রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন

রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেন মো. সাহাবুদ্দিন

বঙ্গভবনের নতুন বাসিন্দা মো. সাহাবুদ্দিন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আজ সোমবার শপথ নিয়েছেন। তিনি এমন এক সময় রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিলেন, যখন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিরোধ বেড়ে চলেছে। এই বিরোধের মূলে আছে নির্বাচনী ব্যবস্থা।

গত ১৭ এপ্রিল নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গ এসেছিল।

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে মনে করেন, ভোটকেন্দ্রে জনগণের যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সেই দায়িত্ব সুচারুভাবে পালনের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রতি তাঁর আহ্বান থাকবে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলগুলোর বিরোধ মেটাতে কোনো ধরনের আলোচনা বা সংলাপের উদ্যোগ নেওয়ার বিষয়ে নতুন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখবেন। রাষ্ট্রপতি হিসেবে তাঁর করণীয় কিছু থাকলে তিনি তা করবেন।

আগামী ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে। বিএনপিসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন দল নির্দলীয় সরকারব্যবস্থার দাবিতে আন্দোলন করছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সংবিধান অনুযায়ী অর্থাৎ তাদের সরকারের অধীনেই নির্বাচন হওয়ার কথা বলে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে সামনের দিনগুলোতে নির্বাচনী ব্যবস্থা নিয়ে দলগুলোর বিরোধ আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এই পটভূমিতে নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি কী ভূমিকা নেন, সেদিকে অনেকের নজর থাকবে। সহনশীল পরিবেশ তৈরিতে তিনি ভূমিকা রাখবেন, এমন প্রত্যাশাও আছে বহু মানুষের।

নির্বাচনকেন্দ্রিক ব্যবস্থাকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যে বিরোধ তৈরি হয়েছে, সেটি নিরসনে কোনো উদ্যোগ নেবেন কি না—এই প্রশ্ন করা হলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি এখন এ নিয়ে কিছু বলব না। আমি রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখব, আমার করণীয় কী আছে। আমার করণীয় যা থাকবে, তা আমি করব। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন অবশ্যই নিরপেক্ষ হতে হবে।’

একই সঙ্গে নতুন রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘একটি নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে আমার যা কিছু করার, আমি তা করব।’ তিনি আশা করেন, সংবিধান অনুযায়ী যথাসময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আস্থা অর্জনের প্রশ্ন
আওয়ামী লীগ গত ১২ ফেব্রুয়ারি মো. সাহাবুদ্দিনকে রাষ্ট্রপতি পদে প্রার্থী মনোনীত করে। পরদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। এর আগপর্যন্ত ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকের নাম নিয়ে নানা আলোচনা হয়। কিন্তু সব অনুমান, নানা জল্পনাকল্পনা ভুল প্রমাণ করে তাঁকে প্রার্থী মনোনীত করে আওয়ামী লীগ। তখন দলটির নেতাদের অনেকে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে দল এবং দলীয় আদর্শের প্রতি আনুগত্যের প্রশ্ন বড় বিবেচনার বিষয় ছিল।

বিএনপি এবং তাদের সমমনা দলগুলো নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে এখন পর্যন্ত অভিনন্দন জানায়নি; বরং বিএনপির বলে আসছে, তারা যেহেতু এই সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছে, ফলে সরকার কাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করল, এ নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই।

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থেকে সেই দলের মনোনয়নে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পর এখন অন্য দলগুলোর আস্থা কীভাবে অর্জন করবেন—-এই প্রশ্নে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আমি রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করব। আমি আমার জীবনের ২৭ বছর সিনিয়র জেলা জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। সেই দায়িত্ব একেবারে নিরপেক্ষভাবে পালন করেছি। কখনো কারও প্রতি পক্ষপাত করেছি বা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারিনি—এ ধরনের কোনো অভিযোগের সম্মুখীন কখনো হয়নি।’

মো. সাহাবুদ্দিন আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে আমি সবার সঙ্গে নিরপেক্ষ আচরণ করব। সংবিধানে যে দায়িত্ব দেওয়া আছে, তা আমি যথাযথভাবে পালন করব।’