সিরামের টিকা ভারতের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি দাম বাংলাদেশে

সিরামের টিকা ভারতের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি দাম বাংলাদেশে

বাংলাদেশ ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউটের কাছ থেকে করোনাভাইরাসের যে টিকা কিনছে তাতে প্রতিটি ডোজের দাম পড়বে চার ডলার বা ৪০০ টাকার মতো।

তবে টিকা পরিবহনসহ সব মিলিয়ে খরচ পড়বে পাঁচ ডলার।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ভারতকে যে দামে এই টিকা বিক্রি করবে কোম্পানিটি তার থেকে বাংলাদেশকে ৪৭ শতাংশ বেশি অর্থ দিতে হচ্ছে।

খরচ প্রসঙ্গে যা বলছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বিবিসিকে জানিয়েছেন, "ওরা ডোজ প্রতি চার ডলার করে নিচ্ছে আর টিকা আনার খরচ, শুল্ক, ভ্যাট ইত্যাদির খরচের জন্য বেক্সিমকো নেবে ডোজ প্রতি এক ডলার করে।"

বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনে তা বিনামূল্যে দেবে।

কোভিড রোগীদের সেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীসহ, কারা এই বিনামূল্যের টিকার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন - সেটি ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

দামের ব্যাপারে মি. আলম জানিয়েছেন, "যখন আমাদের সাথে কথা হয়েছে তখন বলা হয়েছিল ভারতকে ওরা যে দামে বিক্রি করবে আমরাও সেই দামেই পাবো। যে সময়ে আমরা কথা বলেছি সেটা পাঁচ-ছয় মাস আগের কথা। এখন অনেক টিকা বাজারে আসছে কিন্তু সেই সময় আমাদের কাছে এছাড়া আরও কোন বিকল্প ছিল না।"

টিকা কিনতে বাংলাদেশের খরচ হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার মতো। আর সেটি পৌঁছে দেয়া ও সংরক্ষণে এক হাজার কোটি টাকার কিছু বেশি।

সিরাম ইন্সটিটিউটের কাছ থেকে টিকা আনার পর তা সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার।

এ মাসের শুরুর দিকে টিকা কিনতে সিরাম ইন্সটিটিউটকে অগ্রিম টাকা জমা দিয়েছে বাংলাদেশ।

মি. আলম জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরও টিকা কেনার জন্য ছয়শ মিলিয়ন ডলার নেয়া হবে বিশ্ব ব্যাংক ও এশিয়ান ইনফ্রাসস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে।

টিকা পাবেন না যারা

কোভিশিল্ড নামের টিকাটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যৌথভাবে তৈরি করেছে ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা।

টিকাটি উৎপাদনে অ্যাস্ট্রাজেনেকার অংশীদার ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট। বিশ্বের সবচাইতে বেশি সংখ্যায় টিকা উৎপাদন করে এই কোম্পানিটি।

ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশে টিকা দেয়া শুরু হবে বলে ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছে সরকার।

এমাসের ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে ৫০ লাখ ডোজ বাংলাদেশে পৌঁছাবে। যা থেকে প্রথম ডোজ দেয়া হবে। পরবর্তী ডোজ আসবে দুই মাস পর।

প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ আসবে। তিন কোটি ডোজ আসতে ছয়মাসের মতো লেগে যাবে। টিকার জন্য নিবন্ধন শুরু হবে ২৬শে জানুয়ারি থেকে।

স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়াও, সম্মুখ সারির পেশায় থাকা ব্যক্তি এবং রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল যেসব রোগী তারা প্রথম ধাপে টিকা পাবেন।

দ্বিতীয় ধাপে থাকবে স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে এমন ৬৫ বছর বয়স্ক ও তার উপরে যাদের বয়স তারা, শিক্ষাকর্মী, জনপরিবহনের কর্মীরা।

তৃতীয় ধাপে থাকবেন তারা যাদের বয়স ৬৫ বছরের বেশি - কিন্তু কোন বড় অসুখ নেই।

করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করছে সরকার। অগ্রাধিকার পাবেন এমন ব্যক্তিদের এর মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হবে।

তবে দেশের জনগোষ্ঠীর দুটি অংশ আপাতত এই টিকা কর্মসূচীর বাইরে থাকবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলছেন, "১৮ বছর বয়সের নিচে যারা তাদের উপর টিকার কোন ট্রায়াল হয়নি। তাই তারা এই টিকা কর্মসূচীর বাইরে থাকবে। দুই নম্বর হচ্ছে গর্ভবতী নারী তাদেরও দেয়া হবে না কারণ তাদের উপরেও কোন ট্রায়াল হয়নি।"

বাকিদের কি টাকা দিয়ে কিনতে হবে?

তিনটি ধাপে যারা অগ্রাধিকার পাবেন তাদের টিকা দেবার পর বাংলাদেশ কবে আরও কত ডোজ টিকা আনতে পারবে - তার উপর নির্ভর করছে বাকিরা কিভাবে টিকা পাবেন।

মি আলম বলছেন, "মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটা বলেছেন যে এই টিকা যেভাবে দেয়া হবে সেভাবেই চলবে। তো আমরা যদি সেভাবে ধরি তাহলে বাকিরাও হয়ত বিনামূল্যেই পাবেন। সরকারতো অন্যান্য টিকার ক্ষেত্রে কোন মূল্য নিচ্ছে না। সরকার কিনে নিচ্ছে না। শিশুদের কোটি কোটি টাকার টিকা দেয়া হচ্ছে - সেটা সরকার কিনে দিচ্ছে।"

বেসরকারি পর্যায়ে যদি কেউ টিকা আনতে চায় সে ব্যাপারে তিনি বলেন, কেউ আগ্রহ দেখালে সেটা নিয়ে ভাবা হবে।

তার মতে, "বেসরকারি পর্যায়ে যদি আনা যায় তাহলে যাদের সামর্থ্য আছে - তারা কিনে নেবে। এখন লোকজন ঔষধ কিনছেন না?"