রাজশাহীতে দোকান কর্মচারী হত্যা: ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

রাজশাহীতে দোকান কর্মচারী হত্যা: ৪ জনের মৃত্যুদণ্ড

রাজশাহীর নবরূপ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কর্মচারী প্রকাশ শিং (২০) হত্যা মামলায় চার জনেকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের বাদল মণ্ডল, রাজশাহীর তানোর উপজেলার এনায়েতপুর চোরখৈর গ্রামের বিমল শিং ও তার স্ত্রী অঞ্জলী রানী এবং তাদের ছেলে সুবোধ শিং। বাদল অঞ্জলী রানীর পরকীয়া প্রেমিক। আর অভিযুক্ত অন্য তিন জন নিহত প্রকাশের আপন চাচা, চাচী এবং চাচাতো ভাই।

রোববার (১০ এপ্রিল) বেলা দুপুর ১২টার দিকে রাজশাহী দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার এই রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামিরা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন। রায়ের পর তাদেরকে প্রিজনভ্যানে করে আদালত থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।

আদালতে স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রায় ঘোষণার পর এক প্রতিক্রিয়ায়- আদালতে রাষ্ট্র পক্ষের কৌশুলি হিসেবে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন নবরূপ মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের কর্মচারী প্রকাশ শিং (২০)।

পরদিন ২৯ এপ্রিল সকালে তানোর উপজেলার কলমা ইউনিয়নের শিংড়াপুকুর ব্রিজের পূর্বপাশের কাঁচা রাস্তায় তার রক্তাক্ত মরদেহ পাওয়া যায়। পরে পরিবারের সদস্যরা গিয়ে প্রকাশের মরদেহ শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে তানোর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় তার বাবা নির্মল শিং বাদী হয়ে ওই দিনই তানোর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলার এজাহারে নির্মল শিং অভিযোগ করেন যে, বাদল মন্ডলের সঙ্গে তার বড় ভাইয়ের স্ত্রী অঞ্জলী রানীর এক বছর যাবত অবৈধ সম্পর্ক চলছিল। একদিন বাদল মণ্ডল গোপনে অঞ্জলী রানীর ঘরে ঢুকে শারীরিক সম্পর্ক করার সময় তিনি এবং তার ছেলে প্রকাশ এই ঘটনা দেখে ফেলেন এবংতাদের হাতেনাতে ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেদিন বাদল শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। পরে তিনি এ ঘটনা তার বড় ভাই বিমল শিংকে জানান। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেননি।

এদিকে ঘটনা জানাজানির পর বাদল মণ্ডল তাদেরকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সেই থেকে নির্মল সিংয়ের সন্দেহ হয় যে, বিমল তাকে না পেয়ে অন্য আসামিদের সহযোগিতায় তার ছেলেকে খুন করেছেন এবং তিনি সেই মর্মে থানায় এজাহার দেন। পরে পুলিশ বাদল মণ্ডলকে গ্রেফতার করলে তিনি জানান, তাদের (বাদল মণ্ডল ও অঞ্জলী রানী) নামে পরকীয়া প্রেমের মিথ্যা অপবাদ দেওয়া হয়েছে মর্মে বিমলকে বোঝানো হয়। পরে বিমল, তার স্ত্রী অঞ্জলী এবং ছেলে সুবোধকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করেন এবং বাবার বদলে ছেলেকে খুন করেছেন।

এ ঘটনায় পরে অন্য অন্যদেরকেও পুলিশ গ্রেফতার করে মামালায় অন্তর্ভুক্ত করে। এ সময় আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। জবানবন্দি ও পুলিশি তদন্তে উঠে আসে যে, নিহত প্রকাশ তার চাচী অঞ্জলী রানী ও বাদল মণ্ডলের অবৈধ পরকীয়া সম্পর্কের কথা জেনে যান।

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চাচী অঞ্জলী, চাচা বিমল সিং, চাচাতো ভাই সুবোধ সিং ও কথিত প্রেমিক বাদল মিলে পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায়।

পুলিশ তদন্ত শেষে এই চার আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেয়। পরে আদালত ৪৫ কার্যদিবসে এই মামালায় মোট ২০ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। স্বাক্ষ্য গ্রহণ, তথ্য উপাত্ত, যুক্তির্তক উপস্থাপন শেষে আসামিদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় আদালত আর তাদের বিরুদ্ধে এই রায় ঘোষণা করেন।