সরকারের ভূমিকায় হতাশ সুজন

‘মন্ত্রীর বক্তব্য ইঙ্গিত করে নির্বাচনে ভোট দিতে পারবো না’

‘মন্ত্রীর বক্তব্য ইঙ্গিত করে নির্বাচনে ভোট দিতে পারবো না’

নির্বাচন কমিশন গঠন আইন প্রণয়নে সরকারের ভূমিকাকে হতাশাজনক বলে মন্তব্য করেছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)। বুধবার সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে সুজন নেতৃবৃন্দ বলেছেন, অতীতের অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে নিয়োগের ফলে আমরা রকিবউদ্দিন কমিশন ও নূরুল হুদা কমিশন পেয়েছি। এই দুই কমিশনের সদস্যদের চরম পক্ষপাতদুষ্ট আচরণের ফলে আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়াই প্রায় ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।

শুধুমাত্র জালিয়াতির নির্বাচনের মাধ্যমে গুরুতর অসদাচরণেরই নয়, নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগও উঠেছে। বর্তমান সরকার কি এই দুই কমিশনের সব অপকর্মের দায় এড়াতে পারবে?

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আইন প্রণয়ন না করে অতীতের ন্যায় অনুসন্ধান কমিটির মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন গঠিনের ফলাফল হবে তার উল্টো। কারণ অতীতের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত দুটি অনুসন্ধান কমিটিতে একজনও সংসদ সদস্য ছিলেন না।

পক্ষান্তরে আমাদের প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় সাত সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান কমিটির তিনজনই হবেন সংসদ সদস্য। তাই আমাদের প্রস্তাবিত খসড়াটি গৃহীত হলে পরবর্তী নির্বাচন কমিশন নিয়োগে সাংসদদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে এবং সংসদকে এড়িয়ে যাওয়া হবে না।

ড. মজুমদার বলেন, সংবিধানের ৪৮(৩) অনুযায়ী, শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগ ছাড়া রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশ অনুযায়ীই সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাই রাষ্ট্রপতি কর্তৃ গঠিত অনুসন্ধান কমিটি আবারও প্রধানমন্ত্রীর পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়েই গঠিত হবে। সে অনুসন্ধান কমিটি এবং তার সুপারিশে গঠিত নির্বাচন কমিশন কতটুকু গ্রহণযোগ্য এবং জনস্বার্থ সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা ও বিতর্ক থেকেই যাবে। ফলে নির্বাচন কমিশন নিয়ে যে চরম আস্থা’র সঙ্কট বর্তমানে বিরাজ করছে তা অব্যাহতই থাকবে, যা কারোই কাম্য হতে পারে না। তাই আমরা মনে করি, প্রেক্ষাপট ও গুরুত্বের বিবেচনায় জরুরিভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি এবং এর কোনো বিকল্প নেই।

সুজনের নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, সরকার একটা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠনে উদ্যোগী হবে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা স্পষ্ট ওনারা আইন করবেন না। আজ্ঞাবহ সার্চ কমিটির মাধ্যমে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকার বদ্ধপরিকর। সরকার কি ভাবছে জানি না। কিন্তু দেশের নাগরিকদের একটা হলেও ভোট দেয়ার অধিকার আছে। গত জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে তারা আমাদের ভোট দেয়ার অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য এটাই ইঙ্গিত করছে, পরবর্তী নির্বাচনে আমরা ভোট দিতে পারবো না। আবার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন হবে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদের নির্দেশনার আলোকে ‘আইনের বিধানাবলী- সাপেক্ষে’ নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ প্রদানের লক্ষ্যে একটি আইন প্রণয়নের দাবি করে আসছে সুজন। এ ব্যাপারে সরকারের দিক থেকে কোনোরূপ উদ্যোগ না দেখে, অনেক নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, আইনজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে, ড. শামসুল হুদা কমিশনের রেখে যাওয়া একটি খসড়া এবং প্রতিবেশী দেশগুলির সংশ্লিষ্ট আইন পর্যলোচনা করে সুজন ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২১’-এর একটি খসড়া তৈরি করে। সংবাদ সম্মেলনে আরো অংশ নেন সুজন কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, সুজন-এর নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ।