নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি

‘এক বেলা আলুভর্তা আর আরেক বেলা ডাইল, মাছ-গুস্ত চোহেও দেহি না’

‘এক বেলা আলুভর্তা আর আরেক বেলা ডাইল, মাছ-গুস্ত চোহেও দেহি না’

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ষাটোর্ধ্ব রিকশাচালক আজমাদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘বড় বড় কথা কইয়্যা তো লাব নাই। এক বেলা আলুভর্তা আর আরেক বেলা ডাইল দিয়া খাই, মাছ–গুস্ত চোহেও দেহি না। তারপরও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জানাই যে প্রতিদিন দুই বেলা খাইতে পারি।’

বুধবার সকালে ময়মনসিংহ নগরের সানকিপাড়া বাজারের সামনে যাত্রীর জন্য অপেক্ষায় থাকা প্যাডেলচালিত রিকশাচালক আজমাদ হোসেন এসব কথা বলেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল গ্রামে।

প্রতিদিন ময়মনসিংহ শহরে রিকশা চালিয়ে তিনি জীবিকা নির্বাহ করেন। ময়মনসিংহ শহরে ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট। পাশাপাশি প্যাডেলচালিত হাতে গোনা কিছু রিকশা এখনো রয়ে গেছে গ্যারেজ–মালিকদের কাছে। সেসব রিকশা যেন অলিখিতভাবে বৃদ্ধ রিকশাচালকের জন্য বরাদ্দ থাকে।

প্যাডেলচালিত মন্থরগতির রিকশায় যাত্রীদের চড়তে অনীহা লক্ষ করা যায়। আজমাদের মতো বয়স্ক চালকেরা প্যাডেলচালিত পুরোনো ও জীর্ণ রিকশা নিয়ে সকালে নগরের সানকিপাড়া কাঁচাবাজারের মুখে বসে থাকেন। বাজারের ভারী ব্যাগ বহন করতে যাঁদের অসুবিধা হয়, কাছাকাছি দূরত্বের এমন যাত্রীরাই কেবল প্যাডেলচালিত রিকশায় চড়েন। গন্তব্যে নামার পর যাত্রীরা ১০ বা ২০ টাকা ভাড়া দেন।

বৃদ্ধ আজমাদ হোসেন বলেন, প্রতিদিন সকাল ছয়টায় বাড়ি থেকে রওনা হয়ে সকাল আটটায় ময়মনসিংহ শহরে পৌঁছান। তারপর আকুয়া গরুর খোঁয়াড় এলাকার একটি গ্যারেজ থেকে প্যাডেলচালিত রিকশা নেন। বিকেল পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে সন্ধ্যার মধ্যে আবার বাড়ি ফিরে যান। সারা দিনের রোজগারে কখনোই ৩০০ টাকা ছাড়ায় না। রিকশার প্রতিদিনের ভাড়া ৬০ টাকা আর নিজের যাতায়াত খরচ কমপক্ষে ৬০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে চলে সংসার।

গ্রামে শুধু বসতবাড়ি আছে আজমাদের। তাঁর সংসারে স্ত্রী আর দুই মেয়ে। প্রথম দুই সন্তান জন্মের পর মারা যায়। এর দীর্ঘ সময় পর দুই মেয়ের জন্ম হয়। বর্তমানে বড় মেয়ের বয়স ১৬ আর ছোট মেয়ের বয়স ১০ বছর।

প্রতিদিনের রোজগারে কোনোমতে চলে আজমাদ হোসেনের সংসার। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। মাছ বা মাংস খাওয়ার কথা এখন ভাবতেই পারেন না। কখনো অসুখে পড়লে তাঁর সংসারে বড় বিপদ নেমে আসে। তখন ধারদেনা করে চালাতে হয় সংসার। যত দিন বেঁচে আছেন, রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে যেতে চান তিনি।-প্রথম আলো