গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় বিএনপি

গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় বিএনপি

বাংলাদেশে গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় বিএনপি। আন্তর্জাতিক গুম দিবস উপলক্ষে বিএনপির উদ্যোগে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই দাবি জানান।

তিনি বলেন, ‘আজকে প্রায় ৩৫ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা, আজকে এক লক্ষের উপরে মামলা এবং মারা গেছেন ২৬‘শর উপরে, আর ৬০৩ এর উপরে গুম হয়ে গেছে, ৮৪২ জন মারা গেছেন। এই সব তথ্য ডকুমেন্টেড যারা রিপোর্ট করেছেন তাদের, আনডকুমেন্টেড অনেক আছে। এটা সম্পূর্ণ তথ্য নয়, অনেক তথ্য আছে যেটা আমাদের কাছে নেই।’

‘আমরা জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কা্ছে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, আমরা এসব ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্ত চাই। এজন্য তাদের বাংলাদেশে গুম-বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনাবলী তদন্তে একটি জুডিশিয়াল ইনকুয়ারী কমিশন গঠন করা উচিত।’

২০০৯ সাল থেকে ‘গুম’ হওয়ার ঘটনাসমূহ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে সংবাদ ব্রিফিং এবং এর খসড়া জাতিসংঘের কাছে প্রেরণের কথাও উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, ‘এই ঘটনাগুলো সম্পর্কে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে সংবাদ সম্মেলন করে ব্রিফিং করেছি। আমাদের দলীয় প্রধান এর খসড়া জাতিসংঘকে পাঠিয়েছেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক কোনো অ্যাকশন এখন পর্যন্ত নেয়া হয়নি।’

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘আমরা আজকে এক কঠিন সময় পার করছি। এই সময় আমাদেরকে রক্ষা করবার সময়, এই সময় আমাদের গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার সময়। এই সময় আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবার সময়, আমাদের রক্তের বিনিময় স্বাধীনতাকে রক্ষা করবার সময়।’

‘বাংলাদেশ এখন সম্পূর্ণভাবে একটি গণতন্ত্রহীন, ফ্যাসিবাদী একনায়কতন্ত্র একটা দেশে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আসুন আমরা সেই লক্ষ্যে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করব। নিজেদের মধ্যে ছোট-খাটো বিভেদ ভুলে গিয়ে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই।’

তিনি বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানে প্রফেসর শাহিদুজ্জামান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তুলে ধরেছেন। এটা ভালোভাবে তদন্ত হওয়া উচিত। এই ঘটনা গুলোর সাথে বাইরের কোনো দেশ জড়িত কিনা এবং বাইরের কোনো দেশ আমাদের দেশের কোনো নাগরিককে সে যে দলেরই হোক তাদেরকে…যে খবরগুলো এসছে সেই খবরগুলো যদি সত্য হয় যে, তাদেরকে তুলে নিয়ে যায়। এটা অত্যন্ত ভয়াবহ চিত্র।’

‘তাই যদি হয়ে থাকে এদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব সবই বিপন্ন।আমরা জানি যে, এদেশের মানুষ তারা লড়াই করে স্বাধীনতা এনেছে, তারা লড়াই করে গণতন্ত্র এনেছে এবং লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তারা রক্ষা করবে।’

দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষায় দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সংগ্রাম ও ত্যাগের কথাও তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

‘এদেশের মানুষ আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে প্রতীক হিসেবে দেখে। এখনো হাজার হাজার মহিলা তার মুক্তির জন্যে, তার সুস্বাস্থ্যের জন্য রোজা রাখে, দোয়া করে। আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ উঠে দাঁড়াবে, তারা তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতাকে ফিরিয়ে আনবে, হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবে, হারিয়ে যাওয়া অধিকারগুলোকে তারা ফিরিয়ে আনবে।’

তিনি বলেন, ‘যে সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নয়, যে সরকার অস্ত্রের জোরে রাষ্ট্রযন্ত্রগুলোকে ব্যবহার করে নির্বাচনের আগের রাতে ক্ষমতা দখল করে , পার্লামেন্ট দখল করে নিয়েছে সেই সরকারের ওপর কোনো দায়িত্ববোধ থাকতে পারে না, তাদের কোনো দায়িত্বশীলতা নেই। সেজন্য আজকে কোনো ঘটনার তদন্ত হয় না।’

‘যতক্ষণ পর্যন্ত না পত্র-পত্রিকাগুলো সামনে নিয়ে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে না। দুর্ভাগ্য আমাদের যে, মেজর সিনহা যখন তাকে নির্মমভাবে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে অন দ্যা স্পট গুলি করা হলো, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং করা হলো তখন অনেকেই কথা বলেছেন। তার আগে যে রাজনৈতিক কারণে শুধু নয়, সম্পূর্ণ অন্য কোনো কারণ নেই, তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই, কেউ কখনো কোনো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত নাই তাদেরকে তু্লে নিয়ে গিয়ে যখন খুন করে ফেলা হয়েছে অথবা হত্যা করা হয়েছে তখন কিন্তু আমাদের দুঃখজনকভাবে মিডিয়া সেভাবে সোচ্চার হয়নি।’