বেগম জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা ও জামিন টালবাহানা: রাজনৈতিক শিষ্টাচারের কবর

বেগম জিয়ার নামে মিথ্যা মামলা ও জামিন টালবাহানা: রাজনৈতিক শিষ্টাচারের কবর

শামসুল আলম


তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার একটি মামলায় স্থগিত হওয়া জামিন বহাল করেছে আপিল বিভাগ। এটা গতকালকের খবর। এনিয়ে প্রেস মিডিয়া সামাজিক মাধ্যম জুড়ে নানা আলোচনা এবং স্পেকুলেশন চলছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের সন্দেহ- জামিন পেলেও তিনি মুক্তি পাবেন না। তার কারণ দেশের মানুষ জানে বেগম খালেদা জিয়ার এই কারাদণ্ড, জেল, জামিন স্থগিত ইত্যাদি সবই একজনের ইচ্ছায় হচ্ছে। যিনি জনগণের ম্যান্ডেট ছাড়াই ক্ষমতা দখল করে আছেন। মূলত তিনি ক্ষমতা অটুট রাখতেই এসব মামলা, রায়, কারাদণ্ড ও জামিন নিয়ে টানাটানি করছেন। তবে অরফানেজ মামলায় জামিন পেলেও আরো কয়েকটি মামলায় সরকার তাকে শ্যোন এরেস্ট দেখিয়ে রেখেছে। সেগুলোতে জামিন হওয়ার পরেই বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলতে পারে।

বেগম জিয়ার নামে কিসের এত মামলা? বলা হচ্ছে- কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাস পোড়ানোর মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিতে হবে। তবে লোয়ার কোর্ট ইতোমধ্যে জামিন নাকচ করেছে, তাই ছুটতে হবে ওপরের দিকে। মামলাটির ঘটনার বিবরণে প্রকাশ- ২০১৫ সালের ২ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম এলাকায় আইকন পরিবহনের একটি চলন্ত বাসে পেট্রলবোমা হামলায় ৭ জন বাসযাত্রী পুড়ে মারা যান। তখন বিএনপির ডাকা লাগাতার অবরোধ চলছিল। সেই বাসে হামলা নিয়ে পুলিশী মামলায় হুকুমের আসামী করা হয়েছে বেগম জিয়াকে। কিন্তু একথা সবাই জানে যে, ঘটনার একমাস আগে থেকে বেগম জিয়া তার গুলশানের অফিসে সরকারী বাহিনী দ্বারা গৃহবন্দী ছিলেন। ঐভবন ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। কাউকে ঢুকতে বা বের হতে দেয়নি। এমনকি খাদ্যদ্রব্য ঢুকতে দেয়নি। গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ লাইন ও টেলিফোন লাইন কেটে দেয়া হয়। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেয়া হয়। জ্যামার লাগিয়ে এলাকায় সিগনাল ঢোকা বন্ধ করা হয়। মোট কথা, কারাগারের চাইতেও ভয়াবহ খারাপ অবস্থায় রাখা হয়। এনিয়ে ঐ এলাকার অধিবাসী এবং কূটনৈতিক অফিসগুলি প্রতিবাদও করেছিল তখন। তবে, বেগম জিয়া এই বন্দী অবস্থায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থেকেও বাস পোড়ানোর মামলার আসামী হলেন! বিস্ময়!! দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের পুলিশবাহিনী বেশ করিৎকর্মা। কুমিল্লার পুলিশ সুপারের ভাষ্যমতে- বাসটি ১১০ কিলোমিটার বেগে চলছিল। একজন আহত যাত্রীর সাক্ষাৎকারে ৭১ টিভি প্রকাশ করে। হামলার পরপরই তিনি পাশে পুলিশ দেখেছেন। কিন্তু তারা কোনো প্রকার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। টিভির জনপ্রিয় আলোচক সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামান তার সেনাবাহিনীর অভিজ্ঞতা থেকে ব্যাখ্যা করেন। ১১০ কিলোমিটার বেগে চলন্ত গাড়িতে বোমা নিক্ষেপ করা কোনো সাধারন মানুষের হাত দ্বারা সম্ভব নয়। আবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম নিশ্চিত করে বলেছেন। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত বাহিনী নাকি ঐ পেট্রলবোমা ছুঁড়েছিল এবং তাতে ফসফরাস ব্যবহার করা হয়েছিল। রাজনৈতিক উপদেষ্টা সাহেব এতটা নিশ্চিত হলেন কি করে? তার কাছে কি বোমার রেসিপিও ছিল? কাজেই, কাজটি দেশের কোন্ প্রশিক্ষিত বাহিনী করেছে তা সহজেই অনুমেয় (কান পাতলেই তাদের নাম র‌্যাংক শোনা যায়)। অথচ এই ঘটনার হুকুমদাতা হিসাবে করিৎকর্মা পুলিশ বেগম খালেদা জিয়াকে আসামী করেছে, যখন তিনি ছিলেন কার্যত বন্দী।

