৩০ নয়, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট হয়েছে, গণশুনানিতে প্রার্থীরা

৩০ নয়, ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট হয়েছে, গণশুনানিতে প্রার্থীরা

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত গণশুনানিতে জোটের প্রার্থীরা বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি। ২৯ ডিসেম্বর রাতেই পুলিশ-প্রশাসন সারাদেশে ব্যালটে সিল দিয়ে বাক্স ভর্তি করেছিল।

শুক্রবার সকাল ১০টায় সুপ্রিমকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এই গণশুনানি শুরু হয়। জুমার নামাজের আগ পর্যন্ত ১৯ প্রার্থী ৫-১০ মিনিট করে বক্তব্য দিয়েছেন। নামাজের আগে দুপুর ১টায় বিরতি দেওয়া হয়। আড়াইটার সময় পুনরায় গণশুনানি শুরু হয় এবং প্রার্থীরা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। প্রার্থীরা নির্বাচনের আগের ও পরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছেন শুনানিতে।

শুরুতে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের জন্য শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শুনানিতে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন।

দুই শীর্ষ নেতার বক্তব্যের পর লালমনিরহাট-৩ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, এই নির্বাচনে ভোটডাকাতির চিত্র আমার কাছে রয়েছে। ভোটের আগে ছাত্রলীগের এক ছেলে আমাকে ফোন করে বললো- ছাত্রলীগের ১৪ জনকে বাছাই করে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ভোটডাকাতির জন্য। নির্বাচনে সাতটি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়েছে। জানতে চাই, যে কেন্দ্রে ভোটার যায়নি, সে কেন্দ্রগুলোতে কিভাবে শতভাগ ভোট পড়ে?

হবিগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমরা নির্বাচনের পূর্বেই ধারণা করেছিলাম, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ হয়তো আমাদের থাকবে না। নির্বাচনের সময়কালে নিজের বাড়িতে মিটিং করেছি। মিটিং শেষে নেতারা যখন ঘর থেকে বের হয়, সাদা পোশাকধারী লোক তাদের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। মিথ্যা মামলার যে প্রক্রিয়া সরকার করেছে তা বুঝতে পারলাম। আমার এলাকার নেতারা নির্বাচনের এক মাস পূর্বেই পলাতক থাকতে বাধ্য হয়েছেন। নেতাদের না পেয়ে ১৬ বছরের ছেলেদের ধরে নিয়ে গেছে। নির্বাচনের রাতে প্রায় ২০টা ফোন এলো, ভোটতো অর্ধেক হয়ে গেছে।

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী এসএম আকরাম হোসেন বলেন, সরকার এই পরিকল্পনা অনেক আগেই নিয়েছিল। তারা এভাবেই নির্বাচন করবে এবং এভাবেই ক্ষমতায় থাকবে। ২৯ তারিখ রাতে সব জায়গায় যেটা হয়েছে, আমার এখানেও তাই হয়েছে।

পাবনা-৪ আসনের হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, আমার অনেক কেন্দ্রে এজেন্টদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। কেন্দ্র থেকে পিটিয়ে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর মোটরসাইকেলযোগে এসে আমার উপর পৈশাচিক হামলা করা হয়। বোমা ফাটিয়ে গুলি করতে করতে আমার সামনে আসে। তারপর পেছন থেকে একটা ছেলে আমাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- এই কী হয়েছে, তোমরা এমন করছো কেনো? আমাকে পাবনা জেলার এসপি ও ডিসি সাহেব বললেন, আপনার আসনে সিল মারা হবে। আমি বললাম কতো পারসেন্ট? তারা বললেন, ৩৫ পারসেন্ট। আমি বললাম সমস্যা নেই, তবু আমি জয়ী হবো। কিন্তু যখন রাতে সিল মারা শুরু হলো, আমি প্রিসাইডিং অফিসারকে জানালাম, তিনি দাবি করলেন- না হচ্ছে না। আমি শুধু বলতে চাই, নির্বাচন নিয়ে গণশুনানি করে কী হবে জানি না, আসুন আমরা এমন কোনো কর্মসূচি দেই, যেই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং রাজপথে জীবন দেবো, এর বাইরে কিছু হতে পারে না।

জেএসডি সভাপতি আসম আব্দুর রবের স্ত্রী তানিয়া রব বলেন, আমার হাজবেন্ড আ স ম রবের নির্বাচনী আসনে শতাধিক কর্মী গ্রেফতার হয়েছে, অথচ সমস্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীসহ নির্বাচনী কাজে যারা দায়িত্বে ছিলেন, সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো মিথ্যাচার করেছে। নির্বাচন চলাকালীন কোনো কারণ ছাড়াই মামলা হয়েছে, গ্রেফতার করে আতঙ্ক তৈরি করা হয়েছে। আজকে আমার প্রশ্ন, এটা কি রাষ্ট্র আছে? নাকি শুধু ভূখণ্ড? নাগরিকরা ভোট দিতে পারেনি, তারা অপমানিত হয়েছে। আমি আপনাদের কাছে এই প্রশ্ন রাখতে চাই- আমাদের করণীয় ঠিক করতে হবে।

বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর মেয়ে কুড়ি সিদ্দিকী বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় সবক’টা ভোট কেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেওয়া হয়, তাদের হুমকি দেওয়া হয়। কেন্দ্র বন্ধ করে ভোটের বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। আমি মনে করি এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া ঘটনায় আমাদের ক্ষতি হয়নি, হয়েছে সরকারের। কারণ তারা মানুষের সামনে চোর হিসেবে ধরা পড়ে গেছে। আমাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে হবে না, ভোট চুরি হয়েছে। কারণ যারা ভোটার তারাই সাক্ষী।

অন্য যারা বক্তব্য দিয়েছেন তারা হলেন- এসএম আকরাম হোসেন, প্রিন্সিপ্যাল ইকবাল সিদ্দিকী, রুমানা মাহমুদ, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মেজর জেনারেল (অব.) আমসা আমীন, আবুল হোসেন খান, মিজানুর রহমান মিনু, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, নুরুর রহমান জাহাঙ্গীর, ড. সাইফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, সাবিনা ইয়াসমিন ছবি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুর রহমান, মাহমুদুল হক রুবেল, ডা. শাহাদত হোসেন, শ্যামা ওবায়েদ, মনিরুল হক চৌধুরী, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ।

এমআই