হাজী সেলিমের নামে ৮ বিঘা

জমি ফিরে পেতে সোনারগাঁয়ে ১০ ব্যক্তির আবেদন

জমি ফিরে পেতে সোনারগাঁয়ে ১০ ব্যক্তির আবেদন

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁর মেঘনাঘাটের ইসলামপুর এলাকায় আট বিঘা জমি ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী সেলিম জোর করে দখল করে নিয়েছেন-এমন অভিযোগ স্থানীয় ১০ ব্যক্তির।

তারা জমি ফিরে পেতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। বুধ ও বৃহস্পতিবার তারা এসব আবেদন করেন।

ভুক্তভোগী ওইসব সাধারণ মানুষের অভিযোগ, উপজেলার মেঘনা শিল্পনগরীর ইসলামপুর এলাকায় ২০১০ সালে হাজী সেলিম ও তার সহযোগীরা প্রায় ৮ বিঘা জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে।

হাজী সেলিম তার কেনা জমি ও সরকারি খাস জমিতে বালু ভরাট করার অজুহাতে তাদের ১০ জনের এই জমিতেও বালু ভরাট করে তা দখলে নিয়ে নেয়। পরে ওই জমির চারপাশে দেয়াল নির্মাণ করে সেখানে টাইগার সিমেন্ট কারখানা এলাকার অধিভুক্ত করেন।

তাদের জমি দখলমুক্ত করতে হাজী সেলিম ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে এলাকায় মানববন্ধন, প্রশাসনের ঊধ্বর্তন মহলে আবেদন ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও কোনো ফল পায়নি।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে যৌথভাবে আবেদন করেন সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের চররমজান সোনাউল্লাহ মৌজার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা-মো. মনির হোসেন ভূঁইয়া, মো. হোসেন আলী, মো. শরীফুল ইসলাম, মো. মজিবুর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম, মো. শাহজাহান আলী, মো. মাজহারুল ইসলাম, আলী ইসলাম, আবদুল আজিজ ও আনন্দ ব্যাগ মিলস লি. কর্তৃপক্ষ।

ওই আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, ‘আমরা সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামের অধিবাসী। আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি ভোগদখল করে আসছিলাম।

বিগত ২০১০ সালে মদিনা গ্রুপের মালিক হাজী সেলিম তার নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনীর দ্বারা আমাদের বাড়িঘর ও জমি জোরপূর্বক ভাংচুর করে দখল করে নেয় এবং উক্ত জায়গায় বাউন্ডারি দেয়াল নির্মাণ করে। আমরা গ্রামের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ।

সন্ত্রাসী বাহিনীর ক্রমাগত হুমকির কারণে জীবনের ভয়ে আমরা পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে আইনের আশ্রয় নিতে পারিনি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমান সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে সরকার যেভাবে অন্যায়-অত্যাচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা দেখে আমরা আশান্বিত হয়েছি। আমরা আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি ফেরত পেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি।’

আবেদনে মো. মনির হোসেন ভূঁইয়া গংয়ের চররমজান সোনাউল্লাহ মৌজার আরএস (খতিয়ান নং-৫০৮) ২৯৫৫, ৩০৮১, ৩০৮২, ৩৪১৫ দাগে ৭২.৪৮ শতাংশ, মো. হোসেন আলী ভূঁইয়ার আরএস (খতিয়ান নং-২৯৩) ৩০৭৯ ও ৩০৮০ দাগে ১১ শতাংশ, মো. শরিফুল ইসলামের আরএস (খতিয়ান নং-২৯৩) ৩০৭৯ ও ৩০৮০ দাগে ২ শতাংশ, মো. মজিবুর রহমানের আরএস (খতিয়ান নং-২৯৩) ৩০৭৯ ও ৩০৮০ দাগে ৬ শতাংশ, সাইফুল ইসলামের আরএস (খতিয়ান নং-২৯৩) ৩০৭৯ ও ৩০৮০ দাগে ৪ শতাংশ, মো. শাহজাহান আলীর আরএস (খতিয়ান নং-২৪৬) ২৯৪৫ ও ৩০৮৮ দাগে ৮ শতাংশ, মো. মাজহারুল ইসলামের আরএস (খতিয়ান নং-১৯১৪) ২৯৮৪, ২৯৯৭, ৩০৫৬ ও ৩০৫৯ দাগে ৩০ শতাংশ, আলী ইসলাম গংয়ের আরএস ২৯৮৪ ও ৩০৬০ দাগে ৫০.৫২ শতাংশ, আবদুল আজিজের আরএস ২৯৫৮, ৩০৭৬, ৩০৭৫ দাগে ৪৫ শতাংশ এবং আনন্দ ব্যাগ মিলস লিমিটেডের আরএস (খতিয়ান নং-২৪১) ৩০৬২ দাগে ১২ শতাংশসহ প্রায় ৮ বিঘা জমির কথা বলা হয়।

জানতে চাইলে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, হাজী সেলিমের জমি দখলের ব্যাপারে গ্রামবাসীর দেয়া একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে টেলিফোনে টাইগার সিমেন্টের সহকারী ম্যানেজার মো. জাহিদ বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে টাইগার সিমেন্টের আওতাধীন কিছু খাসজমি ছিল। যেটা সরকারি পদ্ধতি অনুসরণ করে নেয়া হয়নি। এ কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেখানে সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। আমরা সেসব দখলমুক্ত করে দিয়েছি। তবে এখানে কোনো ব্যক্তিমালিকানাধীন জায়গা দখলে নেই।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখানে নদীর পাড়ের সরকারি জমি আরও অনেক প্রতিষ্ঠানের দখলে রয়েছে। তাদের কাছ থেকে সেসব জমি দখলমুক্ত করা হচ্ছে না। এখন আমাদের এমডি (ব্যবস্থাপনা পরিচালক) স্যার ঝামেলায় পড়ায় এসব নিয়ে টানাটানি হচ্ছে।

এখন আমরা সরকারি নিয়ম অনুসরণ করে খাসজমিগুলো শিল্পের প্রয়োজনে লিজ চাইব। আমাদের এসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। সরকার এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করলে দেশেরই ক্ষতি হবে।’

এমজে/