মসজিদে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে ভোটার আনা যাচ্ছে না: সংসদে মেনন

মসজিদে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে ভোটার আনা যাচ্ছে না: সংসদে মেনন

রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জোটগত বিষয়ে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন অংশ যদি দেশের উপর নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, তাহলে রাজনৈতিক দল নির্বাচন কেবল নয়, রাষ্ট্র পরিচালনায়ও প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে ফেলবে। এটা সবার জন্য যেমন, আওয়ামী লীগের জন্যও প্রযোজ্য।

নির্বাচনকে যথাযথ মর্যাদায় ফিরিয়ে আনার কাজটি আমাদের করতে হবে। কারণ রোগ এখন উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। পাঁচ দফা উপজেলা নির্বাচনে আমাদের দলের অভিজ্ঞতা, এমনকি আওয়ামী লীগ নিজ দলের প্রার্থীদের অভিজ্ঞতা করুণ। নির্বাচন কমিশন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বলেও কোন লাভ হচ্ছে না। বরং তাদের যোগসাজশ রয়েছে। এর ফলে নির্বাচন ও সামগ্রিক নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পর্কে জনমনে অনাস্থা সৃষ্টি হয়েছে।

নির্বাচনে ভোট দেয়ার ব্যাপারে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। মসজিদে মসজিদে মাইকে আহবান করেও ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনা যাচ্ছে না। এটা নির্বাচনের জন্য কেবল নয়, গণতন্ত্রের জন্য বিপদজনক।

অর্থনৈতিক সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ব্যাংক খাতে লুটপাট, নৈরাজ্য ও বিশৃংখলা কারও অবিদিত নয়। ঋণখেলাপীর দায়ে ব্যাংকগুলো ন্যুব্জ। চলছে তারল্য সংকট। করের টাকা দিয়ে ব্যাংকের ঘাটতি মূলধন পূরণ করার জন্য বরাদ্দ এবারেও রাখা হয়েছে বাজেটে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীন ভূমিকা দূরে থাক, ব্যাংকগুলোকে কার্যকর নজরদারি করতেও অক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে।

জোটগত বিষয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, প্রধানমন্ত্রী চৌদ্দ দলের শরীকদের নিজ পায়ে দাঁড়াতে বলেছেন। কিন্তু যদি গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকে তাহলে কেউ সংগঠন নিয়ে, আন্দোলন নিয়ে, ভোট নিয়ে এগুতে পারে না। জোটে নির্বাচন করলেও আওয়ামী লীগ এই সরকারকে আওয়ামী লীগ সরকার বলছে। এর জন্য দুঃখবোধ নাই। কোন প্রত্যাশাও নাই, যে ইঙ্গিত মাঝে মাঝেই করা হয়।

বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, সম্পদ পুঞ্জিভূত হয়েছে কিছু হাতে। একটি সংখ্যা সৃষ্টি হয়েছে যারা ‘সুপার ধনী’, এমনকি চীনের ধনীর সংখ্যা তুলনায়। এদের মধ্যে ১০ শতাংশ ধনী মোট সম্পদের ৯০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে। এরা মূলত ‘রেন্ট সিকার’। ক্ষমতার চারপাশে বলয় গড়ে তুলে তারা বিভিন্ন ধরনের লুণ্ঠন, দখল-বেদখল, জোর-জবরদস্তির মারপ্যাচের মাধ্যমে। দেশের সব ব্যাংক, বীমা, আবাসন, এমনকি প্রবাসে লোক পাঠানো এসবই এদের হাতে।

রাশেদ খান মেনন বলেন, শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নই আমাদের অনেক দূর এগিয়ে নিতে পারত। হেফাজতে ইসলামসহ কিছু ধর্মবাদী দল এর বিরোধীতা করেছে মাত্র। জানি না এখানেও আপস হয়েছে কিনা।

তিনি বলেন, শবে বরাতের রোজা হারাম, শাড়ী পরে নামাজ হয় না, ওয়াজ মাহফিলে এরকম ফতোয়া হরহামেশা দিচ্ছে। পঞ্চগড়ে খতমে নবুয়তের সম্মেলনে আহমদিয়াদের তো বটেই, আহলে হাদিস, পীরতন্ত্রী, তবলিগের সাদপন্থীদের সকলকেই কাফের ঘোষণা করা হয়েছে। প্রতিদিন বিভিন্ন ওয়াজ মাহফিলে ও সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ইউটিউবে প্রতি মুহূর্তে ধর্মীয় বিভাজন সৃষ্টি ও সাম্প্রদায়িকতা প্রচার করছে।

এমআই