আদালতের প্রতি আইনজীবীদের অনাস্থা

‘‘কবি কাউকে চোর বললে তা অন্যের গায়ে লাগবে কেন?’’

‘‘কবি কাউকে চোর বললে তা অন্যের গায়ে লাগবে কেন?’’

একজন বিচারকের ছেলের আইনজীবী সনদের বিরুদ্ধে করা রিটের পর রিটকারী দুই আইনজীবীকে ১০০ টাকা জরিমানা ও আদালত অবমাননার রুলের প্রতিবাদ জানিয়েছেন আইনজীবীরা৷ বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বলেছেন, তারা মনে করেন এই আদেশ সব আইনজীবীর বিরুদ্ধে৷

হাইকোর্ট রিটটি খারিজ করে ওই আইনজীবীর সনদকে বৈধ বলে রায় দিয়েছেন৷

আর ওই দুই আইনজীবী মঙ্গলবার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন৷ তারা আরো জানান, এই আদালতের বিরুদ্ধে তারা এক মাস আগেই অনাস্থা দিয়েছিলেন৷

ব্যারিস্টার সাইয়েদুল হক সুমন ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসান নামে দুই আইনজীবী গত বছরের ২১ নভেম্বর একজন বিচারপতির ছেলে ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীর আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির পরীক্ষায় বার বার অনুত্তীর্ণ হওয়ার পরও সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী ঘোষণার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করেন৷ তাদের রিটের পর ১৮ ডিসেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি তারিকুল হাকিম ও বিচারপতি ইকবাল কবির সরাসরি আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করার বার কাউন্সিলের ওই গেজেটের কার্যকারিতা স্থগিত করেন৷ একইসঙ্গে রুলও জারি করা হয়৷

এরপর বেঞ্চ পরিবর্তন হয়৷ রিটের শুনানি শুরু হয় বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চে৷

রবিবার (৮ নভেম্বর) বিচারপতি গেবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহর বেঞ্চ আইনজীবী অন্তর্ভূক্তির পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের গেজেট প্রকাশ বৈধ বলে রায় দিয়ে রিট খারিজ করে দেন৷ একই সঙ্গে আদালত অযথা তাদের সময় নষ্ট করার জন্য দুই আইনজীবীকে ১০০ টাকা করে জরিমানা করেন৷ আর ফেসবুক দুইটি পোস্ট দেয়ার অভিযোগে দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল দেন৷

আদালত বলেছেন, ওই দুই আইনজীবীর এই রিট করার কোনে লুকাস ষ্ট্যান্ডাই (যোগ্যতা) নেই৷ পাবলিক ইন্টারেস্ট নাই৷ তারা এই রিট করে তাদের সময় নষ্ট করেছেন৷ তাদের ওপর হেভি কস্ট-এর আদেশ হওয়া দরকার৷ কিন্তু বয়স ও আইনজীবী হিসেবে তাদের কার্যকাল বিবেবচনায় তাদের প্রত্যেককে ১০০ টাকা করে জরিমানা-এর আদেশ দেন৷

ব্যারিস্টার সাইয়েদুল ইসলাম সুমন জানান, তারা আগেই এই আদালতের প্রতি অনাস্থা জনিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখানে ন্যায় বিচার পাইনি৷ মঙ্গলবার আমরা আপিল করব৷ জুম্মান সিদ্দিকীর ব্যাপারে যে রায় দেয়া হয়েছে তাতে আইনের সমতা প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ ফেল করা ছাত্রকে হাইকোর্ট পাশ ঘোষণা করেছে৷’’

আরেকজন রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান জানান, ‘‘রিটের শুনানি চলাকালে আমি সুকুমার রায়ের কবিতা ‘বিচার’ এবং হিন্দি সিনেমা থ্রী ইডিয়টস-এর রিভিউ ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম৷ আর ব্যারিস্টার সাইয়েদুল ইসলাম সুমন তাতে লাইক দিয়েছেন৷ আদালত মনে করেছেন এটা তাদের উদ্দেশ্য করে দেয়া হয়েছে৷ তাই তারা আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি আদালতকে উদ্দেশ্য করে এই পোস্ট দেইনি৷ আর পোস্ট দিয়েছি রায়ের আগে৷ সুকুমার রায়ের কবিতা এবং থ্রি ইডিয়টস সিনেমা এই রিটের অনেক আগের৷ বাংলাদেশে নিষিদ্ধও নয়৷ তাহলে আমি একজন আইনজীবী হিসেবে কেন আমার মত প্রকাশ করতে পারব না৷ পোস্ট দিতে পারবনা৷’’

‘‘আমরা আগেই আশঙ্কা করেছিলাম যে এই আদালতে আমরা ন্যায় বিচার পাবনা৷ সেকারণেই আমরা অনাস্থা দিয়েছিলাম এক মাস আগে৷শুরুতে অন্য আদালত কিন্তু গেজেট স্থগিত করে রুল দিয়েছিলেন৷ এখন আপিল করব৷ আশা করি সেখানে ন্যায় বিচার পাব৷'' তার কথা, ‘‘কবি যদি কাউকে চোর বলেন তা অন্যের গায়ে লাগবে কেন?’’

এদিকে এই রিটে ব্যারিস্টার জুম্মান সিদ্দিকীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম ও তার মেয়ে ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর৷ ব্যারিস্টার তানিয়া আমীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি৷ আর ব্যারিস্টার আমীর উল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷ তিনি বলেন, ‘‘এখন ফেসবুকসহ নানা জায়গায় নানা কিছু লেখালেখি হয়৷ তাই আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না৷ যা বলার আদালতেই বলেছি৷’’

দুই রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ‘‘আদালত মনে করেন রিটকারীদের কোনো লুকাস স্ট্যান্ডি নাই এবং আইনগত খতিয়ার নাই৷ আমরা মনে করি আদালতের এই কথা ঠিক নয়৷ জুম্মান সিদ্দিকী দুই বার বার কাউন্সিল পরীক্ষায় ফেল করেছেন৷ কখনোই পাশ করেননি৷ আর তার আবেদনও অসম্পূর্ণ৷’’

তিনি মনে করেন, আইনজীবীরা মনে করেন আদালতের আদেশ তাদের সবাইকে নিয়ে হয়েছে৷ তাদের পেশাগত মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে৷ তাই তারা খরচের জন্য সবাই এক টাকা করে দিয়ে সোমবার প্রতিবাদ জনিয়েছেন৷ আর আপিল তো আছেই৷