এ ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বেগম খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মারা যান মালয়েশিয়াতে। মরদেহ আনা হয় দেশে। শোকে মুহ্যমান বেগম জিয়ার জীবনহানির আশংকা দেখা দিলে তাকে যখন ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়। এরি মাঝে বিনা ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমবেদনা জানাতে হাজির হন বেগম জিয়ার অফিসের অবরুদ্ধ ভবনে যান। যদিও প্রধানমন্ত্রীর অফিসকে আগেই বলা হয়েছিল- উনাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এসব বিষয় অবহিত হওয়ার পরও রাত সাড়ে ৮টার দিকে শেখ হাসিনা গুলশানে ৮৬ নম্বর রোডের সামনে গিয়ে ফেরত আসেন। এ নিয়ে টকশোতে সরকার সমর্থক আলোচকরা বিএনপিকে চরম ধোলাই দেয়। অথচ কেউ শব্দটি করলো না যে, ঐ দিনই কয়েক ঘন্টা আগে বেগম জিয়ার নামে যাত্রাবাড়িতে বাস পোড়নোর অভিযোগে আরেকটি মিথ্যা মামলা দেয় পুলিশ। ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সেটাও পুলিশ পাহারায়। অথচ মামলা হয় বেগম খালেদা জিয়ার নামে। মোটকথা, পুত্রহারা মাতাকে সান্ত্বনা বা শোক জানানোর বদলে তার নামে আগে মিথ্যা মামলা ঠুকে দিয়ে গুলশান যাওয়ার নাটক করেছিলেন শেখ হাসিনা। এটাই ইতিহাস!

