শত প্রতিকূলতায়ও নির্বাচনে থাকবে ঐক্যফ্রন্ট

শত প্রতিকূলতায়ও নির্বাচনে থাকবে ঐক্যফ্রন্ট

ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : সরকার ধরেই নিয়েছিলো বিএনপি জোট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবে না। শুরু থেকেই তাদের মাঝে এরকম একটি ধারনা ছিলো যে, বিএনপি যে কোনো সময় ভোট বর্জন করতে পারে। ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন একযোগে বিএনপি জোটের সবাই প্রার্থিতা প্রত্যাহার করতে পারে এরকম একটি ধারণাও ছিলো সরকারি মহলে। বিএনপি জোটের এই ভোট বর্জনের কথা মাথায় রেখেই আওয়ামী লীগ সমঝোতার বাইরেও মহাজোটের শরিকদের নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিতে উৎসাহ দিয়েছে। মহাজোটের প্রধান শরিক এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টিকে (জাপা) ২৬টি আসন দেয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু জাপা এর বাইরে আরও ১৪৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে রেখেছে। একইভাবে ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, তরীকত ফেডারেশন, জেপি, গণতন্ত্রী পার্টি, ন্যাপ, বাসদ, সাম্যবাদী দল এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট সমঝোতার বাইরে নিজ নিজ প্রতীকে প্রায় দেড়শ’ প্রার্থী দিয়েছে।

বিএনপি জোট যেকোনো সময়ে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের পাল্টা আঘাত বা সহিংসতা ঘটাতে পারে এমন একটি হিসাবও সরকারি মহলের ছিলো। সেই প্রস্তুতিও তাদের রয়েছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সরকারকে তথ্য দিয়েছিলো।

কিন্তু সরকারের এই দুটো হিসাবই এখন ভুল প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। সূত্র বলছে, যে কোনো পরিস্থিতিই হোক বিএনপি সব প্রতিকূলতার মধ্যে ভোটের মাঠে থাকবে। কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন বর্জন করবে না। এমনকি ৩০০ আসনের সবগুলোও যদি আওয়ামী লীগ জোরজবরদস্তি করে নিয়ে যায় তারপরেও বিএনপি নির্বাচনে থাকছে। সম্প্রতি ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনও বলেছেন, মরে গেলেও নির্বাচন বর্জন করবো না। যদিও সারা দেশের সংসদীয় এলাকাগুলোতে সংঘাত-সহিংসতা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

গত দুই সপ্তাহে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, ২০-দলীয় জোট ও বিএনপির মিলিয়ে অন্তত ৫০ প্রার্থী সরাসরি হামলায় আহত হয়েছেন। বিএনপির দাবি-নির্বাচনী প্রচারের সময় এমপি প্রার্থীদের ওপর বা তাদের গাড়িবহরে দেড় শতাধিক হামলা হয়েছে। এরপরেও বুধবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘আমরা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব। এর আগে আপনারা দেখেছেন স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও কী পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছিল, আমরা ছিলাম। গণতন্ত্রের জন্য যতটুকু পারব আঁকড়ে ধরব। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।’

সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ বা দলীয় সরকারের অধীনে যে আসলে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন বাংলাদেশে সম্ভব নয় বিএনপি জোট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থেকে তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চায়। আন্তর্জাতিক শক্তির কাছেও এই প্রমাণ তুলে দিতে চায়।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনও যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো সেটিও এতে প্রমাণিত হবে। কারণ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্নমহল এতো দিন ধরে বলে আসছে, ২০১৪ সালের ওই ভোট বর্জন করা বিএনপির সঠিক সিদ্ধান্ত ছিলো না। তারা এসে দেখতে পারতো ভোট সুষ্ঠু হয় কি না। আর সে কারণেই এবার আওয়ামী লীগ যাতে এ ধরনের কোনো কথা বলার সুযোগ না পায় সেজন্য বিএনপি জোট শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকছে। এমনকি কোনো ধরনের সহিংসতা বা পাল্টা আঘাতও তারা করবে না।

আরো একটি হিসাব প্রায় বদ্ধমূল হয়ে আছে- ৫ জানুয়ারির মতো এবারও যেনতেনভাবে ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনটি তুলে নিতে পারলে আওয়ামী লীগ আরো ৫ বছর ক্ষমতায় থেকে যাবে। কিন্তু বিএনপি সূত্র বলছে, সেই হিসাবও শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকবে না। দ্বিতীয়বার জোর জবরদস্তি করে টিকে থাকা আওয়ামী লীগের পক্ষে সম্ভব হবে না। ভোটের আর মাত্র ৪ দিন বাকি থাকলেও ভোটের মাঠ এখনো একচেটিয়া আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। প্রচার-প্রচারণায়ও আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্রদের ধারে কাছে নেই বিরোধীরা। বিএনপি যাতে মাঠে নামতে না পারে, সে জন্য শক্তি প্রয়োগ ও প্রশাসনিক চাপ অব্যাহত রাখা হয়েছে। বিএনপির নেতা–কর্মী ও সমর্থকদের আরও পরিষ্কার বার্তা দেয়ার জন্য বেছে বেছে প্রার্থীদেরও লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের নেতারা প্রকাশ্যে ভোট কেটে নেয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন। এসব বক্তৃতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। বহুমুখী চাপে বিএনপিসহ বিরোধীরা কার্যত এখন কোণঠাসা। তারপরও আওয়ামী লীগে অস্বস্তি আছে। কিন্তু এতো কিছুর পরেও বিএনপি জোটের শীর্ষ নেতারা একটুও বিচলিত হচ্ছেন না।

সূত্র বলছে, মূলত আওয়ামী লীগ চায় এসবের কারণে বিএনপি ভোট বর্জন করুক। কিন্তু বিএনপি জোট শেষ পর্যন্ত ভোটে থাকার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। কোনোভাবেই তারা ভোট বর্জন করবেন না বলে ইতিমধ্যে জোরালো ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি জোটের এই শক্ত অবস্থানের কারণ কী? এর জবাবে বিএনপিজোটের সূত্রগুলো বলছে, মূলত এই টিকে থাকার মাধ্যমেই বিএনপির বিজয় আসবে। গতবারের মতো একতরফা নির্বাচন করে এবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি সাধারণত ঘটে না। যে কারণে শেষ পর্যন্ত বিএনপিরই জয় হবে। আন্তর্জাতিক মহল থেকে এমন নিশ্চয়তা তাদেরকে দেয়া হয়েছে বলে বিএনপি সূত্র বলছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনে হারলেও হারবে, জিতলেও হারবে, সরকার গঠন করতে পারবে না। গায়ের জোরে সরকার গঠন করলে এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহ, সর্বোচ্চ দুই মাস ক্ষমতায় থাকতে পারবে। এরপরই ক্ষমতা ছাড়তে হবে। সূত্র: শীর্ষ কাগজ

(জাস্ট নিউজ/একে/২১৫৯ঘ.)