পঞ্চগড়ে সংঘর্ষ

খুলছে দোকানপাট, চলছে যানবাহন, জনমনে আতঙ্ক

খুলছে দোকানপাট, চলছে যানবাহন, জনমনে আতঙ্ক

পঞ্চগড়ে আহমদিয়া জামাতের (কাদিয়ানি) ‘সালানা জলসা’ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভকারী ও পুলিশের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের পর আজ শনিবার সকাল থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে খুলতে শুরু করেছে শহরের দোকাপাট। রিকশা-ভ্যানসহ অন্যান্য যানবাহন চলতে শুরু করেছে। তবে অন্য দিনের তুলনায় শহরে যান চলাচল কিছুটা কম দেখা গেছে।

এদিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়, জালাসি, ধাক্কামাড়া, তেতুলিয়া বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন এলাকায় পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। থেমে থেমে পিকআপ ভ্যানে বসে টহল দিচ্ছেন বিজিবি ও পুলিশ সদস্যরা। এ নিয়ে সাধারণ জনমনে এখনো কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, পঞ্চগড় শহরের উপকণ্ঠে আহম্মদনগর এলাকায় আহমদিয়া জামাতের শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী জলসা বন্ধের দাবিতে গতকাল দুপুরে জুমার নামাজের পর শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে মিছিল বের করা হয়। মিছিল নিয়ে বিক্ষোভকারীরা শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে সমবেত হন। সেখান থেকে তাঁরা মিছিল নিয়ে করতোয়া সেতুর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের থামিয়ে দেয়। একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা ছড়িয়ে–ছিটিয়ে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে ঢুকে পড়েন।

কিছুক্ষণ পর চৌরঙ্গী মোড়সংলগ্ন সিনেমা হল সড়ক থেকে একদল বিক্ষোভকারী মিছিল নিয়ে এসে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। তখন পুলিশ ধাওয়া দিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। একদল বিক্ষোভকারী আহম্মদনগর এলাকায় গিয়ে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের অন্তত ২৫টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত দফায় দফায় এ পাল্টাপাল্টি হামলা চলে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে পুলিশ, বিজিবি ও র‍্যাবের সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছোড়েন। এ ঘটনায় দুজন নিহত ও পুলিশসহ অন্তত অর্ধশত মানুষ আহত হন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে আহমদিয়াদের জলসা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

আজ সকালে শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে মানুষের ছোট ছোট জটলা। তাদের প্রায় সবার আলোচনার বিষয়বস্তু গতকালের সংঘর্ষের ঘটনা। শহরের সিনেমা হলের সামনে রাজমিস্ত্রি দুলাল হোসেন (৩৩) বলেন, ‘ভাই চোখের পলকে এত লোক কোথা থেকে আসিল বুঝা গেল না। কাদিয়ানিদের (আহমদিয়া) অনেকের বাড়িতে আগুন দেওয়ার পাশপাশি লুটও করেছে। গরুও নাকি হারাইছে কয়েকটা। সকালে গরু খুঁজতে আমাদের বাড়ির ওদিকে কাদিয়ানিরা গেছে।’

শহরের চৌরঙ্গী মোড় এলাকায় অটোরিকশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কাবুল আক্তার। কথা প্রসঙ্গে বললেন, ‘ভাই কালকে সারাদিন গাড়ি চালাইতে পারি নাই। হাতের কামাইয়ের ওপরে ছয়জনের সংসার। ভয়ে ভয়ে গাড়ি নিয়ে বের হইছি। কিন্তু রাস্তায় লোকজন কম। আজকে আবার কি হবে কে জানে।’

কথা কেড়ে নিয়ে টিউবওয়েল মিস্ত্রি ছবিরুল বলতে শুরু করলেন, ‘হামরাতো শহরটাতেই রহেচি। কমবেশি এলাকার লোকলাক চিনি। কিন্তু কাইলাকা যেইলা লোকক মিছিলত দেখা গেল ওইলা বেশির ভাগ বাইহিরের মনে হচে। শুনিচু টুনিরহাট, হাড়িভাসা, চাকলাহাটসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোক মিছিলোত আসিচে।’

শহরের অগ্রদূত প্যালেসের নিচে কাপড়ের দোকান নারী অঙ্গনের পরিচালক শাহজাদা বলেন, শহরজুড়ে যে ধাওয়া–পাল্টাধাওয়া, টিয়ারগ্যাস ছোড়াছুড়ি হয়েছে তার আতঙ্ক এখনো কাটেনি। অন্যান্য দিন সকাল ৯টার মধ্যে শহরের বেশির ভাগ দোকান খুলে যায়। আজকে সাড়ে ১০টা বাজে মাত্র কয়েকটা দোকান খুলেছে। তবে পুলিশ, বিজিবি টহল দিচ্ছে। আজকে হয়তো তেমন কিছু হবে না।

পঞ্চগড়ের পুলিশ সুপার এস এম সিরাজুল হুদা বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। শহর ও শহরতলীতে সাড়ে ৩০০ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি র‌্যাবের পাঁচটি টহল টিম ও বিজিবি ১৭ প্লাটুন সদস্য দায়িত্বে রয়েছেন। যেকোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে তাঁরা সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় আছেন।