কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

এখনও অধরা আসামিরা, আতঙ্কে ভুক্তভোগী নারী

এখনও অধরা আসামিরা, আতঙ্কে ভুক্তভোগী নারী

কক্সবাজারে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার তিনদিন পার হলেও অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তবে এ ঘটনায় আটক হোটেল ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে শুক্রবার রাতে ট্যুরিস্ট পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন জানান, আটক হোটেল ম্যানেজারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছিল। কক্সবাজার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত শনিবার সন্ধ্যায় এক আদেশে ৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

তিনি আরও জানান, নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় রেখে ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে এখনও পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছে। তার কাছ থেকে আসামিদের বিষয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। পুলিশ আসামিদের ধরার চেষ্টা চালাচ্ছে।

ভিকটিম নারী জানান, তিনি অনিরাপদ বোধ করছেন। সন্ত্রাসীদের ভয়ে রয়েছেন আতঙ্কে। ওই নারী বলেন, ‘আমি বাড়ি ফিরে যেতে চাই। আমার সন্তানটি অসুস্থ। তাকে ডাক্তার দেখাতে হবে।’

এদিকে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত সন্ত্রাসীরা এখনও গ্রেপ্তার না হওয়ায় কক্সবাজার শহরের হোটেল জোন এলাকায় অতঙ্ক বিরাজ করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন হোটেল মালিক জানিয়েছেন, ধর্ষণে জড়িত সন্ত্রাসীরা আত্মগোপনে গেলেও তাদের গ্রুপের কয়েক জনকে হোটেল জোন এলাকায় প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। তারা তাদের অনৈতিক সব বাণিজ্য এখনও চালু রেখেছে।

কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক এক ওয়ার্ড কমিশনার বলেন, পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যম বাহারছড়ার মৃত মাস্টার আবদুল করিমের ছেলে আশিকুল ইসলাম আশিক (২৯) পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় ১৭টি মামলা রয়েছে। তাকে শহরের হোটেল ব্যবসায়ীরা চিনে অপরাধীদের বাদশা হিসেবে। তাকে প্রধান আসামি ও তার তিন সহযোগীর নাম উল্লেখ করে কক্সবাজার সদর থানায় ধর্ষণ মামলা করেছে ভিকটিম নারীর স্বামী। কিন্তু এখনও তাদের ধরতে পারেনি পুলিশ।

সন্ত্রাসী আশিকের বিরুদ্ধে যত মামলা

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, কিশোর বয়সেই আশিকের অপরাধ জগতে পথচলা শুরু। ২০১১ সালের ২০ আগস্ট তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় মারামারি আইনে প্রথম মামলা হয়। এর ১০ মাস পর ২০১২ সালের ২০ জুলাই একই থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়। ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি একই ধারায় আরেকটি মামলা, একই বছরে ১৫ সেপ্টেম্বর ডাকাতির চেষ্টার দায়ে একটি, অস্ত্র আইনে একটি এবং হত্যা প্রচেষ্টার দায়ে অপর একটি মামলা হয়। ২০১৫ সালের ৫ মার্চ তার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা হয়েছে। ওই বছরের ২১ নভেম্বর আশিকের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা হয়। পরদিন ২২ নভেম্বর আরেকটি ডাকাতির মামলা হয় তার বিরুদ্ধে। এরপরে ২০১৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ডাকাতি আইনে আবারো মামলা হয়। একই বছরের ১৪ অক্টোবর মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা হয়েছে এই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে। চলতি বছরের ৩০ জুন আশিকের বিরুদ্ধে হত্যা চেষ্টা মামলা হয়েছে। ৭ নভেম্বর হয়েছে ডাকাতি মামলা। সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলা হয় তার বিরুদ্ধে।

আশিকের সন্ত্রাসী বাহিনী

গৃহবধূকে ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আশিকের গ্রুপে রয়েছে ২৫ থেকে ৩০ জন সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে অন্যতম হলো— বাহারছড়ার মোবারক, ফাহিম, বাবু, মেহেদী হাসান বাবু ও ইসরাফিল হুদা জয়। এদের সবার বিরুদ্ধে নানা অপরাধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী এবং তার আশীর্বাদপুষ্ঠ হিসেবে এরা শহরে পরিচিত।

কক্সবাজার পৌরসভার সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর নাছিমা আকতার বলেন, আশিক ও তার বন্ধুরা বাহারছড়াসহ আশেপাশের এলাকার জন্য আতঙ্ক। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না।

কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুনীর উল গীয়াস বলেন, আশিকের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর থানায় বৃহস্পতিবার হওয়া ধর্ষণ মামলাসহ ১৭টি মামলা রয়েছে। গত ৭ নভেম্বর তাকে একটি ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যম কারাগারে পাঠানো হয়। তবে সে ১৫ নভেম্বর জামিনে বের হয়ে আসে।

কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান বলেন, অনেক সন্ত্রাসী আসামিকে আমরা আটক করে কারাগারে পাঠিয়েছি। কিন্তু জামিনে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা যায় না।