নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়া বড় উদ্বেগের: সিপিডি

নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়া বড় উদ্বেগের: সিপিডি

করোনা মহামারির সময় মানুষের যখন আয় কমে গেছে, কর্মসংস্থান হারিয়েছেন অনেকে। এমন সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়া বড় উদ্বেগের বিষয় বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। যা বাস্তবতার সঙ্গে বিরাট ফারাক বলে মনে করছে সংস্থাটি। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের উন্নয়নে স্বাধীন পর্যালোচনার আওতায় অর্থনীতি ২০২১-২০২২, প্রথম অন্তবর্তীকালীন পর্যালোচনা শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সিপিডি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন মূল প্রবন্ধ তুলে ধরে বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি জীবনযাত্রার মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে সেটা একটি বিষয়, আরেকটি বিষয় হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজার ব্যবস্থায় সুশাসনের অভাব। যার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ছে।

তিনি জানান, অক্টোবর মাসে মূল্যস্ফীতির হার ৫ দশমিক ৪ শতাংশ এবং খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। বাস্তবতার সঙ্গে যার বিরাট ফারাক। আমরা মনে করি অতিমারীর সময়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। এছাড়া ঋণের ক্ষেত্রেও কাক্সিক্ষত লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি।

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রায় পূরণ খুবই কষ্টসাধ্য উল্লেখ করে সিপিডি বলছে, এখন পর্যন্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ১৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রাজস্ব আহরণ করছে। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে বাকি সময়ে ৩০ শতাংশ হারে রাজস্ব আদায় করতে হবে। এটা খুবই কষ্টকর। লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে পরোক্ষ করের ক্ষেত্রে ৩২ শতাংশের বেশি হারে আদায় করতে হবে। অন্যদিকে আয়করের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে ২৭ শতাংশ হারে কর আসতে হবে। রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে যে পদক্ষেপ রয়েছে, সেখানে কর আহরণ বৃদ্ধি করার খুব বেশি সুযোগ রয়েছে তেমনটা নয়। রাজস্ব আহরণে যদি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হয়, তাহলে বাজেট বাস্তবায়ন বড় হুমকির মুখে পড়ে যাবে।

সিপিডির মূল্য প্রবন্ধে বলা হয়েছে, এডিপি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় বেশি হলে কোভিড পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কম। বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের বাস্তবায়ন মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। এমনিতেই এডিপি বাস্তবায়ন কম হয় সেখানে অতিমারীর সময় স্বাস্থ্য খাতের এমন এডিপি বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে যদিও আর্থিক ভারসাম্যে একটা উদ্বৃত্ত ছিল, কিন্তু সামগ্রিক ব্যালেন্সে নেতিবাচক ভারসাম্য লক্ষ্য করছি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর একটা চাপ পড়ছে।

সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা জানি সারের জন্য ৯ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে রাখা হয়েছে। কিন্তু এখন যেভাবে দাম বেড়েছে, তাতে ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার কোটি টাকার মতো প্রয়োজন হবে। কিভাবে সমন্বয় করবে সরকার? আবার গ্যাসের দামও বাড়ছে। যেভাবে রাজস্ব আহরণ হচ্ছে, তা দিয়ে মূল্য সমন্বয় করে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, বিদেশি বড় অর্থায়ন আসছে, এটা সত্য। তবে এটা কিন্তু বাজেটের সহায়তা নয়, প্রকল্পের সহায়তা। যেহেতু এটা বাজেটের সহায়তা নয়, তাই এটা দিয়ে ভর্তুকি সমন্বয় সম্ভব নয়।