাগজপত্র দেখতে চান তারা। এক পর্যায়ে তারা ওই দম্পতিকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে দূরে নিয়ে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেন।

এ সময় গৃহবধূর স্বামী ও এক আত্মীয়কে মারধর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। আব্দুস সাত্তার গৃহবধূকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তার মেয়ের বাড়িতে নিয়ে যান। এ ঘটনার পর রাত ১২টার দিকে গৃহবধূকে নেওয়ার জন্য তার খালাতো ভাই ও তার স্ত্রী এবং স্বামী এসেছেন বলে ঘর থেকে বের করে স্থানীয় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে (বেড়ি বাঁধ) নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নবগ্রামের আব্দুস সাত্তার, সোহেল, আবুল কালাম, রিপন, মাসুম, গিয়াস উদ্দিন ও নূর আলম তাকে ধর্ষণ করেন।