করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন

করোনার টিকা প্রদান কর্মসূচির উদ্বোধন

কুর্মিটোলা হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন প্রদানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হলো বাংলাদেশের করোনাভাইরাস টিকাদান কর্মসূচি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে যোগদান করে এই কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

আজ কর্মসূচির উদ্বোধনী দিনে কুর্মিটোলা হাসপাতালে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মোট ২৫ জন মানুষকে টিকা প্রদান করা হবে বলে কথা রয়েছে।

এদের মধ্যে ডাক্তার, নার্স, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সাংবাদিক এবং আরো কয়েকটি পেশার মানুষ। তবে কাল থেকে প্রথম পর্যায়ের বাদবাকী যাদের টিকা দেয়া হবে তাদের সবাইই করোনাভাইরাস রোগীদের চিকিৎসা প্রদানের সাথে সম্পর্কযুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী।

যে টিকাটি তাদের দেয়া হচ্ছে, সেটি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবিষ্কৃত এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিশিল্ড নামের টিকা।

এরই মধ্যে ৭০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড মজুত করা হয়েছে বাংলাদেশে।

এর মধ্যে কুড়ি লাখ ডোজ এসেছে গত একুশে জানুয়ারি ভারতের শুভেচ্ছা উপহার হিসেবে।

আর বাকি ৫০ লাখ ডোজ এসেছে সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ক্রয়চুক্তির অংশ হিসেবে।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে কয়েকদিন ধরে ঢাকার চারটি হাসপাতালে শ’ পাঁচেক মানুষকে পরীক্ষামূলকভাবে টিকা প্রদান করা হবে, এদের সবাই স্বাস্থ্যকর্মী।

বাকি তিনটি হাসপাতাল হচ্ছে - উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

এই মানুষগুলোকে এরপর থেকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে।

আর পুরোপুরি টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি। শুরুতেই পাবেন সম্মুখ সারিতে থাকা বিভিন্ন পেশার মানুষেরা।

পাশাপাশি ৫৫ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের ব্যক্তিরাও টিকা নেয়ার সুযোগ পাবেন।

সুরক্ষা অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে নিবন্ধন:
তবে এজন্য সুরক্ষা নামের একটি (https://www.surokkha.gov.bd/) একটি ওয়েবসাইটে জাতীয় পরিচয়পত্র ও মোবাইল নম্বর দিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।

পরবর্তীতে মোবাইল নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে টিকা নেয়ার জন্য নির্ধারিত স্থান ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে।

এই নিবন্ধন কর্মসূচির উদ্বোধনও হচ্ছে বুধবারই।

স্বাস্থ্য সচিব মো: আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, প্রথম মাসে ৬০ লাখ টিকা দেয়া হবে। পরের মাসে দেয়া হবে ৫০ লাখ। তৃতীয় মাসে আবার ৬০ লাখ টিকা দেয়া হবে।

প্রথম মাসে যারা টিকা নেবেন, তারা তৃতীয় মাসে আবার দ্বিতীয় ডোজ নেবেন।

টিকা প্রদানের বিভিন্ন ধাপ:
নিবন্ধন: জাতীয় পরিচয়পত্র যাচাইয়ের মাধ্যমে ব্যক্তি নিবন্ধন
ভ্যাকসিন কার্ড: ওয়েব পোর্টাল হতে ভ্যাকসিন কার্ড সংগ্রহ
এসএমএস বার্তা প্রেরণ: ভ্যাকসিন প্রদানের তারিখ ও তথ্য প্রেরণ
প্রথম ডোজ: নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রদান
দ্বিতীয় ডোজ: নির্দিষ্ট তারিখ ও সময়ে প্রদান
ভ্যাকসিন সনদ: দুইটি ডোজ নেওয়ার পর পোর্টাল হতে সংগ্রহ

গত বছরের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়, তবে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে আঠারোই মার্চ।

মঙ্গলবার পর্যন্ত দেশটিতে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩২ হাজার ৯১৬ জন। আর কোভিড-১৯ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৫৫ জনের।

করোনাভাইরাসের টিকা কারা নেবেন আর কারা নেবেন না

করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি)।

সংস্থাটি বলছে, অতীতে যাদের কোন টিকা নেয়ার পর বড় ধরনের অ্যালার্জি হয়েছে বা কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়েছে, তাদের টিকা নিতে হলে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। বিশেষ করে তাদের অবশ্যই টিকা নেয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বা কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে হবে।

তবে যাদের খাবার বা পরিবেশে বা মুখে খাবার ওষুধে অ্যালার্জি রয়েছে, তাদের টিকা নিতে কোন সমস্যা নেই। সূত্র : বিবিসি

এমজে/