ঐ সময় আরো অনেকগুলো বাসে হামলার ঘটনা ঘটে। যাতে অনেক মানুষ হতাহতের মত দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে। কিন্তু দেখা গেছে- অবরোধ ডাকে বিরোধী দল। কিন্তু সরকারী দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কাছে পাওয়া যায় বিপুল পরিমাণ পেট্রলবোমা, ককটেল ও অস্ত্রশস্ত্র। এমনকি পেট্রলবোমা হামলা করার সময়ও হাতে নাতে ধরা পড়ে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। তাছাড়া যেসব বাসে বড় বড় হামলা হয়েছে সেগুলো বেশিরভাগই ছিল সামনে পিছনে কড়া পুলিশ পাহারা। বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়েছে যে, ঐসব বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে সরকারী দলের কর্মীরা এবং সরকারী সংস্থার লোকেরা। যা বিরোধী দলকে ঘায়েল করতে। এ সংক্রান্তে ঢাকার পুলিশ কমিশনারের একটি স্বীকারোক্তি অনলাইনে আছে, “দেশবাসী জানে, মন্ত্রীরা জানে, ব্যবসায়ীরা জানে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জানে, বাইরের লোক জানে, সিভিল সোসাইটির লোক জানে, এই যে বিভিন্ন সিভিল ক্যাডার তারা জানে, যে সরকারকে টিকিয়ে রাখছে পুলিশ। ২০১৩ সালে আন্দোলন দমাইছে পুলিশ, চৌদ্দ সালে ইলেকশনও করাইছে পুলিশ, গত তিন মাসে আগুন ধরাইছে পুলিশ।” বিএনপির ডাকা অবরোধের সময় আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ সেক্রেটারী পংকজ দেবনাথ তো তার নিজের মালিকানাধীন বিহঙ্গ পরিবহনের কয়েকটি বাস পুড়িয়ে মানুষ মেরেছেন। আবার সরকার থেকে ক্ষতিপুরনও নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। মাঝখান থেকে বলি হয়েছে কিছু নিরিহ বাসযাত্রী। এসব খবর ফাঁস করে দিয়েছেন মেহেন্দীগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি। ঐসব বাস জ্বালানোর সময় যে কড়া পুলিশ পাহারা ছিল। তার ধারে পাশে অবরোধকারীদের পৌঁছার সাহস থাকার কথা নয়। তাহলে পুলিশের সরাসরি গুলিতে তাদেরকে প্রাণ দিতে হতো। কিন্তু এরকম একটি ঘটনাও ঘটেনি। বরং উল্টো ঘটনা ঘটেছে। হামলা হয়েছে নিশ্চিন্তে, মানুষও মারা গেছে, হামলাকারীদের কেউ চোখেও দেখেনি, কিন্তু মামলা হয়েছে বিএনপি জামায়াতের নামে। এসব মামলার আসামীও করা হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াকে।

বেগম খালেদা জিয়ার নামে মোট মামলার সংখ্যা কত, তা সঠিকভাবে কেউ হয়ত জানে না। কয়টা মামলায় ওয়ারেন্ট আছে তাও নিশ্চিত না। কয়টা মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখিয়েছে তা নিয়েও সরকার করছে লুকোচুরি। জামিন কয়টায় নিতে হবে সেটাও গোজামিলের মধ্যে রেখেছে সরকার। মিডিয়াতে খবর পাওয়া মতে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট ৩৪/৩৫টি মামলা/অভিাযোগ করেছে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার বা তাদের স্তাবকরা। তবে এগুলোর সঠিক নাম ধাম এবং অভিযোগ বের করা এত সহজ নয়। যতদূর জানা গেছে, ৩৪টি মামলার মধ্যে ১৯টি বিচারাধীন। এই ১৯টির মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি ১৪টি মামলা বিচারের জন্য ঢাকার বকশীবাজারে স্থাপিত বিশেষ জজ এজলাসে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতি মামলা, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলা, নাইকো মামলা (একই মামলায় হাসিনার অংশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে সরকার), গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি দুর্নীতির মামলা। অন্য ৩০টি মামলা করেছে ২০১৪ সালের ভুয়া নির্বাচনের পর। এরমধ্যে রাষ্ট্রদ্রোহ, গাড়ি পোড়ানো, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, শেখ মুজিবকে নিয়ে কটূক্তি, নিজ জন্মদিন পালনের অভিযোগে এসব মামলা হয়। পুলিশ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও আইনজীবীরা এসব মামলা করেছেন। এর মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে ঢাকায়, কুমিল্লায় তিনটি এবং পঞ্চগড় ও নড়াইলে একটি করে মামলা রয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মানহানির অভিযোগে করা একটি মামলা বর্তমানে স্থগিত। নড়াইলে মানহানির অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে।

