ভোট না দেওয়ায় বিএনপি নেতাদের বাড়ির বিদ্যুৎ–সংযোগ কাটার অভিযোগ

ভোট না দেওয়ায় বিএনপি নেতাদের বাড়ির বিদ্যুৎ–সংযোগ কাটার অভিযোগ

সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ভোট দিতে না যাওয়ায় বিএনপির কয়েক নেতা-কর্মীর বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগ কেটে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এমনটি ঘটিয়েছেন বলে বিএনপির নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। গত ৮ জানুয়ারি উপজেলার চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের হাটশিরা গ্রামে বিএনপির অন্তত ৯ নেতা-কর্মীর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটেছে।

যাদের বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়েছে, তারা হলেন কাজীপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশাদুল ইসলাম, চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আবু রায়হান, চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমীন এবং বিএনপির কর্মী বদিউজ্জামান, হায়দার আলী, জহুরুল ইসলাম, দুদু মিয়া, আজিবার মাওলানা ও হাসান সরকার।

৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে এই নেতা-কর্মীর বসতবাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। এর পর থেকে পরিবারগুলো বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছে।

কাজীপুর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশাদুল ইসলাম বলেন, ‘কেন্দ্রের নির্দেশনা ছিল বিএনপির নেতা-কর্মীরা যেন ভোটকেন্দ্রে না যান। এ কারণে আমাদের বিরুদ্ধে ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ায় এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। পরে ৮ জানুয়ারি রাতে চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ও উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেকুল ইসলামের নেতৃত্ব ২০-২৫ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী একত্র হয়ে বিএনপির ৯ নেতা-কর্মীর ১৪টি বৈদ্যুতিক লাইন কেটে দেন। সেই দিন থেকে বিদ্যুৎহীন রাত কাটছে আমাদের।’

উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আশাদুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে তারা গত ৯ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ কাজীপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। এরপরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে ডিজিএম ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এ সম্পর্কে একটি অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুতই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বলেন, কারও ভোটকেন্দ্রে যাওয়া না যাওয়া তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। এটিকে পুঁজি করে বিদ্যুতের লাইন কেটে দিতে হবে, এটি হতে পারে না। এমন ঘটনা চরম অমানবিক। তাঁরা তো নিয়ম মেনে বিদ্যুৎ–সংযোগ নিয়েছেন। বিলও পরিশোধ করা আছে। তাঁরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন।

উপজেলা কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আমার নাম বলা হচ্ছে। যুবদল নেতা আশাদুল আমার মামাতো ভাই। আমি এসব বিষয়ে জানতাম না। পরে শুনেছি, তাঁর বাড়ির বিদ্যুতের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। তবে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি আছেন, যিনি পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদারের কাজ করেন। তাঁর কাছে জিজ্ঞাসা করলে এর সত্যতা পাওয়া যাবে।’

এ বিষয়ে পল্লী বিদ্যুতের ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘৮ জানুয়ারি রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল কাদের, হায়দার মেকার, শাহাদাত, মুন্নাফসহ ৫০-৬০ জন এসে আমাকে জোর করে নিয়ে গিয়ে বিদ্যুৎ–সংযোগগুলো কাটতে বলেন।’

চালিতাডাঙ্গা ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের বলেন, ‘যাঁদের বিদ্যুৎ–সংযোগগুলো কাটা আছে, তাঁদের উপজেলা আওয়ামী লীগ অফিসে যোগাযোগ করতে বলেছি। বিষয়টি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান দেখবেন।’

কাজীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি কোনো রাজনৈতিক বিরোধের বিষয় নয়। পারিবারিক বিরোধ থেকে এমনটি ঘটেছে। দ্রুত বিদ্যুৎ–সংযোগগুলো দিয়ে দিতে বলা হয়েছে।