লঞ্চে আগুন

হতাহতদের খোঁজে সুগন্ধা নদীর তীরে স্বজনদের ভিড়

হতাহতদের খোঁজে সুগন্ধা নদীর তীরে স্বজনদের ভিড়

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনে হতাহতের ঘটনায় নদী তীর ও হাসপাতালে ছুটোছুটি করছেন স্বজনরা। এ সময় প্রিয়জনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে উঠছে সেখানকার পরিবেশ। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে ঝালকাঠি সদরের দিয়াকুল গ্রামের কাছে সুগন্ধা নদীতে লঞ্চটিতে আগুন লেগে যায়। লঞ্চটি প্রায় আট শ’ যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে বরগুনা যাওয়ার পথে ঝালকাঠিতে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

সকালে কুয়াশার জন্য উদ্ধারকাজ কিছুটা ব্যাহত হয়। নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে ফায়ার সার্ভিস কাজ করে যাচ্ছে। লঞ্চে আগুনে এখন পর্যন্ত ৩৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বে থাকা বরিশাল ফায়ার নার্ভিসের উপ-পরিচালক মো. কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, ‘এখনও উদ্ধার কাজ চলছে। এখানে মোট পাঁচটি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করেছে। উদ্ধার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছুই বলা যাচ্ছে না।’

লঞ্চের প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রী পাথরঘাটা পল্লী বিদ্যুতের লাইনম্যান মতিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে লঞ্চের নিচতলার ইঞ্জিন রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। প্রচণ্ড ধোঁয়ায় যাত্রীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। অনেকেই সঙ্গে সঙ্গে নদীতে ঝাঁপ দেন। এতে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ নিখোঁজ হন। পরে স্থানীয় লোকজন সবাইকে উদ্ধার করে গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করে দেন।

ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদল ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা জানান, সুগন্ধা নদী থেকে তারা নয় জন হতভাগ্য যাত্রীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে লঞ্চটিতে আগুন লাগে বলে যাত্রীরা জানিয়েছেন। ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের গাবখান চ্যানেলে এলে লঞ্চ থেকে কিছু যাত্রী নামতে পেরেছেন।

ঘটনাস্থল থেকে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী জানান, এখন পর্যন্ত ৭৫ জন আহত যাত্রীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহতদের পরিচয় এখনও নিশ্চিত করা যায়নি। ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহত ১৫ জন এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

তিনি জানান, বরিশাল থেকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে লঞ্চ টার্মিনালের দূরবর্তী দিয়াকুল এলাকায় এলে ঘটনাটি ঘটেছে। লঞ্চটির ইঞ্জিনরুমের কাছে রান্নাঘরের গ্যাস সিলিন্ডার থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

লঞ্চটির কয়েকজন যাত্রী সমকালকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে হঠাৎ যাত্রীরা আগুন দেখে চিৎকার শুরু করে। কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই লঞ্চটিতে আগুন ধরে যায়। এসময় কিছু যাত্রীরা লাফিয়ে নদীতে পড়ে সাঁতরে পাড়ে উঠে। এছাড়া স্থানীয় ট্রলার চালকরা এগিয়ে গিয়ে লঞ্চ ও নদী থেকে বেশ কিছু যাত্রীদের উদ্ধার করে। চাঁদপুর থেকে বরগুনাগামী লঞ্চের যাত্রী মো.মোহসীন বলেন, ‘রাত ২টার দিকে হঠাৎ নিচ থেকে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে দেখি। এরপর আগুনের তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় আমি তিনতলা থেকে লাফ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই।’

ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘আমি দোতলায় ঘুমিয়ে ছিলাম। আগুনের তাপে ঘুম ভেঙ্গে দেখি পুরা লঞ্চটিতে আগুন ধরে গেছে। তখন লাফ দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেই।’ শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে ঝালকাঠির কলেজ খেয়াঘাট এলাকায় নদী থেকে ১৩ বছরের এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তার মা জানান, তারা ঢাকা থেকে বরগুনার উদ্দেশ্যে মা ও মেয়ে এক সাথে লঞ্চে উঠেছিল। কিন্তু আগুন লাগার পর মেয়েকে পাওয়া যায়নি। খুঁজতে খুঁজতে এখানে এসে মেয়ের মৃতদেহ পেয়েছেন।