কোনো উপযুক্ত কারণ ছাড়াই বেগম খালেদা জিয়ার নামে একাধিক মামলা ঠুকে দিয়ে নাম কামানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত আওয়ামী ভাড় লীগের সভাপতি এবি সিদ্দিক। সিদ্দিকের সমস্যা হলো- এসব করে সে শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে- যাতে করে একটি পদ মিলে। ভাড় সিদ্দিকের এসব মামলাবাজির যন্ত্রনাকে আদালত নামক রঙ্গশালার ছোটবড় সব জজ বাহাদুররাও এন্টারটেইন করে থাকেন। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কোর্ট এবং ওয়ারেন্ট তামাশা চরমে উঠে ২০১৫ সালের এপ্রিলে। তখন ২/৩টি ওয়ারেন্ট জারি করে গুলশান থানার দিকে পাঠায়। কিন্তু গুলশান ওসি এবং সরকার ওয়ারেন্ট নিয়ে লুকোচিুরি খেলে। শেষে ৩৪ দিনেও নাকি সে ওয়ারেন্ট থানায় পৌছেনি। কারণটা খুব সহজ। ঐ ওয়ারেন্ট তামিল করার মত ক্ষমতা তখনকার আন্দোলনে চেপ্টা মৃতপ্রায় সরকার ও পুলিশের ছিল না। কারণ বিএনপি তখন লাগাতার আবরোধে ছিল। ঐ সময় ওয়ারেন্ট বা কোর্টগিরি দেখাতে গেলে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত হতো হতো। তাই অগত্যা, গ্রেফতারী পরোয়ানা হাওয়া করে দেয়া ছাড়া উপায় ছিল না। এনিয়ে তখন বিস্তর হাসাহাসি হয়েছিল। একই রকম পাগালামির ঘটনা ঘটে এবছর ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় ফরমায়েশি রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার পরে। তখন আইজি প্রিজন্স ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার মিডিয়াকে জানান, কুমিল্লার দু’টি মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে শ্যোন এরেস্ট দেখানো হয়েছে। এনিয়ে ব্যাপক সমালোচনা উঠলে দু’দিন পরে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সংশোধনী দেন। অরফানেজ মামলা ছাড়া আর কোনো মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে এরেস্ট দেখানো হয়নি, হবেও না। কিন্তু দুই মন্ত্রীর কথা ঠিক থাকেনি। অরফানেজ মামলায় জামিন হওয়ার পরে ঠিক এ মুহুর্তে স্টক থেকে নিত্য নতুন মামলায় শ্যোন এরেস্টের খবর পত্রিকায় আসছে।

সর্বশেষ খবর মতে, বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত হতে আরো ৬টি মামলায় জামিন পেতে হবে। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৩টি, ঢাকায় ২টি ও নড়াইলে একটি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে ৩টি মামলা মানহানির। দুটি মামলায় জামিন চাইতে গেলে একটির তারিখ দেয়া হয়েছে ৮ জুন, আরেকটিতে ৮ জুলাই। অর্থাৎ বানোয়াট মামলা ও তারিখের জালে বেগম জিয়াকে আটকে রাখার পথ ধরে সরকার। যেহেতু কোর্ট শতভাগ চলছে সরকারের নির্দেশে। লক্ষণীয় অতীতে কোনো সরকারের আমলে রাজনৈতিক দলের প্রধানকে নিয়ে এমন ফাজলামী করার চেষ্টাও করেনি। বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে যেভাবে টালবাহানা করছে অবৈধ সরকার। যেভাবে তার অধিকার খর্ব করা হচ্ছে, তাতে ভয় হয় সাধারণ মানুষের কোনো অধিকার আছে কিনা। এরি মাঝে খবর বের হয়েছে, বর্তমান সরকার এতটাই উদার যে, খুনের মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী জোশেফ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসি রুমে তার আন্ডারওয়ার্ল্ড চালাচ্ছেন। রঙ্গে ভরা বঙ্গ দেশ বটে!

