পঞ্চগড়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারককে জুতা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। একটি হত্যা মামলার ১৬ জন আসামির জামিন মঞ্জুর করায় আদালতের বিচারককে লক্ষ্য করে মামলার বাদী জুতা নিক্ষেপ করেন। ওই বিচারক হলেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিট্রেট অলরাম কার্জি। তাকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করেন মামলার বাদী মিনারা আক্তার। এ ঘটনায় তাকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।
আদালত ও আইনজীবী সূত্রে জানা যায়, গত ৫ই ডিসেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার সাতমেরা এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে দুই ভাইয়ের পরিবারের মারামারিতে ইয়াকুব আলী (৮৩) নামের বড় ভাইয়ের মৃত্যু হয়। ওই দিন রাতে নিহতের মেয়ে মিনারা আক্তার বাদী হয়ে ছোট ভাইসহ ১৯ জনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। গতকাল আসামিদের মধ্যে প্রধান আসামিসহ ৩ জন বাদে ১৬ জন আসামি আদালতে হাজির হয়ে জামিন আবেদন করলে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ ঘটনায় উত্তেজিত হয়ে বাদী মিনারা আক্তার বিচারককে লক্ষ্য করে জুতা ছুড়ে মারেন। এ সময় বিচারকের নির্দেশে তাৎক্ষণিক বাদী মিনারাকে আটক করে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়।
নিহতের বড় ছেলের স্ত্রী রওশনা আক্তার লিলিসহ বাদী পক্ষের স্বজনরা অভিযোগ করে বলেন, এমন একটি হত্যা মামলার আসামিদের কীভাবে কোন আইনে জামিন দেয়া হয়। আমরা এর বিচার চাই। আবার আমাদের মামলার বাদীকে পুলিশ আটক করে রেখেছে। তাকে ছেড়ে না দেয়া পর্যন্ত আমরা আদালত থেকে যাবো না। জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু মো. ইউনুস আলী লেলিন বলেন, বাদীর নিম্ন আদালতের রায় যদি পছন্দ না হয় তাহলে উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু বাদী আজকে বিচারক অলরাম কার্জিকে লক্ষ্য করে স্যান্ডেল ছুড়ে মেরেছে। জুতাটি বিচারকের সামনে থাকা গ্লাসে লেগে নিচে পড়ে যায়। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। জামিনের ঘটনাটি আদালতের এখতিয়ারের মধ্যে আছে। বাদীর উচ্চ আদালতে যাওয়ার সুযোগ আছে।
বাদী পক্ষের আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম হাবিব বলেন, কয়েকদিন আগে বাদীর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। আজকে তাদের বাড়িতে কুলখানি হচ্ছে। এ অবস্থায় একটি হত্যা মামলায় সব আসামির জামিন দেয়া কোনোভাবে কাম্য নয়। বিচারকের এমন অর্ডারে আমরা তাৎক্ষণিক আদালত ত্যাগ করে চলে আসি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী রাকিবুত তারেক বলেন, আসামিদের ২৬শে ডিসেম্বর পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছেন আদালত। মামলার মূল আসামিরা আত্মসমর্পন করেননি। যারা আত্মসমর্পন করেছেন তাদের অধিকাংশই নারী ছিল। এ ছাড়া আসামিদের বক্তব্য ছিল- ওই ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। মামলার জব্দ তালিকা ও সুরতহাল রিপোর্টের নথিতে এই তথ্য নেই। তাই সার্বিক বিবেচনা করে এই জামিন দেয়া হয়েছে।