২৩ লাখ টাকা নিয়ে আটক সার্ভেয়ারকে আদালতে প্রেরণ, তদন্ত করবে দুদক

২৩ লাখ টাকা নিয়ে আটক সার্ভেয়ারকে আদালতে প্রেরণ, তদন্ত করবে দুদক

ব্যাগে ভরে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে ঢাকায় এসে ধরা পড়া কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে (৪০) আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁকে আজ শনিবার দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।

কক্সবাজার সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিনবলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজের সাধারণ ডায়েরির (জিডি) ভিত্তিতে সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু তিনি (সার্ভেয়ার) সরকারি কর্মচারী, বিপুল পরিমাণ টাকাসহ ধরা পড়েছেন, সেহেতু এ ঘটনার তদন্ত ও মামলার দায়িত্ব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। এ বিষয়ে দুদক কক্সবাজার সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালককে জানানো হয়েছে।

কক্সবাজার বিমানবন্দর সূত্র জানায়, আতিকুর রহমান সকাল ৯টার দিকে বিমানবন্দরে প্রবেশ করেন। তাঁর ব্যাগ স্ক্যান করলে বিপুল পরিমাণ টাকার স্তূপ দেখা যায়। সকাল পৌনে ১০টার ফ্লাইটে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ঘণ্টাখানেক পর ঢাকা বিমানবন্দরে পৌঁছালে তল্লাশিতে তাঁর ব্যাগভর্তি টাকা পাওয়া যায়। বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা তাঁকে আটক করেন। পরে আতিকুরের পরিচয় নিশ্চিত হয়ে বিকেল সাড়ে চারটার একটি ফ্লাইটে তাঁকে কক্সবাজারে ফেরত পাঠানো হয়। বিমানবন্দর থেকে আতিকুরকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সার্ভেয়ার আতিকুরের বাড়ি সিরাজগঞ্জ পৌরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের মীরপুর এলাকায়। তাঁর বাবার নাম আবদুর রহমান। আতিকুরের চাকরি বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে হলেও তিনি (সার্ভেয়ার) সংযুক্তিতে বছরখানেক ধরে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের ভূমি হুকুম দখল (এলএ) শাখার মহেশখালী উপজেলার দায়িত্বে ছিলেন। মহেশখালীতে সরকারের প্রায় ১৫টি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন আতিকুরসহ তিনজন সার্ভেয়ার। ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে জমির মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ বাবদ আতিকুর ওই অর্থ নিয়েছেন বলে সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

এ ঘটনায় কক্সবাজার সদর মডেল থানায় হওয়া জিডিতে বলা হয়েছে, সার্ভেয়ারকে টাকাসহ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৩ লাখ ৬৩ হাজার ৯০০ টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সার্ভেয়ার আতিকুর সন্তোষজনক জবাব কিংবা কারণ জানাতে পারেননি। সরকারি একজন কর্মচারীর কাছে এত পরিমাণ টাকা থাকা অস্বাভাবিক ব্যাপার। ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয় ওই জিডিতে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ বলেন, সার্ভেয়ার আতিকুর এই টাকার বৈধ কোনো উৎস দেখাতে পারেননি। এই টাকা নিয়ে তিনি উড়োজাহাজে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কার কাছে যাচ্ছিলেন, এত টাকা তিনি কোথায় পেলেন, এসব বিষয় তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

দুদক কক্সবাজার সমন্বিত কাযালয়ের উপপরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, টাকাসহ সার্ভেয়ার আতিকুর রহমানকে আটকের ঘটনায় থানায় একটি জিডি হয়েছে। ৫৪ ধারায় পুলিশ সার্ভেয়ারকে আদালতে পাঠিয়েছে। আদালত সার্ভেয়ারের টাকা জব্দের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দুদকে দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঢাকা কার্যালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে সার্ভেয়ার আতিকুরের বিরুদ্ধে প্রথমে দুর্নীতির মামলা হবে, তারপর ঘটনার অনুসন্ধানে মাঠে নামবে দুদক।

কক্সবাজারে সরকারের ৩ লাখ কোটি টাকার ৭২টি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তিনটি তদন্তে ভূমি অধিগ্রহণে মোট ৭৮ কোটি টাকা দুর্নীতির প্রতিবেদন দাখিল করা হলেও পরবর্তী সময় তা বাতিল করা হয়। এ দুর্নীতির তদন্তে নেতৃত্ব দেওয়া দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনকে প্রথমে বদলি এবং পরে গত ফেব্রুয়ারিতে চাকরিচ্যুত করা হয়।