ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন

বড় ধরনের লোকসানে পাওয়ার গ্রিড

বড় ধরনের লোকসানে পাওয়ার গ্রিড

রাষ্ট্রায়ত্ত বিদ্যুৎ সঞ্চালন প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) প্রকল্প বাস্তবায়নে বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে বড় অংকের ঋণ নিয়েছে। টাকার বিপরীতে ডলারের অবমূল্যায়নের প্রভাবে বিদেশী ঋণে প্রতিষ্ঠানটির বড় ধরনের লোকসান হয়েছে। অবমূল্যায়নজনিত কারণে সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাব বছরে প্রায় ৫৩৭ কোটি এবং চলতি ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) ১৫৩ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে পিজিসিবির।

গতকাল অনুষ্ঠিত সভায় ২০২১-২২ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এবং ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করে পিজিসিবির পর্ষদ। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ হিসাব বছরে ২ হাজার ৩৩৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে আয় ছিল ২ হাজার ১৮৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আয় বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির মোট মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ১ কোটি টাকা। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে মোট মুনাফা ছিল ৮৬৩ কোটি টাকা। ২০২১-২২ হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন কার্যক্রম থেকে মুনাফা হয়েছে ১ হাজার ২৬ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, যা এর আগের হিসাব বছরে ছিল ৭৯৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

সুদ বাবদ ২০২১-২২ হিসাব বছরে পিজিসিবির ৪৪৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে এ খাতে ব্যয় ছিল ৩৯৪ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ওঠা-নামার কারণে সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির ৫৩৫ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকা। ২০২১-২২ হিসাব বছর শেষে প্রতিষ্ঠানটির ১২২ কোটি ৯১ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে নিট মুনাফা ছিল ৩২০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে নিট মুনাফা কমেছে প্রায় ৬২ শতাংশ। আলোচ্য হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ১ টাকা ৭২ পয়সা, যা এর আগের হিসাব বছরে ছিল ৪ টাকা ৫০ পয়সা।

সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরের পাশাপাশি চলতি হিসাব বছরে আয় বাড়লেও টাকার অবমূল্যায়নজনিত লোকসানের কারণে পিজিসিবির মুনাফা কমে গিয়েছে। ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির ৬৯১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা আয় হয়েছে। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে একই সময়ে আয় ছিল ৬৪২ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালন কার্যক্রম থেকে ৩৭৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা মুনাফা হয়েছে, যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩৪৯ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে সুদ বাবদ পিজিসিবির ব্যয় হয়েছে ১১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে একই সময়ে সুদ বাবদ ব্যয় হয়েছিল ১২৩ কোটি টাকা। প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ওঠা-নামার কারণে ১৫৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। যেখানে এর আগের বছরের একই সময়ে এ খাতে লোকসানের পরিমাণ ছিল ৩৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা। ২০২২-২৩ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিষ্ঠানটির ১০৪ কোটি টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে, যা এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১৩০ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস হয়েছে ১ টাকা ৪৬ পয়সা, যা এর আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ৮২ পয়সা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিজিসিবির কোম্পানি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আজাদ বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের বড় অংকের বিদেশী ঋণ রয়েছে। গত বছরের জুন শেষে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার অনুসারে এ ঋণের পরিমাণ যা ছিল তার সঙ্গে এ বছরের জুন শেষে বিনিময় হার অনুসারে ঋণের পরিমাণে বড় ধরনের ব্যবধান তৈরি হয়েছে। এ ব্যবধানকেই আর্থিক প্রতিবেদনে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার ওঠা-নামাজনিত লোকসান হিসেবে দেখানো হয়েছে। মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়নের কারণেই এ লোকসান হয়েছে।

ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের প্রভাবে নিট মুনাফা সংকুচিত হওয়ায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত পিজিসিবির বিনিয়োগকারীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। যেখানে এর আগের হিসাব বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ২০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল।-বণিক বার্তা