মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের আবারো বৈধতা দেয়ার চিন্তা

মালয়েশিয়ায় অবৈধ শ্রমিকদের আবারো বৈধতা দেয়ার চিন্তা

মালয়েশিয়া সরকার দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশী শ্রমিকদের কিভাবে আবারো বৈধতা দেয়া যায় সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে। যেখানে মধ্যেপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমানসহ অন্যান্য দেশ থেকে বৈধ-অবৈধ শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে, সেখানে মালয়েশিয়া সরকার করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মহামারীর সময়ে দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশী শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু করেছে।

মালয়েশিয়ার যেসব নিয়োগকারী কোম্পানি করোনাভাইরাসের কারণে অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়ে শ্রমিক রাখার সমক্ষতা হারিয়েছে, তাদের যাতে দেশে ফেরত না পাঠিয়ে মালয়েশিয়ায় অন্য কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ দেয়ার লক্ষ্যে স্থানান্তর করা যায় (ট্রান্সফার) সে ব্যাপারে দেশটির লেবার মিনিস্ট্রি নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর ফলে চাকরি হারানো লাখ লাখ বাংলাদেশীসহ বিদেশী শ্রমিককে আর মালয়েশিয়া থেকে নিজ দেশে ফিরতে হচ্ছে না বলে মনে করছে দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনসহ অন্যান্য দেশের দূতাবাস সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল সোমবার মালয়েশিয়ার ব্যবসায়ী কমিউনিটির একাধিক নেতা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি শুরুতে আতঙ্ক ছড়ালেও মালয়েশিয়ান সরকারের কঠোর লকডাউন পরিকল্পনা মানার কারণে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে এই ভাইরাসের কারণে মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নাজুক অবস্থায় চলে গেছে। ইতোমধ্যে দেশটিতে থাকা নামীদামি কোম্পানিসহ বহু কোম্পানি দেউলিয়া হয়েছে। অনেক কোম্পানি বন্ধ হয়েছে। এতে এসব কোম্পানিতে কর্মরত লাখ লাখ বিদেশী (বৈধ-অবৈধ) শ্রমিক চাকরি হারিয়ে এখন বেকার হয়ে পড়েছেন। এদের অনেকে এখন খুব কষ্টের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এমতাবস্থায় মালয়েশিয়ার লেবার (শ্রম) মিনিস্ট্রি থেকে চাকরি হারিয়ে বেকার হওয়া বিদেশী শ্রমিকদের বিষয়ে সুসংবাদের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে যে, তাদেরকে অন্য কোম্পানিতে স্থানান্তর হওয়ার সুযোগ দিয়েছে সরকার। এখনো সত্য মিথ্যা জানি না। যদি এমনটি হয় তাহলে তো অনেক ভালো হবে। এসব শ্রমিকদের দেশে ফেরত যেতে হবে না।

এক প্রশ্নের উত্তরে একজন ব্যবসায়ী জানান, শুনছি আবারো মালয়েশিয়া সরকার অবৈধ শ্রমিকদের বৈধতা (রি হায়ারিং) দেয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেছে। তবে এটি কিভাবে এবং কবে থেকে শুরু হতে পারে সেটি আমরা জানতে পারিনি।

গতকাল সোমবার বিকেলে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ. শহীদুল ইসলাম এর সাথে এসব বিষয়ে বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠানোর পরও তিনি কোনো উত্তর দেননি। তবে হাইকমিশনের ঊর্ধ্বতন একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ইতোমধ্যে মালয়েশিয়ায় বহু কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেছে। অনেকগুলো বন্ধের পথে রয়েছে। তাহলে বেকার হওয়া শ্রমিকদের কী হবে ? তারা কি দেশে ফেরত চলে যাবে? এই প্রক্রিয়ায় আরো অনেক দেশের শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে দেশটিতে। এরমধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। এই অবস্থায় মালয়েশিয়ার লেবার মিনিস্ট্রির সাথে শ্রমিক আমদানি করা দেশগুলোর দূতাবাস ও হাইকমিশনের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ওই বৈঠকের মধ্যমনি বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ. শহীদুল ইসলাম লেবার মিনিস্ট্রিকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, এসব শ্রমিকদের দেশে ফেরত না পাঠিয়ে অন্য চালু থাকা কোম্পানিতে ট্রান্সফারের সুযোগ দেয়া হলে তখন অসহায় শ্রমিকদের আর দেশে ফিরে যেতে হবে না। বিষয়টি বিবেচনা করে সেদেশের লেবার মিনিস্ট্রি তিন দিন আগে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে জানায়, বন্ধ হওয়া কোম্পানির শ্রমিকরা অন্য কোম্পানিতে স্থানান্তর হতে পারবে। মূল কথা হচ্ছে যে সমস্ত নিয়োগকর্তা শ্রমিক রাখার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে তাদেরকে অন্য কোম্পানিতে স্থানান্তর করা যাবে। এ নিয়ে শ্রমিকরা স্থানান্তরের নিয়ম নেমে লেবার মিনিস্ট্রিতে আবেদন করতে পারবে। লেবার মিনিস্ট্রি অফিসিয়ালি সিদ্ধান্তটি নিলেও আমাদেরকে এখনো জানায়নি। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক মালয়েশিয়ান চাকরি হারিয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশী শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। এ জন্য মন্ত্রণালয় ও হাইকমিশনের প্রচেষ্টায় অবশেষে আমরা শ্রমিকদের দেশে ফেরত পাঠানোর কার্যক্রম ঠেকাতে সক্ষম হয়েছি। নতুন করে মালয়েশিয়ায় রি-হায়ারিং সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে তারা বলেন, এ নিয়ে এখনই মিডিয়াতে কথা বলার সময় আসেনি। তবে আমাদের সব ধরনের কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যাচ্ছি।

উল্লেখ্য এর আগে পৌনে তিন লাখ অবৈধ বাংলাদেশী শ্রমিককে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন মাহাথির মোহাম্মদ সরকার। এবারো বর্তমান সরকার কয়েক লাখ অবৈধ বিদেশী শ্রমিককে রি-হায়ারিং এর মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ দিতে যাচ্ছে। এমনটি মনে করছেন হাইকশিনের দায়িত্বশীলরা।

এমজে/