বাংলাদেশের একজন এটর্নী জেনারেল আছে। তার নাম মাহবুবে আলম। তিনি সরকারের এটর্নী নন, বরং রাষ্ট্রের এটর্নী জেনারেল। অথচ উনি সারাক্ষণ দৌঁড়ান বেগম জিয়াকে জেল দিতে, জামিন বাতিল করতে। তিনি তো এই মামলার বাদী নন, এর জন্য স্বাধীন দুদকের আইনজীবি আছে। তবুও তিনি হাসিনার রাজনৈতিক চাকরের মত দৌঁড়ান কেনো? অতীতে বিএনপি বা অন্য সরকারের এটর্নী জেনারেলকে কি এমন নির্লজ্জ কাজ করতে দেখা গেছে?

বিচারপতি/বিচারকদের নিয়োগের ফাইলে প্রধানমন্ত্রী কোনো একটা পর্যায়ে সই করেন বটে, তাই বলে তিনি বিচারকের মালিক হয়ে যান না। কিন্তু শেখ হাসিনার রাজত্বে ভিন্নরূপ- তিনি বিচারকদের উপর ইচ্ছামত ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার প্রতিপক্ষ বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায় ভাবে কারাদণ্ড দিবেন, জেলে রাখবেন, অকারণে জামিন স্থগিত করবেন- এসব কি রাজনৈতিক শিষ্টাচারে পড়ে? বিএনপি কি এমন কাণ্ড কখনও করেছিল? হাসিনার নামেও তো মামলা ছিল। ১৯৯৬ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী শেখ হাসিনা নিজে ম্যাচ দিয়ে ৩২ নম্বরের সামনে বেবিটেক্সি জ্বালিয়েছেন। তার লোকেরা ঐদিন তারই সামনে শুক্রাবাদ পেট্রল পাম্প জ্বালিয়েছে। দু’টো বিআরটিসি দোতলা বাস, তিনটা ট্রাক, তিনটা পিকআপ, পাঁচটা প্রাইভেট কার ও চারটা বেবিটেক্সি জ্বালিয়ে দেয়। চট্টগ্রামের নতুন রেলস্টেশন জ্বালিয়েছিল লুটপাট করেছিল মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে আ’লীগ কর্মীরা। ১৯৯৪ সাল থেকে ৯৬ সাল অবধি হাসিনার ডাকা ১৯৩ দিন হরতালে শত শত মানুষ মারা গেছে তাদের বোমা-ককটেলে। এদের দায় কি হাসিনার নয়? বিএনপি সরকার কি তখন হাসিনাকে হুকুমের আসামী করে জেলে পাঠিয়েছিল? ২০০৪ সালে নানক-আজমরা গান পাউডার দিয়ে শেরাটনের সামনে ডবল ডেকার বাস জ্বালিয়ে ১১ বাসযাত্রী পুড়িয়ে মেরেছিল; কিংবা ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর পল্টনে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে ডজন খানেক মানুষ হত্যা করে লাশের উপর নৃত্য করেছিল- যার হুকুমদাতা ছিলেন শেখ হাসিনা নিজে (অনলাইনে ভিডিও আছে)। ২০০৫,৬,৭ সালে যে শ’খানেক হরতাল অবরোধ করেছে আওয়ামী লীগ, তাতে যত মানুষ মারা গেছে, যত বাস জ্বলেছে, তারপর কি শেখ হাসিনার নামে বিএনপি মামলা করেছিল? নাকি তাকে জেলে ঢুকিয়েছিল?

রাজনীতি রাজনীতির যায়গায় থাকা ভালো, অতীতে তাই ছিল। কিন্তু এবারে বিনাভোটে ক্ষমতা দখলে থাকতে গিয়ে শেখ হাসিনা রাজনৈতিক শিষ্টাচার ধংস করে আইনের শাসন উড়িয়ে দিয়ে যে কুশাসন চালু করলেন। ভবিষ্যতে যদি এসবের পুণরাবৃত্তি তার উপরেই ঘটে- তখন কি সেটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে? এদেশের একটা কালচার হলো- একটা কিছু শুরু হলে আর থামে না, উত্তরোত্তর ঘটতেই থাকে!