নন্দিনী-২ জাহাজে বিস্ফোরণ

‘কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ত্রুটির কারণে জাহাজে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ’

‘কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ত্রুটির কারণে জাহাজে দ্বিতীয় বিস্ফোরণ’

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও ত্রুটির কারণে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ নামের তেলবাহী জাহাজে দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণ হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। জাহাজের স্টাফদের অসচেতনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী।

এদিকে, জাহাজ ডুবির ঘটনায় জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে এ কমিটি প্রতিবেদন দিবে বলে জানিয়েছেন জ্বালানি সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান। মঙ্গলবার (৪ জুলাই) ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে এ কথা জানান।

জানা যায়, সরকার দলীয় এক প্রভাবশালী নেতার আত্মীয় পরিচয় দিয়ে সাগর নন্দিনী জাহাজ কোম্পানির মালিক ডিপো কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনার তোয়াক্কা করতেন না। এ কারণে এ জাহাজ কোম্পানির বিরুদ্ধে কেউ কথা বলেতে সাহস পায়না। বিস্ফোরিত জাহাজটি থেকে অপর জাহাজে জ্বালানি অপসারণে ডিপো কর্তৃপক্ষ একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মালিক পক্ষকে জানায়। কিন্তু এর গুরুত্ব না দিয়ে জাহাজ কর্তৃপক্ষ অন্য প্রক্রিয়ায় বিকালে তেল অপসারণের কাজ শুরু করে। যদিও তা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় তেল অপসারণ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

ডিপো কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র জানায়, তাদের না জানিয়ে এই তেল অপসারণে ‘সাবমারসিবল’ পাম্প ব্যাবহার করায় স্পার্কিংয়ের মাধ্যমে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেজ) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, জাহাজ থেকে তেল অপসারণের বিষয়ে কিছু ত্রুটির কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে। এ ব্যাপারে অধিকতর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় মালিক পক্ষই দায়ী। ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের পর্যাপ্ত ফোম না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। তবে বিস্ফোরিত জাহাজটির সঙ্গে নোঙর করে রাখা সাগর নন্দিনী-৪ নামক আরেকটি জাহাজকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছি।

বরিশাল নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন বলেন, দ্বিতীয় বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ পুলিশ সদস্য আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তার মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। বার বার এ ধরনের নৌ দুর্ঘটনায় জাহাজ মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

জ্বালানি ও খনিজ সচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-রুটের পাশাপাশি ঝালকাঠিতে যেহেতু বিভিন্ন তেল কোম্পানির ডিপো রয়েছে তাই এখানে একটি নৌ ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করা যেতে পারে। কিন্তু বিষয়টি আমার মন্ত্রণালয়ের না হওয়ায় সুপারিশ করা হবে। এই ঘটনায় প্রথমে জেলা প্রশাসন ও পদ্মা ওয়েল কোম্পানি পৃথক দুটি, পরে দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস এবং মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আরও ২ টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি ফিটনেস এবং বৈধ কাগজ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা হবে।

এর আগে শনিবার (১ জুন) দুপুর ২টার দিকে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পদ্মা অয়েল কোম্পানির জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার ‘সাগর নন্দিনী-২’ জাহাজে বিস্ফোরণ ঘটে। দুর্ঘটনায় জাহাজের পেছনের তিনতলা বিশিষ্ট চালকের কক্ষ ও কেবিনের অংশ উড়ে যায়। এতে ৪ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়।