মৃত্যুর চার দিন পর করোনা পজেটিভ, নমুনা দেওয়ার দিনেই স্ত্রীর মৃত্যু

মৃত্যুর চার দিন পর করোনা পজেটিভ, নমুনা দেওয়ার দিনেই স্ত্রীর মৃত্যু করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত ব্যক্তি আলী হোসেন সরদার (৭৫) ও উপসর্গ নিয়ে মৃত তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনও (৬৫)

যশোরের চৌগাছায় করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত ব্যক্তি আলী হোসেন সরদার (৭৫)। গত রবিবার তিনি করোনা উপসর্গ নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

এর চার দিন পর গতকাল বৃহস্পতিবার তার ছেলে আব্দুর রাজ্জাকের মোবাইল ফোনে এসএমএস আসে তার বাবা করোনা পজেটিভ ছিলেন। দুপুরেই পরিবারের অন্য পাঁচ সদস্যের নমুনা নেওয়া হয়। পরে এদিন রাতেই আলী হোসেন সরদারের স্ত্রী সুফিয়া খাতুনও (৬৫) করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন।

শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোছা. লুৎফুন্নাহার লাকি। তিনি জানান, আলী হোসেন সরদার ও সুফিয়া খাতুন উপজেলার ধুলিয়ানী ইউনিয়নের মুকুন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা।

আলী হোসেন সরদারের ছেলে গ্রাম্য ডাক্তার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে বাবার জ্বর ছিল। এরপর জ্বর সেরে যায়। পরে আবার জ্বর আসলে ১১ জুলাই বেলা ১২ টার দিকে চৌগাছা শহরের একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। তখন বাবার শ্বাসকষ্ট থাকায় অক্সিজেন দেওয়ার পর তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি অবস্থায় পরদিন ১২ জুলাই তিনি মারা যান।’

তিনি বলেন, ‘তার মৃত্যুর দুদিন পর মোবাইল ফোনে জানানো হয় আমার বাবা করোনা পজেটিভ ছিলেন। এরপর গতকাল আমার মোবাইল ফোনে এসএমএস (তার করোনা পজেটিভ হওয়ার রিপোর্ট) আসে। গতকালই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার তত্বাবধানে দুপুরের আগে আমাদের পরিবারের অন্য পাঁচজনের নমুনা নেওয়া হয়। এরপর রাত ৯টার দিকে আমার মা মারা যান।’

এদিকে স্বামীর করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসার পর করোনা উপসর্গে সুফিয়া খাতুনের মৃত্যু হওয়ায় গ্রামের কোনো ব্যক্তি তার লাশ দেখতেও আসেনি। লাশ নিয়ে সারারাত ছেলে আব্দুর রাজ্জাকসহ পরিবারের সদস্যরা বসে ছিলেন। মাত্র চার দিন আগে পরিবার প্রধানের মৃত্যু করোনায় হওয়ায় পরিবারের সদস্যরাও মৃতদেহের পাশে যাওয়ার সাহস পাচ্ছিলেন না।

পরে শুক্রবার সকালে চৌগাছা পৌর মেয়রের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবী রক্তদান সংস্থা ‘অগ্রযাত্রা’র সদস্যরা ওই গ্রামে যান। অতঃপর সুফিয়া খাতুনের মেয়ে তার মায়ের লাশের গোসল দেওয়ার পর ‘অগ্রযাত্রা'র সদস্যরা সকাল সাড়ে আটটায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ‘অগ্রযাত্রা’র একজন সদস্য জানান, আতঙ্কের কারণে আমরা যাওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রামের একজনও মরদেহের পাশে আসেনি। গ্রামের কেউ কবর খুঁড়তেও চাচ্ছিলেন না। পরে গ্রামের মসজিদের ইমামের অনুরোধে কবর খোঁড়া হয়। স্বেচ্ছাসেবীরা জানাজা পড়তে দাঁড়ালে গ্রামের কয়েকজন এসে জানাজায় অংশ নেন।

তিনি বলেন, এর আগে ১২ জুলাই আলী হোসেন মারা গেলে গ্রামের মানুষজন স্বাভাবিকভাবেই তার দাফনে অংশ নেয়। পরে তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসায় গ্রামের মানুষজন আতঙ্কিত হয়ে তাদের প্রায় একঘরে করে রেখেছেন। এমনকি গ্রামেই সংরক্ষিত মহিলা মেম্বারের বাড়ি হলেও তিনিও আসেননি।