করোনায় উপলব্ধি: আগামীতে কি করা উচিত

করোনায় উপলব্ধি: আগামীতে কি করা উচিত

কর্নেল (অবঃ) নাজমুল ইসলাম তাপাদার

আল্লাহ সুবহানুতা'লার একান্ত দয়ায় পৃথিবীবাসী ২০২১ এ পদার্পণ করেছে।এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ২০২০ খুব স্বাচ্ছন্দ্যের বছর ছিল না। কোভিড ১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কয়েক লক্ষ প্রাণের মৃত্যু ঘটেছে আর কোটি কোটি মানুষকে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়েছে পুরো বছর জুড়ে। নিঃসন্দেহে এটি আল্লাহ জাল্লাশানুহুর মহাপ্রজ্ঞাময় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সংঘটিত হয়েছে।

বিশ্বের সকল দেশ যুগপতভাবে এই প্রাণঘাতী মহামারীতে প্রায় সমভাবে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা এর প্রতিকার করতে ও প্রতিরোধ গড়তে তেমন কিছুই করতে পারিনি বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার জ্ঞান দিয়েও। তাই একথা আজ কারো বুঝতে বাকী নেই যে এমন মহাবিপর্যয় সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে; আর সেটি আমাদের বল্গাহীন স্বেচ্ছাচারিতা, ক্ষমার অযোগ্য আনুগত্যহীনতা আর প্রতিপালকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হওয়ার চরম ধৃষ্টতা দেখানোর অপরাধে। বিশ্বাসী, অবিশ্বাসী নির্বিশেষে সকলেই তার হেতু উপলব্ধি করতে পেরেছি। যদিও এটি স্বীকার করার মত সৎসাহস অনেকেই এখন পর্যন্ত দেখাতে পারিনি।

এ অবস্থা সৃষ্টি হবার মূল কারণ হলো স্রষ্টার দেয়া নীতিবোধের কম্পাসটি আমরা সজ্ঞানে ভেঙ্গো দিয়েছি, জীবন পরিচালনায় রাসূলের (সা:) নূরানী সুন্নতের লাইট হাউসকে বাদ দিয়ে আমরা ভ্রান্ত আলোর কুহেলিকাময় আহবানে সর্বনাশের পানে ছুটছি। আর সূবর্ণ বন্দরের দিকে এগিয়ে যাবার ন্যাভিগেশনাল চার্টটি উদাসীন ভাবে হারিয়ে দিশাহীনভাবে নিরুদ্দেশের পানে যাত্রা করছি। অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় আমরা এসময়ে নৈতিক দেউলিয়াপনার শেষ সীমান্তের সুউচ্চ খাড়া পাহাড়ের কিনারায় দাঁড়িয়ে; আর এক পা পিছালেই পৃথিবী নামের গ্রহটির বাসিন্দার সকলেই গভীর খাদের অথৈ আঁধারে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাব। তাই সদ্য সমাগত ২০২১ সালটিতে সিদ্ধান্তহীনতা আর দোদুল্যমানতায় কাল ক্ষেপন করার কোন অবকাশ নেই।

অবাধ্যতার আঁধার চিরে, ভ্রান্তি বিলাসিতা পরিত্যাগ করে উদিত করতে হবে বিবেকের সূর্যকে।মোদ্দাকথা we should return to our senses অর্থাৎ আমাদের শুভবুদ্ধির জাগরণ ঘটাতে হবে। অতঃপর সেই একক মহাপরাক্রমশালীর কুদরতী পায়ে মাথা ঠুকে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে আমাদের অতীতের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণ চাইতে হবে। আর আগত দিনগুলোতে সকল অবাধ্যতা পরিহার করে প্রতিপালকের প্রতি নিরংকুশ আনুগত্যশীল থেকে তাঁর করুনা ভিক্ষা করে ধরার বুকে আসমানী প্রশান্তির ধারা নামাতে হবে। এজন্য দুনিয়ার প্রতিটি মুসলমানকে পরিশুদ্ধ আ'মালিয়াত ও উন্নত আখলাক্বিয়াত প্রয়োজন। আমাদের আরেকটি কথা মনে রাখা দরকার, আল্লাহ তালার মেহেরবাণী প্রাপ্ত না হলে ভ্যাক্সিন আর চিকিৎসাবিদ্যার তথাকথিত অগ্রগতি এটি নিরাময়ে কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে কখনোই সক্ষম হতে পারবে না। স্রষ্টার আনুকূল্য ব্যতিরেকে সর্বগ্রাসী এ মহামারী থেকে স্থায়ী মুক্তি লাভ নিতান্তই অসম্ভব।

আর এ কথাটি বলার কোন অপেক্ষা রাখেনা যে কার্যকর ভ্যাক্সিনের আবিষ্কার ও তার কার্যকারীতাও তাঁর ঐশী অনুমোদনের উপর নির্ভর করে। কেননা আবিষ্কৃত ভ্যাক্সিনটিওত তাঁর সৃষ্ট সামগ্রী থেকে এবং তাঁরই প্রদত্ত মেধা খাটিয়ে করা হয়েছে, হচ্ছে ও হবে। অতএব সকল সম্পদের একক প্রতিপালক ও একচ্ছত্র মালিকের প্রতি আমাদের নিরংকুশ আনুগত্য প্রদর্শন ও নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করতে হবে। আল্লাহ আয্যা ওয়া জাল্ল আমাদেরকে বিষয়টি ঈমানী জযবা আর অন্তরঙ্গ আলোকে হৃদয়ঙ্গম করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

লেখক

কর্নেল (অবঃ) নাজমুল ইসলাম তাপাদার
নিউ ইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র