আদালতে অবৈধ প্রার্থীর বিকল্প বা পুনঃতফসিল চায় বিএনপি

আদালতে অবৈধ প্রার্থীর বিকল্প বা পুনঃতফসিল চায় বিএনপি

ঢাকা, ২০ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন বৈধ ঘোষণা করলেও হাইকোর্ট যেসব আসনে বিএনপির প্রার্থীদের অবৈধ ঘোষণা করেছে সেখানে বিকল্প প্রার্থী দেওয়ার অথবা পুনরায় তফসিল ঘোষণা করার জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে দাবি জানিয়েছে দলটি।

বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসির সঙ্গে বৈঠক করে এ দাবি জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান বলেন, আজকে আমরা একটা বিশেষ অনুরোধ নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের বেশকিছু প্রার্থী আদালত কর্তৃক অবৈধ ঘোষিত হয়েছেন। ইতোমধ্যে আমাদের আটজন প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন তাদের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করেছিল। তাদের মধ্য থেকে একজন করে আমরা প্রত্যেক আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছি। এখন এই প্রার্থী যদি অবৈধ ঘোষিত হয়, তাহলে এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে?

নজরুল ইসলাম খান আরো বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছেন বৈধ। আদালন বলছেন অবৈধ। তাহলে ভুল করলে নির্বাচন কমিশন করেছে। কিন্তু শাস্তিটা আমাদের পেতে হবে কেন? আমরা সে কথাই নির্বাচন কমিশনকে বলেছি যে আপনারা এখন দুটি কাজ করতে পারেন। একটি হলো ওই নির্বাচনী এলাকায় আমাদের আরো যে প্রার্থী বৈধ হয়েছে আপনাদের বিবেচনায়, তাদের মধ্যে থেকে যেকোনো একজনকে নির্বাচন করতে সুযোগ দিন। কিংবা কেউ মরে গেলে যেমন ওই আসনের নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করা হয়, তেমনি ওই আসনগুলোতে করা হোক। কারণ তাদের প্রার্থিতা বাতিল করে এক ধরনের প্রার্থী হিসেবে তাদের হত্যাই করা হয়েছে। প্রার্থী হিসেবে তারা আর জীবিত নাই। সেই কারণেও সেখানকার নির্বাচন স্থগিত করে পুনরায় তফসিল ঘোষণা করতে পারেন।

এ দুটি বিষয় নিয়ে আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য দুই নির্বাচন কমিশনার এবং সচিবের সঙ্গে আজকে কথা বলেছি। তারা আমাদের যুক্তিকে অগ্রাহ্য করেন নাই। তারা বলেছেন, একসঙ্গে বসে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা তাদের অনুরোধ জানিয়েছি, খুব দ্রুত যেন তারা এ সিদ্ধান্ত নেন।

নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচন মানেই হচ্ছে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সমানে সমানে। ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে বিএনপি, ধানের শীষ। সেই প্রার্থীদের এভাবে অবৈধ ঘোষণা করে সরকারি দল বা সরকারি দলের যে প্রতীক সেটাকে ওয়াকওভার দেওয়ার যে ব্যবস্থ চলছে। আমরা মনে করি এটা গ্রহণযোগ্য না। এর একটা প্রতিকার থাকা উচিত এবং প্রতিকার যা হতে পারে অলরেডি সে প্রস্তাব আমরা করেছি। আমরা আশা করছি যে প্রতিকার পাব।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে বিএনপির যেসব প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ হয়েছে, তাদের মধ্যে অন্তত আটটি আসনের আটজনের প্রার্থিতা বাতিল করেছেন আদালত। বিএনপির প্রার্থী শূন্য আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে- জামালপুর-৪, বগুড়া-৩, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪, রংপুর-১, ময়মনসিংহ-৮, ঝিনাইদহ-২, জয়পুরহাট-১ ও রাজশাহী-৬ আসন।

জাল ব্যালট পেপার প্রস্তুত করা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আইন অনুযায়ী, গুজব ছড়ালে শাস্তি হয়। এখন প্রধানমন্ত্রী গুজব ছড়ালে শাস্তি হয় কি না জানি না। কেননা, ব্যালট পেপার ছাপানোর মতো যে ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার তা সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। কাজেই বিএনপির ব্যালট পেপার ছাপানোর বিষয়টি গুজব।

বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে টাকা নিন, নৌকায় ভোট দিন প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নজরুল ইসলাম খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে টাকা নেওয়ার কথা বলেন, এটা আচরণবিধির লঙ্ঘন।

সর্বকালের সেরা নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করছে পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখনো নির্বাচন শেষ হয়নি। কাজেই ভবিষ্যতে যেটা হবে, তা নিয়ে তো এখনই বলা যায় না। মাহবুব উদ্দিন খোকনকে পুলিশ নিজেই গুলি করেছে, কাজেই সেরা পরিবেশ কীভাবে বলা যায়?

বিএনপির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী ও ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন। নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে প্রতিনিধিদলে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বিজন কান্তি সরকার উপস্থিত ছিলেন। এঁদের মধ্যে সেলিমা রহমান বিএনপির জাতীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান। বাকি দুজন সদস্য।

 

(জাস্ট নিউজ/একে/১৮২৭ঘ.)