খাঁচাবন্দী ব্যালট বাক্স নিয়ে লেখক-শিল্পী-শিক্ষকদের মুক্তির যাত্রা

বিনা ভোটের সরকারকে বৈধতা দিতে বড় লেখক, শিল্পীরা সাফাই গাইছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক: সমাবেশে বক্তারা

বিনা ভোটের সরকারকে বৈধতা দিতে বড় লেখক, শিল্পীরা সাফাই গাইছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক: সমাবেশে বক্তারা

লোহার এক খাঁচা। তার মধ্যে বন্দী ব্যালট বাক্স। মুখে মুখোশ, গায়ে কালো পোশাকে কয়েকজন সেই খাঁচা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন ছুটির দিনের বিকেলে রাজধানীর রাজপথে। মাইকে বাজছে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গান ‘কারার ঐ লৌহ–কবাট, ভেঙে ফেল কর্‌রে লোপাট...’। গানের সঙ্গে গলা মিলিয়ে খাঁচাবন্দী ভোটের বাক্সবাহীদের পেছনে ‘মুক্তির যাত্রা’ নামাঙ্কিত ব্যানার নিয়ে সারিবদ্ধভাবে চলছেন লেখক, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিকসহ অনেকে।

শুক্রবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে এই যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-সাংবাদিক’দের যৌথ আয়োজনে। ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এই আয়োজনে প্রচলিত রীতির কোনো সভাপতি বা বক্তাও ছিলেন না। আয়োজকেরা জানালেন, সাংগঠনিকভাবেও তাদের কোনো সভাপতি বা আহ্বায়ক নেই। গণতন্ত্রকামী, প্রতিবাদী সমমনা লেখক, শিল্পী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ এই আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।

‘কণ্ঠে মেলাও সুর/ দুঃশাসন হবে দূর’, ‘নির্বাচন কারও অভিনয় মঞ্চ নয়’, ‘ভোট নাই/ নাগরিক অধিকারও নাই’ এমন স্লোগান লেখা ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার নিয়ে বিকেল চারটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই লেখক-শিল্পীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ান। তাঁরা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দেন।

সমাবেশে অংশ নেন প্রকাশক সাঈদ বারী, শিল্পী সায়ান, বিথি ঘোষ, দিনাত আজিম, সাংস্কৃতিক কর্মী সীমা দত্ত, কবি অমল আকাশ, সাংবাদিক মাহবুব মোর্শেদ, লেখক জিয়া হাসান, এহসান মাহমুদ, অভিনেতা দীপক সুমন, সংগঠক নাহিদ হাসানসহ অনেকে। যাত্রা শুরুর পর যোগ দেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

সমাবেশে লেখক রাখাল রাহা, শিল্পী অরূপ রাহী, কবি রহমান মফিজ, লেখক বাকী বিল্লাহ মুক্তির যাত্রা ও দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। তারা বলেন, দেশে এখন এক ক্রান্তিকাল চলছে। ১৫ বছর ধরে মানুষ ভোট দিতে পারছেন না। একের পর এক নির্বাচনের নামে প্রহসন মঞ্চস্থ করা হয়েছে। সেই একই কায়দায় কর্তৃত্ববাদী সরকার আবারও একটি নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছে। এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

কেবল ভোটাধিকারই নয়, মানুষের কথা বলার অধিকার পর্যন্ত কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বক্তারা। তারা বলেন, কেউ তার নিজের ক্ষোভ, দুঃখ, কষ্টের কথা ফেসবুকে লিখলে তাকেও নিবর্তনমূলক কালো আইনে গ্রেপ্তার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হচ্ছে।

বক্তারা বলেন, গত শতকের ষাটের দশকে জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে দেশের লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, শিক্ষকেরা প্রথম সারিতে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অথচ এখন দেশের খ্যাতনামা লেখক, শিল্পীরা ক্ষমতাসীনদের তাবেদারি করছেন। তারা বলেন, বিনা ভোটের সরকারকে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার জন্য বড় লেখক, শিল্পীরা সাফাই গাইছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক।

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ঘণ্টাখানেক অবস্থানের পর ‘রুদ্ধ গণতন্ত্র’ নামে খাঁচায় বন্দী ভোট বাক্স সামনে নিয়ে ‘মুক্তির যাত্রা’ শুরু হয়। কদম ফুল ফোয়ারা, হাইকোর্ট, মৎস্য ভবন মোড়, রমনা উদ্যান, ঢাকা ক্লাব হয়ে শাহবাগ চত্বরে এসে গণতন্ত্রের জন্য প্রতিবাদী লেখক-শিল্পী-শিক্ষকদের এই মুক্তির যাত্রা শেষ হয়।