আবারও শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, এইচএসসি পর্যন্ত নতুন ধারায় মূল্যায়ন

আবারও শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন, এইচএসসি পর্যন্ত নতুন ধারায় মূল্যায়ন

প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষাক্রমে পরিবর্তন আসছে। এরসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পাঠ্যবই এবং শিক্ষার্থী মূল্যায়ন ব্যবস্থাও পাল্টে যাবে। দশম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা আলাদা বই পাবে।

শুধু দশম শ্রেণির পড়া বইয়ের উপরেই হবে এসএসসি পরীক্ষা। এইচএসসি পরীক্ষা হবে দুবার। প্রথমে একাদশ শ্রেণিতে পড়া বিষয়গুলোর ওপরে বছর শেষে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এর নম্বর নিজ নিজ শিক্ষা বোর্ড সংরক্ষণ করবে। পরে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়া বিষয়ের ওপর আবার পরীক্ষা দেবে শিক্ষার্থীরা। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ফল যোগ করে এইচএসসির ফল ঘোষণা করা হবে।

তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ৭০ শতাংশ নম্বর থাকবে ধারাবাহিক মূল্যায়নে। এছাড়া অষ্টম-নবমে ৬০, দশমে ৫০ শতাংশ এবং এইচএসসিতে ৩০ শতাংশ নম্বর ধারাবাহিক মূল্যায়নের আওতায় আসবে। ২০১২ সালের পর ফের শিক্ষা ব্যবস্থায় সংস্কার আসছে। এর আগে ১৯৯৫ সালেও এ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়।

প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমের আলোকে এখন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রম তৈরি হচ্ছে। আগামী বছর শুধু চারটি শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেয়া হবে। শ্রেণি চারটি হচ্ছে, প্রথম ও দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ ও সপ্তম।

এসব শ্রেণির শিক্ষাক্রম লেখার কাজ ১৫ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে। এরপরে পাঠ্যবই লেখা শুরু হবে। ২০২৪ সালের মধ্যে দশম শ্রেণি এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমে বই প্রবর্তন শেষ হবে। এর আগে ২০২৩ সালে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম এবং অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে নতুন পাঠ্যবই যাবে। আগামী বছর থেকে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা ২ বছর মেয়াদি হবে।

চলতি বছর দেশের বিভিন্ন স্কুলে এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চলছে। নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়িত হলে সাপ্তাহিক ছুটি দু’দিন করে দেয়া হবে। বর্তমানে শিক্ষাক্রমে পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে কিছু বলা নেই। সরকারের নির্বাহী আদেশে পরীক্ষা দুটি হচ্ছে। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রমেও এ বিষয়ে কোনো দিকনির্দেশনা নেই বলে জানা গেছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, বর্তমানে ২০১২ সালে প্রবর্তিত শিক্ষাক্রম অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া চলছে। বিশ্বব্যাপী ৫ বছর পরপর শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করা হয়ে থাকে। যুগের চাহিদা ও বাস্তবতা বিবেচনায় এটা স্বাভাবিক কার্যক্রমেরই অংশ। সেই হিসাবে আরও আগে এ পরিমার্জন আসা প্রয়োজন ছিল।

বর্তমানে নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু পরিকল্পনা অনুযায়ী, দশম শ্রেণি পর্যন্ত সব শিক্ষার্থীই একই পাঠ্যবই পড়বে। এমনকি এ দুই শ্রেণিতে তারা প্রাক-বৃত্তিমূলক শিক্ষা নেবে।

এর অংশ হিসাবে অন্তত একটি ট্রেড নিতে হবে সবাইকে। এর পাঠের ওপর তারা নেবে হাতে-কলমে শিক্ষা। বিভাগভিত্তিক ভাগ হয়ে যাবে উচ্চ মাধ্যমিকে। তবে ওই স্তরে সব শিক্ষার্থীকে অন্তত তিনটি অভিন্ন বিষয় পড়তে হবে।

আর বিভাগভিত্তিক অন্তত তিনটি বিষয় থাকবে। প্রতিটি বিষয়ে তিনটি করে পত্র থাকবে। মূলত বর্তমানে নবম-দশম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক শিক্ষায় বিভিন্ন বিষয়ে যে জ্ঞান পেত, একটি পত্র বাড়িয়ে সেটির প্রয়োজনীয় জ্ঞান দেয়া হবে, যাতে উচ্চশিক্ষায় বিশেষায়িত লেখাপড়ায় সংকট তৈরি না হয়।

উল্লিখিত পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন শিক্ষাক্রমে বা পাঠ্যপুস্তকের আলোকে এসএসসি প্রথম পরীক্ষা হবে ২০২৫ সালে। আর প্রথম পর্বের এইচএসসি (একাদশ শ্রেণিতে) হবে ২০২৬ এবং দ্বিতীয় পর্বের এইচএসসি ২০২৭ সালে।

নবম শ্রেণিতে আলাদা পাঠ্যবই দেয়া হবে। সেটা ওই শ্রেণিতেই পড়া শেষ করবে। আর দশম শ্রেণিতে আলাদা বই দেয়া হবে। শুধু দশম শ্রেণিতে দেয়া বইয়ের ওপর হবে এসএসসি পরীক্ষা। বর্তমানে নবম-দশম শ্রেণিতে অভিন্ন বই দেয়া হয়। ২ বছরের পাঠের ওপর এসএসসি পরীক্ষা হয়।

এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, ভিশন ২০৪১ বা দেশকে উন্নত জাতিতে পরিণত করার রূপকল্প, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার, জাতীয় শিক্ষানীতি এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বিবেচনায় নিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম করা হচ্ছে। প্রথমে এর রূপ রেখা তৈরি করা হয়। সেটি অনুমোদনের পর এখন শিক্ষাক্রম লেখার কাজ চলছে।

এখন সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখা হবে। তবে আগামী বছর চারটি শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই যাবে। সেগুলোর শিক্ষাক্রম তৈরির কাজ ১৫ এপ্রিলের মধ্যে শেষ হবে।

যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রম : বর্তমানে যে শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যবই আছে তা দুই রকম। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত যোগ্যতাভিত্তিক। অর্থাৎ, পঞ্চম শ্রেণি পাশ করলে একজন শিক্ষার্থী কতটি যোগ্যতা অর্জন করবে তা নির্দিষ্ট আছে। আর মাধ্যমিকের শিক্ষাক্রম উদ্দেশ্যভিত্তিক। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে পাঠ দেয়া হয়। এরপর তা শিখছে কিনা তা পরীক্ষা নিয়ে যাচাই করা হয়।

এমজে/