সিনহা হত্যা মামলা

ইয়াবা ব্যবসায়ীরাই ফাঁসিয়েছেন প্রদীপকে, আদালতে রানা দাশগুপ্ত

ইয়াবা ব্যবসায়ীরাই ফাঁসিয়েছেন প্রদীপকে, আদালতে রানা দাশগুপ্ত

কক্সবাজারে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যায় প্রদীপ কুমার দাশ জড়িত নন বলে আদালতে দাবি করেছেন তাঁর আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার যুক্তি উপস্থাপনের সময় তিনি বলেন, প্রদীপকে মামলায় ফাঁসিয়েছেন ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। কারণ, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রদীপ টেকনাফে মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছেন। তাতে তিনি সফলও হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সর্বশেষ যুক্তি উপস্থাপনের তৃতীয় দিনে বিশিষ্ট আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত মামলার ২ নম্বর আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন। বিকেল সোয়া পাঁচটায় আদালত মুলতবি হয়। কাল বুধবার (১২ জানুয়ারি) সকালে রানা দাশগুপ্তের ওসি প্রদীপের পক্ষে অসমাপ্ত যুক্তি উপস্থাপনের কথা রয়েছে।

আজ সকাল ১০টায় শুরু হয় মেজর সিনহার হত্যা মামলার তৃতীয় দিনের সর্বশেষ যুক্তি উপস্থাপন। প্রথমে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন মামলার ১ নম্বর আসামি ও টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীর নিযুক্ত আইনজীবী চন্দন শর্মা।

এর আগে গতকাল সোমবার বিকেলে তিনি এই যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেছিলেন, সময়ের অভাবে শেষ করতে পারেননি। গত দিনের মতো আজও চট্টগ্রাম আদালতের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন শর্মা দাবি করেন, সিনহা হত্যার সঙ্গে লিয়াকত আলী জড়িত নন, তাঁকে এই মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

আদালত পরিচালনা করছেন জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। এ সময় আদালতের কাঠগড়ায় ছিলেন প্রদীপ কুমার দাশসহ মামলার ১৫ আসামি। সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে ১৫ আসামিকে আদালতে আনা হয়।

আইনজীবীরা বলেন, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মামলার ২ নম্বর আসামি প্রদীপ কুমার দাশের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন রানা দাশগুপ্ত। দুপুরে এক ঘণ্টার বিরতি শেষে বেলা তিনটায় আবার যুক্তি উপস্থাপন শুরু হয়। সোয়া পাঁচটার দিকে আদালত মুলতবি হয়।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আগামীকাল ওসি প্রদীপের পক্ষে অসমাপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করবেন সিনিয়র আইনজীবী রানা দাশগুপ্ত। এর আগে মামলার অবশিষ্ট ১৪ জনের যুক্তি উপস্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। চলতি জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে চাঞ্চল্যকর এই সিনহা হত্যা মামলার রায় হতে পারে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে এ মামলার সাক্ষ্য দেন দুজন। তাঁরা হলেন মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত। দ্বিতীয় দফার ৪ দিনে সাক্ষ্য নেওয়া হয় ৪ জনের, তৃতীয় দফার ৩ দিনে ৮ জনের, চতুর্থ দফার ২ দিনে ৬ জন, পঞ্চম দফার ৩ দিনে ১৫ জন, ষষ্ট দফার ৩ দিনে ২৪ জন, সপ্তম দফার ৩ দিনে ৫ জন এবং অষ্টম দফার ৩ দিনে ১ জনের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাক্ষ্য নেওয়া হয়। নবম দফায় ১৫ জন আসামির সাফাই সাক্ষী গ্রহণ করা হয়েছে।

২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করে। ঘটনার পাঁচ দিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র‌্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম।