কোটি মানুষকে কম দামে পণ্য দেয়ার প্রস্তুতিতে হ-য-ব-র-ল

কোটি মানুষকে কম দামে পণ্য দেয়ার প্রস্তুতিতে হ-য-ব-র-ল

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে আসন্ন রমজান উপলক্ষে এক কোটি পরিবারকে দুই দফায় ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য সরবরাহের লক্ষ্য ঠিক করেছে সরকার। ঢাকায় ৬ই মার্চ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ঢাকার বাইরে শুরু হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার থেকে। তবে প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় যথাসময়ে শুরু হচ্ছে না কার্যক্রমটি। টিসিবি বলছে, কিছু জেলায় এখনো প্যাকেট তৈরির কাজ শেষ না হওয়ায় ১৫ তারিখ থেকে পণ্য দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ জন্য ২০শে মার্চ নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্যাকেট তৈরিতে বিলম্ব, লোকবল সংকট, ক্রেতাদের কাছে নির্দিষ্ট সময়ে কার্ড সরবরাহ করতে না পারা এবং ট্রাক সংকটের কারণে তারিখ পেছানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, পণ্য দেয়ার ক্ষেত্রে যে প্যাকেট নির্ধারণ করা হয়েছে তার প্রধান পাইকারি বাজার হলো ঢাকার চকবাজার। দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে পাওয়া গেলেও তা খুবই সীমিত।

এ জন্য জেলা প্রশাসকরা চকবাজার থেকেই প্যাকেট সংগ্রহ করছেন। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৮৮ লাখ মানুষকে টিসিবি’র পণ্য দেয়া হবে। প্রতিটি মানুষের জন্য ৫টি করে প্যাকেট প্রয়োজন হবে। প্রস্তুতকারকরা এত বিপুল সংখ্যক প্যাকেট নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তৈরি করতে পারেননি। এ জন্য ১৫ তারিখ থেকে কার্ডের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে পণ্য বিক্রির কথা থাকলেও তা সম্ভব হচ্ছে না। আগামী ২০শে মার্চ থেকে এই কার্যক্রম শুরু হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টিসিবি’র একজন কর্মকর্তা বলেন, প্যাকেট তৈরি করতে না পারা, লোকবল স্বল্পতা, ট্রাক সংকটসহ আরও কিছু সমস্যার কারণে ১৫ই মার্চ টিসিবি কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। রোববার বিষয়টি নিয়ে মিটিং হয়েছে। সেখানে ২০শে মার্চ থেকে স্বল্পমূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রস্তুতির বিষয়ে ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনিরা বেগম বলেন, ঝিনাইদহ জেলায় প্যাকেট তৈরির সুব্যবস্থা না থাকায় ঢাকায় প্যাকেট তৈরি করতে দেয়া হয়। অধিক চাপের কারণে ব্যাগ প্রস্তুতকারকরা সঠিক সময়ে দিতে পারেনি। আমরা এখনো প্যাকেট হাতে পাইনি। আজকে চলে আসবে। তিনি বলেন, ফ্যামিলি কার্ড প্রস্তুত করা প্রায় শেষের দিকে। ডিলার ও ক্রেতা দুজনকেই কার্ড দেয়া হবে। কার্ডের বাইরে কাউকে পণ্য দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১৫ই মার্চ টিসিবি’র পণ্য দেয়ার জন্য আমাদের সকল ধরনের প্রস্তুতি ছিল। হয়তো বিভিন্ন সমস্যার কারণে পেছানো হয়েছে। তারিখ পিছিয়ে ২০শে মার্চ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে তারিখ পেছানোর ফলে আমাদের সুবিধা হয়েছে। আরও ভালোভাবে প্রোগ্রামটি শুরু করা যাবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার একজন টিসিবি ডিলার জানান, ১৫ তারিখ থেকে টিসিবি’র পণ্য দেয়া শুরু হওয়ার কথা আছে, কিন্তু আমরা এখনো তালিকা হাতে পেলাম না। ডিও করবো তাও করতে পারছি না। টিসিবি’র অফিসারের কাছে ফোন দিলেও উনি ফোন ধরেন না। তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। আমার ৬টি ইউনিয়নে পণ্য দিতে হবে বলে জানানো হয়েছে। কতো টাকা লাগবে সেটাও আমাদেরকে আগে থেকে জানানো হচ্ছে না। ওনারা জানালে আমরা আগের থেকে টাকা গুছিয়ে রাখতে পারতাম। আমাদেরকে কোনো প্রস্তুতির কথা বলা হয়নি।

টিসিবি’র চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আরিফুল হাসান বলেন, ১৭, ১৮ এবং ১৯শে মার্চ সরকারি বন্ধের দিন। এমনিতেই এই তিন দিন পণ্য দেয়া বন্ধ থাকবে। এ জন্য আমরা ১৫ই মার্চ থেকে পিছিয়ে ২০শে মার্চ পণ্য দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তিনি বলেন, যেহেতু রমজানের আগে একবার এবং মাঝে একবার পণ্য দেয়া হবে সেহেতু দুই-একদিন আগে শুরু করা বা পরে শুরু করার মধ্যে খুব একটা ফারাক থাকে না। মানুষের মাঝে দুইবার পণ্য দেয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য জানিয়ে তিনি বলেন, কিছু কিছু জেলায় এখনো প্যাকেট তৈরির কাজ শেষ হয়নি।

আমরা চাচ্ছি সুন্দরভাবে সবাই একযোগে কাজটি শুরু করতে, এ জন্যই সময়টা নেয়া হলো। কাজটা যাতে আরও সুন্দরভাবে হয় সে জন্য বন্ধের তিন দিনকে আমরা কাজে লাগাচ্ছি।

জনবল সংকট আছে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, স্বল্পসংখ্যক মানুষ নিয়ে আমাদের অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেটা আমরা সুন্দরভাবে পালন করার চেষ্টা করছি। এটা যেহেতু জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে পণ্য দেয়া হচ্ছে, সেহেতু এখানে আমাদের লোকবল সেভাবে জড়িত থাকছে না।