ভোট নিয়ে ইসিতে ঐক্যফ্রন্টের ১৭ অভিযোগ

ভোট নিয়ে ইসিতে ঐক্যফ্রন্টের ১৭ অভিযোগ

সরকার নিয়ন্ত্রিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ও পরের ১৭টি চিত্র তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) স্মারকলিপি দিয়েছ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে ৭ সদস্যর একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার বিকালে ইসিতে স্মারকলিপি জমা দেয়।

পরে মির্জা আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘নির্বাচনের নামে জাতির সঙ্গে তামাশা করা হয়েছে। দেশকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।’ ঐক্যফ্রন্টের জয়ীরা শপথ নেবেন কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছি। শপথ নেয়ার প্রশ্ন আসবে কেন?’

স্মারকলিপিতে তারা অভিযোগ করেছে—
১. আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় নির্বাচনের আগের রাত ৯ ঘটিকার মধ্যে সকল দোকানপাট বন্ধ করে সারা দেশে ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি করা হয়।

২. নির্বাচনের আগের রাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সহায়তায় আওয়ামী লীগ কর্মী ও সন্ত্রাসী বাহিনী ৩০-৬০ শতাংশ ভোট কেটে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়।

৩. নির্বাচনের দিন সকালে ভোট কেন্দ্র এবং কেন্দ্রের আশপাশের মোড়ে সরকারি লাঠিয়াল বাহিনী মহড়া দেয় এবং ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেয়। এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সকল স্তরের সদস্যদের কাছে সহযোগিতা চাইলেও তারা কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। উপরন্তু অনেক ক্ষেত্রেই ভোটারদের ভোট না দিয়ে ফিরে যেতে বাধ্য করা হয়।

৪. নির্বাচনের আগের দিন সরকার বিরোধী সাধারণ ভোটারদেরকে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য হুমকি-ধামকি দেওয়া হয় এবং ভোটকেন্দ্রে পেলে গায়েবী মামলায় গ্রেপ্তারের ভয় দেখানো হয়।

৫. নির্বাচনের পূর্বের দিন এবং রাতে পোলিং এজেন্ট এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের নানারকম হুমকি-ধামকি ভয়ভীতি এবং হয়রানি ও গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদেরকে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়।

৬. নির্বাচনের দিন সকালে পোলিং এজেন্টদের সকালে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয় এবং ক্ষেত্রবিশেষ ভোটকেন্দ্রে আসলেও নিয়োগপত্র রেখে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়। অনেক পোলিং এজেন্টকে মারধর, হয়রানি ও গ্রেপ্তা করা হয়। ভোটকেন্দ্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট না থাকার বিষয়টি দুইজন নির্বাচন কমিশনার গণমাধ্যমে স্বীকার করেছেন।

৭. রাতে ভোট কাটার পর অবশিষ্ট ব্যালট পেপার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় আওয়ামী লাঠিয়াল বাহিনী কর্তৃক জাল ভোটের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন করা হয়। শত বাধা উপেক্ষা করে কিছু ভোটার ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করলেও তাদেরকে প্রকাশ্যে নৌকায় সিল দিতে বাধ্য করা হয়।

৮. প্রায় সকল ভোট কেন্দ্রেই দুপুরের মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়। ব্যালট পেপার না থাকায় ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে বাধা দেওয়াসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়।

৯. দুপুরের দিকে আসা ভোটারদের ব্যালট দিতে না পারার কারণে বেআইনিভাবে মধ্যহ্ন বিরতির নামে কালক্ষেপণ করা হয় এবং ভোটকেন্দ্রের মূল ফটক বন্ধ করে দেওয়া হয়।

১০. নজিরবিহীনভাবে জুডিশিয়াল ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্বাচনী দায়িত্বে নিস্ক্রিয় করে রাখা হয় এবং শত শত অনিয়ম সংগঠনের অভিযোগ পাওয়ার পরও নূন্যতম পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।

১১. অসংখ্য ভোটকেন্দ্রে ১০০% ভোট কাস্ট করা হয়-যা ছিল নজিরবিহীন এবং বাস্তবে একেবারেই অসম্ভব। ১০০% কাস্টিং ভোটকেন্দ্রের আংশিক সংযুক্ত করা হলো।

১২. বিদেশী পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম কর্মীদের দেখানোর জন্য ঢাকাসহ অন্যান্য সকল মেট্রোপলিটন এলাকায় তাদের আশপাশের এলাকা হতে লোকজন এনে জড়ো করে লাইনে দাঁড় করিয়ে রাখে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার নয়।

১৪. আওয়ামী লীগের পদধারী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদেরকে প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

১৫. ভোটের আগের রাতে কোনো কোনো প্রিজাইডিং অফিসার ভোট কাটতে অসম্মতি জানালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা তাদের শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং জোর করে ভোট কাটতে বাধ্য করে।

১৬. সারা দেশে প্রকাশ্যে শান্তিপূর্ণভাবে জাল ভোটের মহোৎসব চললেও দেশের কোথাও একজন জাল ভোট প্রদানকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি বা আইনের আওতায় আনা হয়নি।

১৭. নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট মাঠপর্যায়ের কোনো স্তরেই নির্বাচন কমিশনের যে কোন নিয়ন্ত্রণ ছিল না, একজন নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যে তা স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয়েছে।

বর্ণিত অবস্থায় দীর্ঘ ১০ বছর ভোটাধিকার বঞ্চিত জনগণকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে আবারো বঞ্চিত করার দায় নির্বাচন কমিশনকেই বহন করতে হবে। এজন্যে অনতিবিলম্বে নির্বাচন বাতিল করে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানায় ঐক্যফ্রন্ট।

একে/