এখন আইএমএফের লোন নিচ্ছেন কেন, সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

এখন আইএমএফের লোন নিচ্ছেন কেন, সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

আইএমএফের ঋণের দরকার নেই বলে এখন কেন সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে—সে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আইএমএফের কাছ থেকে লোন পেয়ে ডুগডুগি বাজাচ্ছেন। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের আইএমএফের লোনের দরকার নেই। তবে এখন আইএমএফের লোন নিচ্ছেন কেন?’

বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এ প্রশ্ন তোলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা’ মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির প্রতিবাদে এ সমাবেশ হয়।

বিএনপির মহাসচিব সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘লোন নিয়েছেন ভালো কথা, কিন্তু পরিশোধ করবেন কী করে?’ তিনি দাবি করেন, চুরি করে, দুর্নীতি করে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে সরকার দেশকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই রিজার্ভ খালি হয়ে গেছে। এ জন্যই সরকার আইএমএফ থেকে ঋণ নিচ্ছে। এই ঋণ শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই ঋণ আপনারা কী খাতে খরচ করবেন, কোথায় খরচ করবেন, জনগণকে জানান না। লোন নিয়ে জনগণকে আরেকটা ঋণের ওপর ফেলছে।’

সরকারি দলের নেতা এবং তাদের ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিদ্যুতের নামে এমন প্রচার করেছেন, এখন সেই বিদ্যুতের ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুরে গিয়ে অন্যতম বিলিয়নিয়ারদের একজন হয়ে গেছেন। দেশে টাকা রাখছে না। একটা দেশে নাকি বাংলাদেশিদের বিনিয়োগের হিড়িক পড়ে গেছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের লক্ষ্যই হচ্ছে চুরি করা, দুর্নীতি করা, দেশকে ফোকলা করে দেওয়া। আপনার আশপাশেই দেখেন, আওয়ামী লীগের যে পাতিনেতাটা আছে, তাঁর দাপটে থাকায় যায়? যাঁর স্যান্ডেল থাকত না, সে পাঁচতলা বাড়ি বানিয়েছে। ঢাকা শহরে এখন যত মার্সিডিজ, ল্যান্ড রোভার্স দেখা যায়, ইতিপূর্বে আর কখনো দেখেছেন?’

মামলাকে আওয়ামী লীগ হাতিয়ার বানিয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেই কারণে যে নেতা (তারেক রহমান) আট হাজার মাইল দূরে আছেন, তাঁর বিরুদ্ধে, তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে, তাঁর শাশুড়ির বিরুদ্ধে এবং আমাদের সবার প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে একটা পর একটা মামলা আর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেই চলেছে। যেদিন থেকে ক্ষমতায় এসেছে, সেই থেকে তাদের একমাত্র হাতিয়ার হচ্ছে মামলা দেওয়া।’

অতীতে ‘গায়েবি’ মামলার দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ঢাকা শহরে নতুন করে মামলা শুরু হয়েছে এবং পুরোনো মামলায় আবার গ্রেপ্তার শুরু করেছে। তিনি বলেন, ‘এ আরেকটা পুরোনো খেলা, এ খেলাই খেলছে ১৪ বছর ধরে। কিন্তু তাদের এতটুকু শিক্ষা হয় না। আজকের এই যে সমাবেশ, গত কয়েক দিনে বিভাগীয় সমাবেশগুলো—এ থেকে কি আপনারা বুঝতে পারছেন না, যে মামলা দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষদের অধিকার আদায়ের পথ থেকে সরানো যাবে না।’

নতুন ফন্দি ‘মায়ের কান্না’

বর্তমান সরকারের সময় গুম হওয়া পরিবারগুলোর সংগঠন ‘মায়ের ডাক’–এর পাল্টা ‘মায়ের কান্না’ নামে আরেকটি সংগঠন করে শেরেবাংলা নগর থেকে জিয়াউর রহমানের কবর সরানোর দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচির সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। ১৯৭৭ সালের ২ অক্টোবর সেনা ও বিমানবাহিনীর ফাঁসি কার্যকর হওয়া সৈনিকদের স্বজনেরা ‘মায়ের কান্না’ নামে সংগঠনটি করেন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘নতুন সব ফন্দিফিকির বের করছেন, যাতে আন্দোলনকে অন্যদিকে সরানো যায়। আমাদের গুম হওয়া পরিবারগুলোর একটা সংগঠন আছে—মায়ের ডাক। ওইটার পাল্টা একটা তৈরি করেছে—মায়ের কান্না। ১৯৭৭ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার যে বিপ্লব হয়েছিল, সেই সময়ে কারা কারা নাকি মারা গিয়েছিল। তারা দাবি করছেন, শহীদ জিয়া মানুষ হত্যা করেছেন, সেই জন্য তাঁরা জিয়াউর রহমানের কবর সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়া দাবি করেছেন।’

এটাকে হালকাভাবে না নেওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, এটা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী একটা চক্রান্ত এবং বাংলাদেশের মানুষের আন্দোলনকে ব্যর্থ করে দেওয়ার চক্রান্ত।

মির্জা ফখরুল আবারও সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা যে আন্দোলন করছি, এ আন্দোলন বিএনপির জন্য নয়। এই আন্দোলন জনগণের জন্য, এই আন্দোলন জনগণের ভোটের অধিকার, জনগণের বাঁচার অধিকার, তাঁদের সভা-সমাবেশের অধিকারের জন্য। এ আন্দোলন সব দলের অংশগ্রহণে একটা গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য।’

স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানীর সভাপতিত্বে সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুর সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক, মীর সরাফত আলী, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া প্রমুখ।